তিস্তায় ধৈর্য্য ধরার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
প্রতিবেদক,তিস্তা চুক্তি নিয়ে ‘ধৈর্য্য ধরার’ পরামর্শ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, সব কিছু ‘রাতারাতি হয় না’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের আগের দিন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
শনি ও রোববার মোদীর ঢাকা সফরে যে বহু আলোচিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হচ্ছে না, তা আগেই ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছিল। মাহমুদ আলীও সংবাদ সম্মেলনে সে কথাই জানিয়েছেন।
“এটা নিয়ে তো আপাতত নেই। তবে আলোচনা চলছে। তবে সফরের সময় তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা নয়।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিস্তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এই আলোচনা চলছে কূটনৈতিক পর্যায়ে।
“ডিপ্লেমেসিতে সব কিছু তো পাবলিকলি হয় না। অনেক কিছুই চোখের আড়ালে হয়। তিস্তা চুক্তি নিয়েও আলোচনা চলছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।”
২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে আপত্তি তোলায় বিষয়টি আটকে যায়।
এর প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা এসে ‘শিগগিরই তিস্তার জট খোলার’ আশা দেন মমতা।
এরপর মোদীর ঢাকা সফরের সময় মমতারও আসার আলোচনা শুরু হলে পুরনো কাঠামোতে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আবারও বেঁকে বসেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ঢাকা সফরে ‘তিস্তা চুক্তি না করার’ আশ্বাস দিয়েই প্রধানমন্ত্রী মোদী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে সফরে আসতে রাজি করান বলে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার খবর।
গত ১ জুন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ স্পষ্টই জানিয়ে দেন মোদীর সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই হচ্ছে না।
শুক্রবার মোদীর সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এলেও তিস্তা নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখী হতে হয় তাকে।
‘চোখের আড়ালে’ তিস্তার আলোচনা প্রসঙ্গে মাহমুদ আলী বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আর এ জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
“আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করেছি। আর আমাদের সম্পর্ক একটি ঐতিহাসিব উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমরা নিশ্চই এ বিষয়ে আরও আলোচনা করব।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের আলোচনায় আঞ্চলিক যোগাযোগের বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে।
ঢাকা সফর নিয়ে উচ্ছ্বসিত মোদীও বৃহস্পতিবার রাতে এক টুইটে লিখেছেন, “আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে আমার বাংলাদেশ সফর আমাদের বন্ধন আরও মজবুত করবে এবং তাতে দুই দেশের জনগণই উপকৃত হবে।”
বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের সব বাধা কাটিয়ে ওঠার পর নরেন্দ্র মোদীর এই সফর হচ্ছে। ৪১ বছর ধরে ঝুলে থাকা সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পথ তৈরি হওয়ায় দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জীবন বদলের স্বপ্ন দেখছে।
সেই স্থল সীমান্ত চুক্তির প্রোটোকলে দুই দেশের অনুসমর্থনের দলিল মোদীর সফরে বিনিময় হবে বলে মাহমুদ আলী সংবাদ সম্মেলনে জানান।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা পৌঁছানোর পর শাহজালাল বিমানবন্দরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হবে।
তার ৩৬ ঘণ্টার সফরে আন্তঃযোগাযোগ, সীমান্ত নিরাপত্তা, বাণিজ্য সহযোগিতার মতো অন্তত ২০টি বিষয়ে চুক্তি ও আলোচনা হওয়ার কথা, যার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ।
ঢাকা পৌঁছানোর পর নরেন্দ্র মোদী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সেখান থেকে তিনি যাবেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে।
শনিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও থাকবেন।
রোববার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন ছাড়াও বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সমম্মেলন কেন্দ্রে বক্তৃতা দেবেন মোদী। এরপর সন্ধ্যায়ই তিনি ঢাকা ছাড়বেন।
মমতা ঢাকা আসছেন মোদীর একদিন আগে, শুক্রবার রাতে। মোদীর একদিন আগেই তিনি ঢাকা ছাড়বেন।
সফরসঙ্গীদের নিয়ে নরেন্দ্র মোদী থাকবেন সোনারগাঁও হোটেলে। আর মমতার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে হোটেল র্যাপডিসনে।