বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » » বাংলাদেশমানব পাচারকারীদের সঙ্গে পুলিশের সখ্য!
বাংলাদেশমানব পাচারকারীদের সঙ্গে পুলিশের সখ্য!
পক্ষকাল ডেস্ক ঃকঃবাংলাদেশে মানব পাচারকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ বরং তারা মানব পাচারকারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেই কাজ করে আসছে৷
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এই পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে৷ পরিস্থিতির কারণে অনেকে আত্মগোপন করেছে৷
পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনে মানব পাচারের সঙ্গে ২৯৭ জন পাচারকারী জড়িত বলে এর আগে শনাক্ত করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১১ জন আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত এবং ২৬ জন দেশীয় হুন্ডি ব্যবসায়ী ও ইয়াবা পাচারকারী৷ আর ২৬০ জন দেশের আনাচে-কানাচে থাকা পাচারকারী চক্রের সংঘবদ্ধ সদস্য৷
এছাড়া কক্সবাজার জেলা পুলিশ, বিজিবি, র্যাবও একটি তালিকা তৈরি করেছে৷ এতে রয়েছে কক্সবাজারের সাড়ে তিনশ’রও বেশি পাচারকারীর নাম৷ দুটি তালিকাতেই নাম রয়েছে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে অনেক রাঘব বোয়ালের৷ কক্সবাজারের এক নারীও মানব পাচারকারী চক্রের হোতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত৷ এই পাচারকারীদের কেউ কেউ কোটিপতি৷
গত কয়েকদিনে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কক্সবাজারের ছয় শীর্ষ মানব পাচারকারী নিহত হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে এ চক্রের হোতারা৷ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনার পর তালিকাভুক্ত শীর্ষ পাচারকারীরা এলাকা থেকে গা ঢাকা দিলেও থেমে নেই তাদের অপকর্ম৷
ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের জীবন
নাম, পরিচয় লেখানো
ইন্দোনেশিয়ার জুলক গ্রামে পৌঁছানোর পরই তাঁদের লাইনে দাঁড়াতে হলো৷ নাম, ঠিকানা সব লিখিয়ে তবেই নিস্তার৷
থাইল্যান্ডে গণকবর এবং সাগরে শতশত মানুষ ভেসে থাকার খবরের পরও সর্বশেষ গত ১৭ই মে রাতে কক্সবাজারের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিনের ছেড়াদ্বীপ থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ফেরা ১৩ জনকে আটক করেছে কোস্টগার্ড ও বিজিবি৷ উদ্ধারকৃতরা জানান, কয়েকদিন আগে মহেশখালী থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের ফিশিং বোটে করে সাগরে নিয়ে যায়৷ তারা জানায়, পাচারকারীরা এখনো মুক্তিপণের দাবিতে ৩০০ লোককে আটক রেখেছে৷ সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র এখনো তাদের নেটওয়ার্ক গুটায়নি৷
কক্সবাজারের সাংবাদিক আজিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, কক্সবাজারের সোনারপাড়া এলাকার মানব পাচারকারী জাফর মাঝি নিহত হওয়ার পর স্থানীয় পুলিশের সংকেত পেয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের শীর্ষস্থানীয় সদস্যরা আত্মগোপনে চলে গেছে৷ উপকূলের জুম্মাপাড়া, সোনারপাড়া, সোনাইছড়ি, চোয়াংখালী, ছেপটখালীসহ ইনানির শীর্ষ পাচারকারীদের সঙ্গে স্থানীয় ইনানি পুলিশ ফাঁড়ি ও উখিয়া থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যের সুসম্পর্ক ছিল৷ এলাকায় ব্যাপক প্রচার আছে- মানব পাচারকারীরা মালয়েশিয়া পাঠানো প্রত্যেকের জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে দুই হাজার টাকা করে দিত৷
তিনি জানান, কক্সবাজরের আলোচিত মানব পাচারকারী ‘রেবি ম্যাডাম’ নামে পরিচিত রেবেকা সুলতানাও গা ঢাকা দিয়েছেন৷ তিনি গত জানুয়ারি মাসে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চেকসহ কক্সবাজার আদালতপাড়ায় পুলিশের হাতে আটক হলেও জামিনে ছাড়া পান৷ তাঁর স্বামী নুরুল কবিরও পুলিশের খাতায় একজন শীর্ষ মানব পাচারকারী৷ তিনিও পুলিশের হাতে এখনো ধরা পড়েননি৷
মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে বিপর্যস্ত তাঁদের জীবন
উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা অভিযান শুরুর আগেই পাচারকারীরা গা ঢাকা দেয়৷ তাই তাদের আটক করা যাচ্ছেনা৷ উপকূলীয় এলাকা দিয়ে যাতে মানব পাচারের মতো ঘটনা আর না ঘটতে পারে সেজন্য কমিউনিটি পুলিশদের কাজে লাগানো হয়েছে৷ তারা পাচারকারীদের তথ্য থানা পুলিশের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছে৷”
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘পুলিশ এখন সতর্ক অবস্থায় আছে৷ এলাকার মানুষকে সংগঠিত করে মানব পাচার বিরোধী নাগরিক কমিটি করা হচ্ছে৷ সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে৷” তিনি পুলিশের সঙ্গে পাচারকারীদের সখ্যতার অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন৷
তিনি আরো জানান, ‘‘শুধু পুলিশ নয়, নৌপুলিশ, র্যাব এবং কোস্টগার্ড মানব পাচার বিরোধী অভিযান জোরদার করেছে৷”
জেলেদের পরিচয়পত্র
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ‘‘মানব পাচার রোধে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া সমস্ত জলযানকে নিবন্ধন ও জেলেদের পরিচয়পত্র দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে৷”
তিনি বলেন, ‘‘উপকূলীয় এলাকাগুলোর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এই কাজে লাগানো হবে৷ কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এখন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে৷”