শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Daily Pokkhokal
বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | জেলার খবর » কাতারে পতিতালয় থেকে পালিয়ে আসা মঠবাড়িয়ার নির্যাতিতা রুবী‘র কথা
প্রথম পাতা » অপরাধ | জেলার খবর » কাতারে পতিতালয় থেকে পালিয়ে আসা মঠবাড়িয়ার নির্যাতিতা রুবী‘র কথা
৪২৫ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০১৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

কাতারে পতিতালয় থেকে পালিয়ে আসা মঠবাড়িয়ার নির্যাতিতা রুবী‘র কথা

---
জুলফিকার আমীন সোহেল ,মঠবাড়িয়াঃ
পিতা মাতার একমাত্র মেয়ে রুবী (২২) পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্যপ্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে পরে যায নারী পাচারকারীদের  খব্বরে। চলে যান বিদেশে (কাতার)। সেখানে তাকে একটি পতিতালয়ে বিক্রির চেষ্টা করলে কৌশলে পালিয়ে বাংলাদেশী এম্বাসী (দূতাবাস) ও সিআইডি পুলিশের সহযোগিতায় ফিরে আসেন মায়ের কোলে।
এ ঘটনায় রৎরুবী আক্তার বাদী হয়ে ৮ জন নারী পাচারকারীর নাম উল্লেখ করে মঠবাড়িয়া থানায একটি মামলা দায়ের করেন। রুবী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার আমরবুনিয়া গ্রামের আঃ বারেক কাজীর একমাত্র মেয়ে।  আসামীরা হলো একই এলাকার মৃতঃ তুজাম্বর আলীর ছেলে হাকিম খান (৪২), মোঃ আলী হোসেন সহ তার দুই ছেলে শাহাদাৎ হোসেন (২৫),মোঃ হোচেন (৩২), স্ত্রী ফাতিমা (৫০),হালিম খানের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৪০), লতীফ সরকারের ছেলে মনির হোসেন (২৬) ও সোহরাফ জমাদ্দারের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪০)। হোচেন ও মমতাজ বেগম বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এস আই শাহানাজ হালিম খানকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন।
রুবী আক্তার সাংবাদিকদের কাছে সেই হৃদয় বিদারক  ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি জানান,কয়েক বছর আগে তার স্বামীকে টাকা-পয়সা ধার দেনা করে বিদেশে পাঠান। কিন্তু তার স্বামী ভালো অর্থ উপার্জন করে তাকে ভুলে যান। এদিকে পাওনাদারদের টাকার চাপ। সবকিছু মিলিয়ে পুরো অতিষ্ঠ হয়ে যায় তার পরিবার। সেই সুযোগটি কাজে লাগায় নারী পাচারকারী চক্র। তাকে ও তার পরিবারকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় হাসপাতালে আয়ার কাজ, বেতন মাসে ৩০ হাজার টাকা। এক পর্যায় সকলেই রাজি হন পাচারকারীদের কথায়।  পুরো টাকাটাই ৫/৬ মাস আগে পরিশোধ করে দেন। এরপর অপেক্ষার পালা কখন ফ্লাইট হবে।
অনেক অপেক্ষার পর গত ২০ ফেব্রুয়ারী তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানেও তাকে আজ-কাল বলে ২০ দিন রাখা হয়। তারপর ১০ মার্চ বিমানে উঠেন রুবী। কাতারে পৌছলে তাকে মমতাজ ও হোচেন বিমান বন্দর থেকে এসে নিয়ে যান। তাদের কাছে একদিন থাকার পর তাকে সুদানী এক মহিলার কাছে হস্তান্তর করেন এবং জানান এই তোমার মালিক। এখন থেকে তোমার সকল দায়িত্ব তার । তাকে তুমি সুবিধা অসুবিধার কথা বলবা। হাসি মুখে রুবী সুদানী মহিলার সাথে চলে যান।       ওই মহিলা তাকে তার বাসায় নিয়ে ভালো-ভালো খাবার পোষাক কিনে দেন।৩/৪ দিন পরে রুবী তার মা-বাবাকে ফোনে জানান সে খুব ভালো আছেন। সংবাদ শুনে বাড়ীর লোকজন খুশিতে দিশেহারা। ১০ দিনের মাথায় রুবী তার মালিকের কাছে জানতে চান আমাকে কাজ দেন না কেন ? পরের দিন তাকে একটি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শুধু প্রতিটি রুমে একটি করে বেড। (রুবীর ভাষায় পতিতালয়) কোথাও কোন ডাক্তার নেই। তাকে দিয়ে ওই বেডগুলোর চাঁদর, বালিশ গোছানো সহ প্রতিটি রুমে ঝাড়– মোছা দেওয়ানো হয়। বাসায় আসার পরে ওই সুদানী মহিলা তার কাছে জানতে চায় তোরে কি কাজ দেওয়ার কথা বলে নিয়ে আসছে। রুবী  জানান হাসপাতালের আয়া। তারা কতো টাকা নিয়াছে ? রুবী ভাষায় বুঝাতে না পেরে কাগজে লিখে দেন ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। তোকে তো  টাকা দেওয়ার কথা ছিলো না। ওদেরকে আমি ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। তোকে আমি কিনে এনেছি। আগামীকাল তোকে আমার লোকেরা নিতে আসবে। এই বলে ওই মহিলা বাসা থেকে বেড়িয়ে যান। আমি আগে থেকেই ওই ভাষা কিছুটা শিখে ছিলাম। আমি তাদের কথা বুঝতে পারি কিন্তু বলতে পারি না।
আমি তখন বুঝলাম আমাকে মনে হয় পতিতাবৃত্তি করতে হবে। আমি বাড়িতে জানালাম। মা বাবা    খুব কাঁদতে ছিল। সেই সাথে এলাকার অনেকেই জেনে গেছে আমার পরিস্থিতি। কাতারে অবস্থান রত মমতাজ ও হোচেনকে আমার সকল আকুতি দিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে বাচাঁন। আমার টাকার দরকার নেই। আর তোমাদের কাছে কখনো দাবীও করবো না। আমার সকল অনুরোধ ও চোখের পানি বৃথা গেল। রাত গেল সকালে ৫ জন বড় পাঞ্জাবী পড়া লোক সহ ওই মহিলা একটি কালো  গ্লাসের মাইক্রো গাড়ী নিয়ে হাজির। তারা ওয়েটিং রুমে বসে ড্রিক্স করছিলো। আমি আমার গ্লাস লাগানো রুমের ভিতরে বসে সব দেখতে পাই। তারা আমাকে দেখতে পায় না। আমি গেট লক করে দিয়ে ছিলাম। মহিলা বাহির থেকে আমাকে ডাকে। আমি কোন সাড়া দেইনি। আমি জানতাম সে দেশে দরজা ভেংগে কাউকে ধরে নেওয়ার আইন নাই। দু ঘন্টা পরে সকলে চলে যায়।আবার আধা ঘন্টা পরে মহিলা ফেরৎ আসে এবং দরজা খুলতে বললে আমি দরজা খুলে দেই। দরজা খুলার সাথে সাথে খুব জোড়ে আমার নাকে ঘুশি মারে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। এর পর মনেহয় আমাকে পা দিয়ে এলোপাথারী আঘাত করছে। কারন এক দিন পর আমি জ্ঞান ফিরে  পাইলে দেখি আমার সমস্ত শরীর ফুলেগেছে ও রক্ত ঝড়ছে। (রক্তমাখা কাপড় গুলো পুলিশ ও সাংবাদিকদের প্রত্যক্ষ করান) আমাকে ৪ দিন আটকে রেখে কিছু খাইতে দেয়নি আমি বেসিং এর ট্যাবের পানি খেযেছি। ৪ দিনের মাথায় ওই মহিলা রুবীর কাছে জানতে চায় তুই দেশে যাবি ? রুবী জবাবে জানান আমি মিসকিন দেশে যাবো না আমার টাকার দরকার। কথাটা মনে হয় ওই মহিলা বিশ্বাস করে ছিলো। যে কারনে ওই দিন সকল ঘরের সকল দরজা খোলা রাখছিল। সে বাসা থেকে বেড়িয়ে পরলে আমি ও বাসাথেকে মূল রাস্তায় বেড়িয়ে আসি।এক ট্রাফিক পুলিশ  আমাকে দেখে গাড়ি সিগনাল দিয়ে তার কাছে আসতে বলে এবং আমি কাছে গিয়ে তাকে সব ঘটনা খুলে বলি । সে আমাকে  বাংলাদেশী এম্বাসীতে (দূতাবাস) যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। আমি তার কথা ভালো বুঝতে পারছিলাম না। পরে একটু সামনে হেটেই দেখি বড় একটি মার্কেট। আমি মার্কেটে ডুকে পরি এবং দেখি বাঙ্গালীর অভাব নেই।  কিন্তু কোন একটি লোক জানতে চাইলো না আমার কি হয়েছে। তখনো আমার শরীর ,নাক থেকে রক্ত ও পানি ঝড়ছিলো। আমি শুধু কাঁদতে থাকি হঠাৎ এক বয়স্ক লোক আমাকে মা সম্মন্ধন করে বলেন তোমার কি হয়েছে ? বাড়ী কোথায় ? আমি তাকে বিস্তারিত খুলে বললাম। সে আমাকে ট্রাফিক পুলিশের মতো বাংলাদেশী এম্বাসীতে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। আমি তার কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে এম্বাসীতে ফোন করলে তারা আমাকে ট্যাক্সি যোগে অফিসে যেতে বলেন। ট্যাক্সি চালকের সাথে তারাই কথা বলছিলো । আমি ট্যাক্সিতে করে অফিসে পৌছে যাই।
এম্বাসীতে পৌছানোর পর সেখানে দেখি অনেক করুণ কাহিনী  আমার  মতো অসহায় কতো নারী পুরুষ। কারো হাত-পা কাটা, আগুনের ছ্যাকা দেওয়া সহ নানা রকম সমস্যায় কান্নাকাটি করছেন। আমি তাদের থেকে একটু ব্যাতিক্রম ছিলাম। ওখানের এক কর্মকর্তা আমার কাছে সবকিছু শনে আমাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলো। আমার ডকুমেন্ট স্বরূপ ম্যান পাওয়ারের ফটোকপি ছাড়া কিছুই ছিলোনা। আমি ওই কাগজ তাদেও কাছে দেই। পরে তারা আমাকে সিআইডি অফিসে পাঠান। সেখানে তারা আমার সব কথা শুনে আমাকে চিকিৎসা দেয় এবং আমার পাশপোর্ট উদ্ধার কওে আনেন। ৪ দিন পরে আমি সুস্থ্য হলে  বিমানের টিকেট কিনে ২ জন সিআইডি পুলিশ আমাকে বিমানে তুলে দিয়ে যান। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি বাড়ী পৌছে যাই।
বিদেশে আমার সমস্যার কথাশুনে আমার মা আগেই থানায় একটা জিডি করে রাখছিলেন। সে আলোকে আমি থানায় দেখা করতে গেলে সহকারি পুলিশ সুপার (মঠবাড়িয়া সার্কেল) মোঃ মোস্তফা কামাল আমার  সব কথা শুনে মামলা নেন। পুলিশ এক জন আসামীকে গ্রেফতার করেন।
রুবী অভিযোগ করে বলেন সহকারি পুলিশ সুপার স্যারের কথায় অনেক ভরসা পেয়েছিলাম কিন্তু এখন অজ্ঞাত কারনে আসামীদের গ্রেফতার করছেন না। মামলা তুলে নিতে কথিত রাজনৈতিক নেতারা সহ আসামীদের হুমকি অব্যাহত আছে। আমি আপনাদেও মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নারী পাচারকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দক্রা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এক জন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশি জোর তৎপরতা চলছে।



এ পাতার আরও খবর

রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত
মস্কোর কনসার্ট হলে হামলায় আদালতে  তিনজন সন্দেহভাজন দোষী সাব্যস্ত মস্কোর কনসার্ট হলে হামলায় আদালতে তিনজন সন্দেহভাজন দোষী সাব্যস্ত
চীনের  গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোমবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে ব্রিটেন চীনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোমবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে ব্রিটেন
রমজানে হামলা সহিংসতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে রমজানে হামলা সহিংসতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে
ধর্ষণের অভিযোগের মুখে ট্রাম্পের সমর্থনের পক্ষে ন্যান্সি মেস, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার ধর্ষণের অভিযোগের মুখে ট্রাম্পের সমর্থনের পক্ষে ন্যান্সি মেস, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার
সংসদে বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের দাবি তুললেন নিখিল সংসদে বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের দাবি তুললেন নিখিল
চোরাই অটো রিক্সাও ব্যাটারিসহ ২ জনকে আটক করেছেন বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা পুলিশ। চোরাই অটো রিক্সাও ব্যাটারিসহ ২ জনকে আটক করেছেন বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা পুলিশ।
নেত্রকোণায় আওয়ামী লীগের নেতাকে কুপিয়ে হত্যা নেত্রকোণায় আওয়ামী লীগের নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
সীমান্তের ওপার থেকে আসা গোলার আঘাতে দুই জন নিহত সীমান্তের ওপার থেকে আসা গোলার আঘাতে দুই জন নিহত
বর্ডারগার্ড (বিজিবি) সদস্যদেরকে ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ডারগার্ড (বিজিবি) সদস্যদেরকে ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)