বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০১৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | রাজনীতি » রাতে যেভাবে আতংক ছড়াতেন এমপি পিনু খানের ছেলে রনি
রাতে যেভাবে আতংক ছড়াতেন এমপি পিনু খানের ছেলে রনি
পক্ষকাল ডেস্ক ঃ
প্রায় প্রতি রাতেই মদ্যপ অবস্থায় বন্ধুদের নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন এমপিপুত্র বখতিয়ার আলম রনি। আগে-পিছে গাড়ির বহর নিয়ে হুটার (সাইরেন) বাজিয়ে রাতের ঢাকায় ছড়াতেন আতংক। সংসদ সদস্যের স্টিকার থাকায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তার গাড়ি থামাতেন না। গুলি ছুড়ে দুজন নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়ার ঘটনার রাতেও রনির প্রাডো গাড়িতে সঙ্গী ছিল তিন বন্ধু। পুলিশ ওই তিনজনকেও খুঁজছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, এর আগেও গভীর রাতে মদ্যপ অবস্থায় রাজধানীর হাতিরপুল ও সংসদ ভবনের সামনে দুদফা ফাঁকা গুলি ছুড়েছিলেন রনি। তবে সেসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা স্বীকার করে বখতিয়ার আলম রনি বলেছেন, ঘটনার রাতে তিনি এতটাই নেশাগ্রস্ত ছিলেন যে কখন অস্ত্র বের করে গুলি ছুড়েছিলেন তা মনে করতে পারছেন না।
১৩ এপ্রিল ইস্কাটন এলাকায় রনির এলাপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন রিকশাচালক হাকিম ও সিএনজি অটোরিকশাচালক ইয়াকুব। ওই ঘটনায় ৩১ মে ইস্কাটন ও মগবাজার এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ বখতিয়ার আলম রনি ও তার গাড়ির চালক ইমরান ফকিরকে গ্রেফতার করে। রনি মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে। ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে ইমরান ফকির। পুলিশ তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এদিকে একজন মাদকাসক্ত কিভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পেল এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, যে কেউ হঠাৎ করেই মাদকাসক্ত হয়ে যেতে পারে। এখন দেখতে হবে তিনি মাদকাসক্ত হওয়ার আগে অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছিলেন, নাকি পরে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সূত্র বলেছে, ১৩ এপ্রিলের ঘটনাই বখতিয়ার আলম রনির প্রথম অপকর্ম নয়। এর আগেও মদ্যপ অবস্থায় নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে বেশ কয়েকবার তিনি গুলি চালিয়েছেন। রাতের ঢাকায় তিনি ছিলেন মূর্তিমান ত্রাস। সব সময় গাড়ির বহর নিয়ে চলাফেরা করতেন। কখনও সংসদ ভবন, কখনও হাতিরঝিলে গভীর রাত পর্যন্ত বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন। দামি গাড়িতে সংসদ সদস্যের স্টিকার থাকায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এসব দেখেও এড়িয়ে যেতেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ঘটনার রাতে রনির সঙ্গে তার তিন বন্ধু ছিল। এদের একজন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। রনি গ্রেফতার হওয়ার পর ওই নেতা আত্মগোপনে চলে যান। ঘটনার রাতে ওই গাড়িতে তিন বন্ধু থাকার কথা স্বীকার করে রনি গোয়েন্দা পুলিশকে বারবার বলতে চাইছে, গভীর রাতে নিউ ইস্কাটন এলাকায় তার গাড়ি যানজটে আটকা পড়লে তিনি কিছুক্ষণ হর্ন বাজান। কিন্তু যানজটমুক্ত হতে না পেরে রিকশাচালকদের গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় কয়েকজন রিকশাচালক তাকেও গালিগালাজ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি গুলি চালিয়েছিলেন।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডে নিজের প্রাডো গাড়ি থেকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গুলি ছুড়তে শুরু করেন রনি। প্রথমে গুলি রিকশাচালক হাকিমের গায়ে লাগে। তার চিৎকারে এগিয়ে আসেন দৈনিক জনকণ্ঠের সিএনজিচালক ইয়াকুব। মাতাল অবস্থায় তাকেও গুলি করেন রনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় রমনা থানায় মামলা করেন রিকশাচালক হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম। এদিকে মামলা দায়েরের পর রমনা থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যে গাড়ি থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল সেটি শনাক্তের পর মামলাটির তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরই এক পর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশ ৩১ মে এমপি পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি ও তার গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে গ্রেফতার করে।