জালিয়াত ধরতে বাধা দলীয় লোকজন: মুহিত
পক্ষকাল ডেস্কঃ মঙ্গলবার সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেট পাসের আগে ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় মুহিত বলেন, “আমরা সোনালী ব্যাংকের একজন ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে জেলে নিতে সক্ষম হই। তিনি জেলেই মারা গেছেন। আরেকজন মনে হয়, ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে জেলে নেওয়া হয়েছে।
“আরও কয়েকজন ডাইরেক্টরকে আমি কোনো মতেই জেলে নিতে পারছি না। এরা সকলেই আসামি, জালিয়াতির আসামি। এরা আমাদের লোকজনের সমর্থনে বাইরে রয়েছে। আমি এটাতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।”
২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে নিয়ম লঙ্ঘন করে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার অভিযোগ উঠার পর তার তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন।
ওই ঋণের আড়াই হাজার কোটি টাকাই নিয়েছে হল-মার্ক গ্রুপ, যার এমডি তানভির মাহমুদের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে সোনালী ব্যাংকের ১৩ কর্মকর্তাকে।
এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। আসামিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এখনও পলাতক।
সংসদে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ মঞ্জুরের দাবির বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম বলেন, “হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। আমরা কীসের মাঝে আছি? এই টাকা জনগণের টাকা। এর বিচার হয়নি।”
কুমিল্লা-৮ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, “ব্যাংকগুলো তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থার জন্য আমার এই ছাঁটাই প্রস্তাব।”
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, “৫৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ! সোনালী নাম শুনলে আঁতকে উঠি।”
সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, “অবশ্যই ব্যাংকে কাজ করলে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রয়োজন। সেটার যখন ঘাটতি হয়, তখন অনেক অসুবিধা হয়।
“আমাদের কিছু ঘাটতি হয়েছে সোনালী ব্যাংকে, বেসিক ব্যাংকে ..। তার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।”
“এই ধরনের শাস্তি যেটা কোনোদিনই বাংলাদেশে হয়নি। ম্যানেজিং ডিরেক্টর তো দূরের কথা, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর.. আনথিংকেবল। এতদিন কেউ সাহস করেনি এদের টাচ করতে। আমি তাদের জেলে নিয়েছি,” বলেন অর্থমন্ত্রী।
তবে ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজটি গতিশীল নয় বলে স্বীকার করেন তিনি।
“একেবারে যে স্পিডে যাওয়া উচিত, সে স্পিডে যেতে পারছি না।”
বেসিক ব্যাংক প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, “বেসিক ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ করেছি। তারা অনুসন্ধান চালিয়ে রিপোর্ট ঠিক করছে। সে রিপোর্ট পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“ইতোমধ্যে আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে বেসিক ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট দুষ্টু লোক দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে।”
খেলাপি ঋণের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন করার আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি অবশ্যই তার জবাব দেবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অর্থ মঞ্জুরির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ছাঁটাই প্রস্তাবে বগুড়া-৬ আসনের নুরুল ইসলাম ওমর এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের মাহজাবীন মোরশেদ সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব জানান।
“আমরা এটা মানতে পারছি না। এই যে কূট পরামর্শ, অত্যন্ত ভুল পরামর্শ,” প্রস্তাবটি নাকচ করেন অর্থমন্ত্রী।