শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Daily Pokkhokal
বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » সামরিক ও বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ছে দ্বিগুণ
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » সামরিক ও বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ছে দ্বিগুণ
২৮৬ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০১৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সামরিক ও বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ছে দ্বিগুণ

---

পক্ষকাল প্রতিবেদক
সামরিক ও বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতন বর্তমানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। এর মধ্যে গ্রেড-১ বা সর্বোচ্চ গ্রেডের (ধাপ) মূল বেতন হবে ৭৫ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ধাপে ৮ হাজার ২৫০ টাকা।
বেতন কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনার সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূইঞার নেতৃত্বাধীন পর্যালোচনা কমিটি প্রায় পাঁচ মাস পর গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
বেসামরিক ও সামরিক উভয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পর্যালোচনা কমিটি। তারা বর্তমানের মতো ২০টি ধাপেই বেতন দিতে বলেছে। বেতন কমিশনের সঙ্গে একমত হয়ে পর্যালোচনা কমিটি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদন বিষয়ে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সময় জানান, ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর করা হবে। তবে প্রতিবেদনের বিস্তারিত তিনি বলেননি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেতন ও চাকরি কমিশন ১৬টি ধাপে বেতন দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। কমিশনের সুপারিশ ছিল সর্বোচ্চ ধাপে ৮০ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ধাপে ৮ হাজার ২০০ টাকা।
তবে বাজেট নিয়ে ব্যস্ততার কারণে আগামী ৪ জুনের আগে বেতন কমিশনের সুপারিশ নিয়ে কিছু করা সম্ভব হবে না বলে জানান অর্থমন্ত্রী।  জুনের মধ্যেই সেটি মন্ত্রিসভায় পাস করানোর চেষ্টা করা হবে।
নিয়মটি হচ্ছে, অর্থমন্ত্রীর দেখার পর প্রতিবেদন নিয়ে আবারও আলোচনা হবে আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে। তারপর প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দুই মাসও লাগতে পারে এটি মন্ত্রিসভায় যেতে। তবে তা কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, অন্যবারের মতো এবারও দুই ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে নতুন বেতনকাঠামো। কোন ধাপে কত টাকা বেতন বাড়ছে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি অর্থমন্ত্রী।
পর্যালোচনা কমিটি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, পর্যালোচনা কমিটি বিশেষ ধাপ হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবদের মূল বেতন ৯০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে। তিন বাহিনীর প্রধানেরাও ৯০ হাজার টাকা মূল বেতন পাবেন। ফরাসউদ্দিন কমিশন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবদের মূল বেতন এক লাখ টাকার সুপারিশ করেছিল। বর্তমানে তাঁদের মূল বেতন ৪৫ হাজার টাকা।
পর্যালোচনা কমিটি সিনিয়র সচিবদের মূল বেতন ৮৪ হাজার টাকার সুপারিশ করেছে। বর্তমানে সিনিয়র সচিবেরা নির্ধারিত ৪২ হাজার টাকা মূল বেতন পান। বেতন কমিশন সুপারিশ করেছিল ৯০ হাজার টাকা।
পদায়িত সচিবদের (কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা) মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে কমিটি। তবে পদায়িত নন এমন সচিবের মূল বেতন (গ্রেড-১) হিসেবে ৭৫ হাজার টাকা পাবেন। গ্রেড-১ এর অন্যান্য কর্মকর্তাও মূল বেতন ৭৫ হাজার টাকা পাবেন। গ্রেড-১ কে সরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ ধাপ হিসেবে দেখা হয়। এখন এই কর্মকর্তারা পান ৪০ হাজার টাকা।
বর্তমানে প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তার চাকরির শুরুতে মূল বেতন ১১ হাজার টাকা (নবম ধাপ)। পর্যালোচনা কমিটি তা দ্বিগুণ করে ২২ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে। বেতন কমিশন তাঁদের জন্য ২৫ হাজার টাকা সুপারিশ করেছিল।
পঞ্চম ধাপে ২২ হাজার ২৫০ টাকার পরিবর্তে ৪৫ হাজার টাকা করার সুপারিশ এসেছে। বর্তমানে একজন কর্মচারীর সর্বনিম্ন মূল বেতন ৪ হাজার ১০০ টাকা। বেতন কমিশন সর্বনিম্ন ধাপের মূল বেতন ৮ হাজার ২০০ টাকা করার সুপারিশ করেছিল। পর্যালোচনা কমিটি সেটি ৫০ টাকা বাড়িয়েছে।
পঞ্চম ধাপে বর্তমানে ২২ হাজার ২৫০ টাকার পরিবর্তে ৪৩ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে পর্যালোচনা কমিটি। বেতন কমিশন এই ধাপে সুপারিশ করেছিল ৪৫ হাজার টাকা। এ রকমভাবে প্রায় প্রতিটি ধাপের মূল বেতন প্রায় দ্বিগুণ করার সুপারিশ করেছে পর্যালোচনা কমিটি। মূল বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকের বাড়িভাড়াসহ আনুষঙ্গিক আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধাও বাড়বে।
মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বর্তমানে মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা, যা ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। নতুন বেতনকাঠামো বাস্তবায়নের দিন থেকে এই মহার্ঘ ভাতা বিলুপ্ত হবে।
২০১৩ সালে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে জাতীয় চাকরি ও বেতন কমিশন গঠন করা হয়েছিল, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর কমিশন প্রতিবেদনসংবলিত সুপারিশ জমা দেয়। ৩১ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়।
টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড ও প্রেষণ ভাতা বাদ: প্রেষণ ভাতা বাদ দেওয়ারও সুপারিশ করেছে পর্যালোচনা কমিটি। বর্তমানে কোনো কর্মকর্তা তাঁর মূল মন্ত্রণালয় থেকে অন্য কোনো সংস্থায় প্রেষণে গেলে মূল বেতনের ৩০ শতাংশ প্রেষণ ভাতা পেয়ে থাকেন। তবে দুর্গম এলাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘দুর্গম’ ভাতা চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ ভাতাও থাকবে।
বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির সময় হলেও ঠিক সময়ে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হয় না। এ জন্য পদোন্নতির নির্ধারিত সময় হলে আর্থিক সুবিধা হিসেবে সিলেকশন গ্রেড দেওয়া হয়। আবার চাকরির একটি নির্ধারিত সময় অনুযায়ী টাইম স্কেল দেওয়া হয়। কিন্তু বেতন কমিশনের মতো পর্যালোচনা কমিটিও এই সুবিধা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
বিষয়টি জানাজানি হলে গতকালই সচিবালয়ে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ২৪তম বিসিএসে কর্মরত একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই মাসের শুরুতেই তাঁদের চাকরি ১০ বছর পূর্ণ হবে। তাতে তাঁর উপসচিব হওয়ার সময় হবে। কিন্তু শিগগিরই পদোন্নতির সম্ভাবনা নেই। তাই বর্তমান নিয়মে তিনি সিলেকশন গ্রেড পেতেন। এতে পদোন্নতি না পেলেও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যেত। কিন্তু এখন সেটি বাদ দেওয়া হলে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
এ ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন কিছু নিম্ন পদের কর্মচারী, যাঁদের পদোন্নতি কম হয়। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টসহ অনেক ব্লক পদ রয়েছে, যেগুলোতে পদোন্নতির সুযোগ নেই। কর্মচারী সমিতির নেতারা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের সুপারিশকে অন্যায় বলে মনে করেন। এর আগে তাঁরা সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন।
কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রতিবেদন তৈরির সময় তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। ফলে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ খুব পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
অর্থমন্ত্রী বললেন, বাজারে প্রভাব পড়বে না: ফরাসউদ্দিন কমিশন বিদ্যমান ২০টির পরিবর্তে ১৬টি ধাপের সুপারিশ করলেও সচিব কমিটি যে ২০টিই বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে, সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০টি ধাপই থাকল। আমার মনে হয়, এটাকে আর টাচ করা উচিত হবে না।’
নতুন বেতনকাঠামোতে সরকারি চাকরিজীবীরা সবাই খুশি কিন্তু নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বা বাজারের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘খুশি করার জন্য এটা দেওয়া হচ্ছে না। আর বাজারের ওপরও এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’
আগেরবার ৬২ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছিল, এবার কতটা বাড়ছে-সাংবাদিকদের উদ্দেশে পাল্টা এমন প্রশ্ন করে মুহিত আরও বলেন, ‘আপনাদের বেতন কি বাড়েনি? সময়ের সঙ্গে বেতন বাড়াটা খুব স্বাভাবিক। এ বিষয়ে বেতন কমিশন শতকরা হিসাবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বেতন বৃদ্ধির একটা সুপারিশ করেছে। এটা পর্যালোচনা করে দেখব।’
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে মুহিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘আমি এর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দ্বিমত পোষণ করি। এসব আপনাদের কথা। আপনারাই আপনাদের মতো করে লেখেন।’
প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবও। তিনি বলেন, সচিব কমিটির সুপারিশ কমিশনের সুপারিশ থেকে কম হবে, এটাই স্বাভাবিক। অতীতেও তাই হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রায় সাড়ে চার মাস আগে। এত দিনেও বাজারে যেহেতু কোনো প্রভাব পড়েনি, আগামী দিনেও প্রভাব পড়ার কোনো কারণ নেই।’



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)