বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০১৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | জেলার খবর » চলনবিলে ভাসমান খামারে সচ্ছল হতদরিদ্র নারীরা
চলনবিলে ভাসমান খামারে সচ্ছল হতদরিদ্র নারীরা
জাহাঙ্গীর আলম, চাটমোহর
নদীতে সবজি, মাছ ও হাঁসের সমন্বিত ভাসমান খামার করে ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টা করছেন পাবনার চলনবিল এলাকার হতদরিদ্র নারীরা। মাত্র এক বছরের মধ্যেই এলাকাবাসীর মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই চাষ পদ্ধতি।
জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার নৌবাড়িয়া নতুনপাড়া গ্রামে এই ভাসমান খামার করে দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করতে সহায়তা করছে ‘সিধুলাই স্বনিভর্র উন্নয়ন সংস্থা’ নামের একটি বেসরকারী সংগঠন। আর এই প্রকল্প নদী তীরবর্তী জেলার অন্যান্য উপজেলায় ছড়িয়ে দিলে দারিদ্রতার হার কমবে বলে মনে করেন কৃষিবিদরা।
একের ভিতরে তিন। পানিতে মাছ, হাঁস আর সবজির চাষ হচ্ছে পাবনার প্রত্যন্ত অঞ্চল ভাঙ্গুড়া উপজেলার নৌ-বাড়িয়া নতুনপাড়া গ্রামের গুমানী নদীতে। ব্যতিক্রমধর্মী এই চাষ পদ্ধতি এলাকায় পরিচিত ভাসমান খামার নামে। এই পদ্ধতিতে নদীর তীরে পানির ওপর তৈরি করা হয় ড্রামের ভেলা। সেই ভেলার ওপর একপাশে নির্মিত ঘরে হাঁস পালন করা হয়, অন্য পাশে পানির ওপরে তৈরি মাচায় সবজি ও নিচে চলে মাছ চাষ।
প্লাস্টিকের বালতির মধ্যে মাচা তৈরি করে শক্ত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে তাতে সবজির চারা রোপণ করা হয়। খামারে উন্মুক্ত জলরাশির প্রবাহ থাকায় সরপুঁটি, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। হাঁস সারাদিন পানিতে থাকার পর রাতে ভাসমান খামারের ঘরে ডিম দেয়। হাঁসের বিষ্ঠা পরিণত হয় মাছের খাদ্যে। মাত্র এক বছর আগে শুরু হওয়া এই ভাসমান খামার করে স্বচ্ছলতার মুখ দেখছেন এলাকার হতদরিদ্র নারীরা।
এই খামার করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন চর-ভাঙ্গুড়া পূর্বপাড়া গ্রামের দুলাল খাঁর স্ত্রী হোসনে আরা, মহির উদ্দিনের স্ত্রী হাফিজা খাতুন, আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সালেহা খাতুন, লাবলু মিয়ার স্ত্রী আফরোজা খাতুন ও জাকির হোসেনের স্ত্রী রেহেনা খাতুন।
তারা জানান, খামারের মাচায় শসা, করলা, কুমড়া, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন সবজির ভালো ফলন হয়। এই সবজি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে চাহিদাও অনেক, দামও বেশি পাওয়া যায়। ভাসমান খামার করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের পুষ্টির চাহিদাও মেটান।
তারা আরো জানান, গত দুই বছরে তাদের অভাবী সংসারের চিত্র বদলে গেছে। এখন হাসি ফুটেছে পরিবারের সকলের মুখে। ছেলে মেয়েদের স্কুলে পড়াতে পারছেন। তাদের দেখাদেখি গ্রামের অন্যান্য নারীরাও এই খামার করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানান তারা।
সিধুলাই স্বনিভর্র উন্নয়ন সংস্থার কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সুপ্রকাশ পাল জানান, পাঁচ জন নারী মিলে একটি ভাসমান খামার করতে প্রথমে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পরবর্তী বছর গুলোতে তাদের আর খরচ করতে হয় না। এ ছাড়া মাছ, হাঁসের ডিম ও সবজি বিক্রি করে এক বছরে ওই পাঁচ জনের আয় হয় এক লাখ টাকারও বেশি। এই প্রকল্প নদীর তীরবর্তী কৃষক-কৃষানির মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বলেও জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর জানান, আমাদের যে কৃষক-কৃষানিরা আছেন তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করে তুলেছি। তারা প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ভাসমান খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এই ভাসমান খামার কৃষক-কৃষানির মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আরো ব্যাপকভাবে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে সচেষ্ট রয়েছে কৃষি বিভাগ।’
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এ বি এম মোস্তাফিজার রহমান জানান, নদীর তীর ব্যবহার করে এমন ভাসমান খামার জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে পারলে দারিদ্রতা দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে এই প্রকল্প।
পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চলনবিল অঞ্চলের অনেক এলাকায় বছরের ছয় মাস পানি কবলিত থাকে। ওইসব এলাকায় এমন খামার হাসি ফোটাতে পারে দরিদ্র মানুষের মুখে-এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।