মানবতাবিরোধী অপরাধে আরো ৩০ আসামি বিচারের আওতায়
পক্ষকাল ডেস্ক১৬ মে, ২০১৫ মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরো ৬ মামলায় ৩০ আসামি বিচারের আওতায় রয়েছেন।
এর মধ্যে ২ মামলার ৪ আসামির বিচার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়াও ২ মামলায় ৩ আসামির বিষয়ে রায় ঘোষণা অপেক্ষায় রয়েছে। এ পর্যন্ত পথক দুটি ট্রাইব্যুনালে ১৭ মামলায় ১৮ আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
বিচার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে দু’টি মামলার। একটি মামলায় রয়েছেন তিনজন আসামি। আসামিরা হলেন- বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ ও খান আকরাম হোসেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা যুক্তিতর্ক পর্যায়ে রয়েছে। অপর একটি মামলায় আসামি পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিকের বিষয়েও যুক্তিতর্ক চলছে।
এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অভিযুক্ত রাজাকার পলাতক সৈয়দ মো. হাসান আলী ওরফে হাছেন আলী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই অভিযুক্ত রাজাকার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণা অপেক্ষমান রাখা হয়েছে।
একটি মামলায় হবিগঞ্জ জেলার খাগাউড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও তার ছোটভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
রবিবার এ দুই ব্যক্তির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।
অপর একটি মামলায় জামালপুরের এডভোকেট শামসুল আলম, জামালপুর জেলা জামায়াত নেতা এম ইউসুফ আলীসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেশ করেছে প্রসিকিউশন।
এই আট আসামি হলেন- আশরাফ হোসেন (৬৪), অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন (৭১), মো. আবদুল মান্নান (৬৬), মো. আবদুল বারী (৬২), মো. হারুন (৫৮), মো. আবুল হাশেম (৬৫), এডভোকেট শামসুল হক (৭৫) ও এস এম ইউসুফ আলী (৮৩)। তাদের মধ্যে আসামি এডভোকেট শামসুল আলম ও এস এম ইউসুফ আলী কারাগারে থাকলেও বাকি ৬ জন পলাতক রয়েছেন। এর মধ্যে ছয় রাজাকারকে গ্রেফতার করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একটি মামলায় কিশোরগঞ্জের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। পাঁচ আসামি হচ্ছেন- জেলার করিমগঞ্জের দুই সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও কিশোরগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী মো. শামসুদ্দিন আহমেদ এবং কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অপর একটি মামলায় আটক যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে জড়িত আরো ১০ জন অভিযুক্ত রাজাকারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা করা হয়েছে। সাখাওয়াত হোসেনের মামলা তদন্তকালে অন্য আসামিদের বিষয়ে অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- যশোরের মো. ইব্রাহিম হোসেন, মো. বিল্লাল হোসেন, মজিবুর রহমান, আব্দুল আজিম সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, লুৎফর মোড়ল,আব্দুল খালেক মোড়ল, আকরাম হোসেন, ওজিয়ার মোড়ল ও মশিয়ার রহমান। এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলায় সাখাওয়াতসহ ৪ আসামি আটক রয়েছেন।
এর আগে পৃথক দুটি ট্রাইব্যুনালে ১৭ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। বিচারিক কার্যক্রম শেষে ট্রাইব্যুনাল-১এ ৮টি ও ট্রাইব্যুনাল-২ এ ৯টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক বাসস’কে জানান, আরো ২১ মামলায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
এদিকে গত ১৩ মে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের বিচারিক প্যানেল স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেয়। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলাগুলোতে দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক ও বিচারাধীন পলাতক আসামিদের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে। স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপিকে এ নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে এসবি, ডিবি, র্যাব ও ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার একজন করে প্রতিনিধিকে এ সেলের কমিটিতে সদস্য রাখাতে হবে। ডিআইজি পদমর্যাদার নিচে নন এমন কাউকে এর প্রধান করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে এ সেল গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমিটি গঠনের পর থেকে প্রতি ৪০ দিন পর পর পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।