শুক্রবার, ১২ জুন ২০১৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান ১০ হাজার ১৭২ কোটি টাকা
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান ১০ হাজার ১৭২ কোটি টাকা
ডেস্ক : বিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান সামান্য কমেছে। এ বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ১০টি প্রতিষ্ঠানের নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট লোকসানের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। শীর্ষ লোকসানী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’ (বিপিডিবি)। আলোচ্য বছরে পিডিবি’র লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ২০টি প্রতিষ্ঠানের দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। দেনাদার প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে রয়েছে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। আলোচ্য সময়ে বিপিসি’র দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ হাজার ১৫২ কোটি টাকা।
‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৫’-তে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পিডিবি প্রতিবছর লোকসান দিয়ে আসছে। বিদায়ী অর্থবছরে পিডিবি’র লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭১৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এটা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশী। গত বছর পিডিবি ৬ হাজার ৮০৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছিল।
লোকসানের তালিকায় এর পরে রয়েছে ‘বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন’ (বিজেএমসি)। গত অর্থবছরের চেয়ে বিজেএমসি’র লোকসান এবার প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা বেড়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ হচ্ছে ৬৩৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪৯৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। দশ বছরের মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে বিজেএমসি মাত্র একবার সাড়ে ১৪ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে।
গত অর্থবছরের চেয়ে ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন’ (বিএসএফআইসি)-এর লোকসান এবার কিছুটা কমেছে। এবার সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। গত অর্থবছর সংস্থাটি ৫৬৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছিল। গত দশ বছরে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিএসএফআইসি মাত্র একবার ৩৫ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিআরটিসি ৬২ কোটি ৭ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছিল ৬৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা), ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিহন সংস্থা’ (বিআইডব্লিউটিএ) ৬১ কোটি ৫২ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছিল ১৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা), ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন’ (বিটিএমসি) ৩০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছিল ২৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা), ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা’ (বিএফডিসি) ৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছিল ৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা), বিএফএফডবব্লিউটি ২ কোটি ৯২ লাখ (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছিল ১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা) টাকা লোকসান দিয়েছে।
মুনাফা থেকে লোকসানে বিসিআইসি ও বিএসসি : ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন’ (বিসিআইসি)-এর লোকসানের পরিমাণ হচ্ছে ১০১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। গত অর্থবছর ও এর আগের অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি যথাক্রমে ৯৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং ৮৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করেছিল। এর আগে ২০০৯-১০, ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে সংস্থাটি মোট ৭৫৯ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছিল। গত আট বছরে বিসিআইসি মুনাফা অর্জন করেছে চারবার।
‘বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন’ (বিএসসি)-এর লোকসানের পরিমাণ হচ্ছে ২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছর ধরে সংস্থাটি মুনাফা অর্জন করে আসছিল। গত অর্থবছরে সংস্থাটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর আগে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিএসসি ১০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছিল।
পাঁচ বছর পর লাভের মুখ দেখল বিপিসি : আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমায় টানা পাঁচ বছর পর লাভের মুখ দেখলো ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। বিদায়ী অর্থবছরে বিপিসি’র মুনাফা প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে সংস্থাটি লোকসান দিয়েছিল ২ হাজার ৩২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর আগে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিপিসি ৩২২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করেছিল।
২০টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের দেনা ৩২,৯৭১ কোটি টাকা : ডিসেম্বর (২০১৪) পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ২০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মোট দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেনা ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন’ (বিপিসি)-এর। বিপিসি’র দেনার পরিমাণ হচ্ছে ১১ হাজার ১৫২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
অন্যগুলোর মধ্যে ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’ (বিপিডিবি)-এর দেনা ৭ হাজার ৬২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ‘বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প কর্পোরেশন’ (বিসিআইসি)-এর দেনা ৫ হাজার ১০৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন’ (বিএসএফআইসি)-এর দেনা ৩ হাজার ২১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন’ (বিএডিসি)-এর দেনার পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ৩১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ‘বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন’ (বিজেএমসি)-এর দেনা ১ হাজার ২১৯ কোটি ৮ লাখ টাকা, ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি)-এর দেনা ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা, বিজিএমসি’র দেনা ৩৯৬ কোটি ১২ লাখ টাকা, ‘বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন’ (বিএসইসি)-এর দেনা ৩০৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ও বিবিসি’র দেনা ৩০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিপিএ’র দেনার পরিমাণ হচ্ছে ৭০ কোটি ৬১ লাখ টাকা, এমপিএ’র দেনা ৬৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ‘ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’ (টিসিবি)-এর দেনা ৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা, বিটিবি’র দেনা ৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকা, ‘বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন’ (বিএসসি)-এর দেনা ৩০ কোটি ৯০ লাখ টাকা, ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন’ (বিটিএিমসি)-এর দেনা ২৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ডেসা’র দেনা ৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড’ (আরইবি)-এর দেনা ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ‘বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ (বিএফডিসি)-এর দেনা ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও বিআরটিসি’র দেনা ৬২ লাখ টাকা।
১৬৫ কোটি টাকা খেলাপী ঋণের সিংহভাগই হচ্ছে বিসিআইসি’র। বিসিআইসি’র খেলাপী ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর পরেই রয়েছে বিটিএমসি। বিটিএমসি’র দেনার প্রায় পুরোটাই খেলাপি।