গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাভারঃ
মোঃমনির হোসেন;
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র (জিকে) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ১৯৭১ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১৯৭২ সালের নিবন্ধনকৃত পাবলিক চ্যারিটেবিল ট্রাস্ট। দুটি লক্ষ্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয় ক)দারিদ্র্য হ্রাসকরণ; এবং খ) নারীর উন্নতিসাধন। ১৯৭৭ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বিত মাজস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করে। গণস্বাস্থ্য ফিলিপাইন থেকে ম্যাগসাসে পুরস্কার (১৯৮৫), সুইডেন থেকে রাইট লাইভহুড পুরস্কার (১৯৯২) এবং ২০০২ সালে বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো পুরস্কার লাভ করে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেনে বসবাসরত এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. এ এইচ সায়েদুর রহমানকে সভাপতি এবং ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন গঠন করে। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন এবং যুক্তরাজ্য যৌথভাবে ডা. এম এ মোবিন ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করার জন্য ভারতে পাঠায়। তারা অস্থায়ী (মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মেলাঘরে ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট
বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করে। সেনাবাহিনীর ডাক্তার (এমএস) সিতারা বেগম এই হাসপাতালের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল ঢাকার ইস্কাটন সড়কে পুনঃস্থাপিত হয়। ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুরূপে গড়ে তোলার জন্য চল গ্রামে যাই- এই স্লোগান ও উদ্দেশ্য নিয়ে হাসপাতালটি সাভারে স্থানান্তরিত হয় এবং নামকরণ করা হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র (জিকে)। এর কর্মীরা যৌথভাবে বসবাস এবং সকলে কৃষিকাজে অংশগ্রহণ করা কর্মসূচি গ্রহণ করে। গ্রামবাসী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে জমি এবং দালান তৈরির মূল উপকরণসমূহ দান করে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাসমূহ, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের নদীচর এলাকা, কুতুবদিয়া, মহেশখালি ও চরফ্যাশনের সমুদ্রতীরবর্তী দ্বীপ এলাকায় বিস্তার লাভ করে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২৫টি উপজেলায় ৪০টি হেলথ ক্লিনিক এবং সাভার, ঢাকা শহর, শ্রীপুর (গাজীপুর জেলা) ও কাশিনাথপুরে (পাবনা) ৪টি সেকেন্ডারি কেয়ার হাসপাতাল স্থাপন করেছে। পঞ্চম হাসপাতালটি গাইবান্ধায় প্রতিষ্ঠিত হবে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য কর্মসূচির ভিত্তি চিকিৎসা সেবার চেয়ে স্বাস্থ্য সেবার উপর
নির্ভরশীল। বাড়িতে নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্য স্থানীয় ধাত্রীদের (টিবিএ) ৫ থেকে ৭ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ৬ থেকে ১০ বছরের স্কুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গ্রাম্য যুবতীদের স্থানীয় ধাত্রীদের সঙ্গে প্যারামেডিক্স
হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে তারা নিয়মিতভাবে প্রসব পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী চিকিৎসা সেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবাসহ প্রতিরোধমূলক সেবা, সীমিত প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা এবং সমষ্টিগত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্যারামেডিক্স সদস্যগণ মহিলাদের নিবীর্জিকরণের জন্য মিনিল্যাপারোটমি টিউবেকটোমি করে চিকিৎসা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থানীয় সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেও কাজ করে। প্যারামেডিক্সদের দায়বদ্ধতার উন্নতিসাধনে প্রতিটি মৃত শিশু ও মায়ের মৃতদেহ পরীক্ষা করে এবং পরবর্তীকালে গ্রামবাসীদের দ্বারা তা পরীক্ষানিরীক্ষা করানো হয়। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মহিলা সদস্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ারপারসন নিযুক্ত হন এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্থানীয় ব্যাংক হিসেবের চুক্তিপত্রের স্বাক্ষরদাতা হিসেবে কাজ করেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২০১৫ সালের পূর্বে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৪ ও ৫ নং লক্ষ্যমাত্রা অজর্নের উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে।