সোমবার, ৮ জুন ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » চাটমোহরে ১০ চিকিৎসকের কক্সবাজার ভ্রমনে টনক নড়লে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ইউএনও’র প্রতিবেদন দাখিল
চাটমোহরে ১০ চিকিৎসকের কক্সবাজার ভ্রমনে টনক নড়লে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ইউএনও’র প্রতিবেদন দাখিল
চাটমোহর প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০ জন চিকিৎসকের কক্সবাজারে প্রমোদ ভ্রমণের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম স্থানীয় এমপি মোঃ মকবুল হোসেনকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দিতে বলেন। এমপি’র নির্দেশে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম গত শনিবার তদন্তপূর্বক সংসদ সদস্যের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
এব্যাপারে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন স্থানীয় ও কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে টনক নড়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের। গত ২৭ মে তারিখ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে যান চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দশজন চিকিৎসক। ফলে ব্যাহত হয় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। রোগী নিয়ে আসা স্বজনদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চাটমোহর উপজেলার চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টানা ৫ দিনে ১০ চিকিৎসক ছুটি নিয়ে ভ্রমনে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয় শতশত রোগী।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, কোন সরকারি নির্দেশনা না থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ছুটি নিয়ে তারা কক্সবাজার যান। দশজনের এই দলের নেতৃত্ব দেন, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) পাবনা জেলা শাখার সভাপতি ডা. গোলজার হোসেন।
অন্যদের মধ্যে ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাঃ মঞ্জুরা রহমান, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সবিজুর রহমান সবুজ, ডাঃ রতন কুমার রায়, ডাঃ স,ম বায়েজিদ, ডাঃ পপি রাণী কুন্ডু, ডাঃ তাহমিনা সুলতানা নীলা, ডাঃ নাজমুল হক, ডাঃ ইফতেদার রহমান শাওন, ডাঃ মদিনা খাতুন ও ডাঃ হাসানুজ্জামান টুটুল।
ভ্রমনে যাননি এমন একাধিক চিকিৎসকের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তবে একসাথে এতগুলো চিকিৎসককে কিভাবে ছুটি দেওয়া হলো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। পহেলা জুন তারা কর্মস্থলে যোগদান করেন। ওই সময় পাবনার সিভিল সার্জন ডা. শহিদ মো: সাদেকুল ইসলাম বলেছিলেন, যে দশজন কক্সবাজার ভ্রমনে গেছেন তারা যথারীতি ছুটি নিয়ে গেছেন। বাকি যে চিকিৎসক হাসপাতালে আছেন তাদের দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি। ভ্রমনে যাওয়া চিকিৎসকরা কবে ফিরবেন এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারেননি।
তবে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ৩ মে তিনি চাটমোহরে এসে ডাক্তারদের হাজিরা খাতা, ছুটির ফাইলপত্র নিয়ে যান বলে জানা যায়। এব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রী স্থানীয় এমপি কে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেন। এমপির নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম তদন্তপূর্বক গত শনিবার প্রতিবেদন দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ইউএনও শফিকুল ইসলাম জানান, ডাক্তারদের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, ছুটি যথাযথ ছিল কিনা, তারা যাওয়ার পর আউটডোরে রোগির উপস্থিতি কমলো নাকি বাড়লো-এসব বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন সংসদ সদস্য মহোদয়ের নিকট দিয়েছি। এতে পত্রিকার কাটিং সংযুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মহোদয় এমপি মহোদয়কে মূলতঃ এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, ১০ জন চিকিৎসকের ভ্রমণ বিষয়ে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাকে ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেন। আমি ইউএনও-কে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দিতে বলি। তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নেওয়া হবে না। অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট চিকিৎসকের পদ ২৯টি। এর মধ্যে ২০১০ইং সালে যোগদানের পর থেকে অনুপস্থিত রয়েছে ৪ জন। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রকম ছুটি এবং কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন।
গত শনিবার গিয়ে দেখা দেখা যায়, অসুস্থ্য রোগীদের নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছন স্বজনরা। দুপুর ১টায় হাসপাতালে অধিকাংশ মেডিকেল অফিসারকে পাওয়া যায়নি।