শুক্রবার, ২৯ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | জেলার খবর » দেশের একমাত্র পাইনগাছ বাগানধংস করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ
দেশের একমাত্র পাইনগাছ বাগানধংস করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ
জামালুদ্দিন হাওলাদার, চট্টগ্রাম থেকে:
দেশের একমাত্র পাইন বাগান ধংস করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। প্রায় ৫০বছরের পুরোনো এই পাইনবাগানের গাছ ও পাহাড় কেটে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে অর্ধশত বসতঘর ও দোকানপাট। এর ফলে একদিকে যেমন পাইনবাগানটি হুমকির মুখে পড়েছে, তেমনি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানাযায়, চট্টগ্রাম বন গবেষনা কেন্দ্রের অধীনে রাঙ্গুনিয়া ইছামতি এলাকায় ৫০ বছর আগে ৩একর এলাকা নিয়ে দেশের একমাত্র পাইনবাগান সৃজন করা হয়। কিন্তু যথাযথ রক্ষনাবেক্ষণ এবং তদারকির বাগানটি এখন হুমকির মুখে পড়েছে। গত ৩-৪ বছরে উক্ত বাগানে বসতঘর ও দোকানপাট অবৈধভাবে নির্মাণ করে বসবাস এবং ব্যবসা বাণিজ্য করছে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে উক্ত বাগানের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে অবৈধস্থাপনা গড়ে তোলা হয়। এই জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছ থেকে। এদিকে পাইনবাগানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে বাগান ধংস এবং দখলদারীর বিষয়ে স্থানীয় সচেতন মহল চট্টগ্রাম বন গবেষনা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে অবহিত করে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দা মো: ফিরোজ, রাসেল, মো: তৈয়ব আলী ও রবিউল সহ ১৮জন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র চট্টগ্রাম বন গবেষনা পরিচালক বরাবরে প্রেরণ করে। এতে উল্লেখ করা হয়, ইছামতি বীজ বাগান কেন্দ্রের কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান বাগানের কর্মচারী তাজুলের মাধ্যমে বসতঘর ও দোকান প্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে পাইনবাগানে বসতঘর ও দোকান নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন। একই সাথে কোন ধরনের দরপত্র আহবান ও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই পাইন বাগান পাশ্ববর্তী আকাশ মনি বাগানের অর্ধশত গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন মো: মিজানুর রহমান। মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে সরকারী সংরক্ষিত পাইন বাগানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় বাগানের বৃক্ষের সংখ্যা কমে সরকারের কাঙ্খিত লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং বাগানটি ধংসের মুখে পতিত হয়েছে। বাগান থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে দেশের একমাত্র সংরক্ষিত পাইন বাগানটি এক সময় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, রাঙ্গুনিয়া ও রাঙামাটির সীমান্ত ইছামতি এলাকায় দেশের একমাত্র পাইনবাগান ও আকাশ মনি বাগান। ছোট টিলা আকৃতির পাহাড়ে প্রায় তিন একর এলাকা জুড়ে এই পাইনবাগানের অবস্থান। বাগানের মাঝে মাঝে গাছ ও পাহাড় কেটে বসতঘর ও দোকান পান নির্মাণ করা হয়েছে। বাগানের মাঝে নির্মাণ করা দোকানের মালিক দাবীদার মাঈনুদ্দিন বলেন, ১০৯৭ সাল থেকে তিনি এই বাগানে দোকান দিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। ওই সময় এই বাগানে মাত্র ১০-১৫টি বসতি ছিল। গত ৪-৫ মাস আগে পাইন বাগানে নতুন ভাবে প্রায় ৩০-৪০টি বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এদেরকে এই অঞ্চলে আগে দেখা যায়নি বলেও তিনি জানান।
বাগানে বসতি স্থাপনকারী ভিডিপি শহিদ বলেন, প্রায় তিন বছর আগে তিনি পাইনবাগানের কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে বসতঘর নির্মাণ করার অনুমতি পান। এর পর থেকেই তিনি বসতঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। পাইন বাগানে বসতি স্থাপনকারী বাদল বড়–য়া, মো: সেলিম, হাবিব, আব্দুস সামাদ, সামসুদ্দিন ও নুরল হকও টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণের অনুমতি পান বলে আলাপকালে এই প্রতিবেদককে জানান।
এই ব্যপারে জানতে চাইলে ইছামতি বীজ বিভাগে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান বলেন, আমি এই বীজ বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। আমাকে চট্টগ্রাম ষোলশহর বন গবেষনা ইনস্টিটিউটে সপ্তাহে ৪দিন দায়িত্ব পালন করতে হয়। সপ্তাহে একদিন আমি ইছামতি কেন্দ্রে গিয়ে বাগান পরিদর্শন করি। দেখা যায়, ইছামতি পাইনবাগান বা আকাশ মনি বাগানে গেলে ঘুরতে ঘুরতে দিন শেষ। তিনি বাগানের গাছ চুরি হয়েছে দাবী করে বলেন, ইদানিংকালে কিছু গাছ চুরি হয়েছে। আউয়াল নামক একজন গাছচোরকে ধরে আমরা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। এর পর থেকে বাগানে অবস্থানকারী অবৈধ দখলদাররা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। মিজানুর রহমান জনবল সংকটই গাছ চুরির মূল কারণ দাবী করে বলেন, পাইনগাছ ও আকাশ মনি বাগানের দায়িত্বে আছে একজন কর্মকর্তা, তিনজন কর্মচারী। তবে এখানে ১০জন কর্মচারী প্রয়োজন।
এই বিষয়ে বন গবেষনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. শাহেনা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান