ভাবমূর্তি নষ্ট করা চলবে না: ছাত্রলীগকে হাসিনা
নানা অভিযোগে সমালোচনার মধ্যে থাকা ছাত্রলীগকে পথ থেকে বিচ্যুত না হতে সতর্ক করেছেন শেখ হাসিনা।
শনিবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠনটির সম্মেলন উদ্বোধন করে নিয়মিত ছাত্র ও মেধাবীদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নির্বাচনের তাগিদও দেন তিনি।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশের প্রাচীনতম সংগঠন ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাও এই সংগঠনটিতে যুক্ত ছিলেন এবং বদরুন্নেসা কলেজ (তৎকালীন ইডেন ইন্টারমিডিয়েট কলেজ) ছাত্র সংসদের ভিপিও ছিলেন।
শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমি এটুকুই চাইব, ছাত্রলীগ যেন সব সময় একটা আদর্শ নিয়ে চলে। কারণ, আদর্শহীন সংগঠন ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা করতে পারে, জাতির স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে না।
“এই সংগঠনের ইতিহাস বাঙালির প্রতিটি অর্জনের সঙ্গে জড়িত। এই সংগঠনের ভাবমূর্তি যেন কোনো ভাবেই ক্ষুণ্ন না হয়।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে অতীতের বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের ভূমিকা থাকলেও সংগঠনটির সাম্প্রতিক কার্যক্রমে প্রশংসার চেয়ে সমালোচনাই বেশি।
হল দখল, দরপত্র নিয়ে সন্ত্রাস, অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে সংঘর্ষ- এসব কাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারাও ছাত্রলীগের সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না।
ছাত্রলীগের মূল নীতি ‘শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি’র কথা সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে তাদের তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের নেতৃত্বে মেধাবী ছাত্রদের দেখার প্রত্যাশা রেখে তিনি বলেন, “মেধাবী, নিয়মিত ছাত্র ও পড়াশোনায় মনোযোগী, তাদেরকেই নির্বাচিত করতে হবে।”
ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বদাতা হিসেবে এখনকার ছাত্রলীগ নেতাদের তৈরি হতে আধুনিক প্রযুক্তি আত্মস্থ করতেও তাদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
“সুশিক্ষায় শিক্ষিত না হলে তারা কিভাবে নেতৃত্ব দেবে?”
এবার সম্মেলনে দুই বছর দেরি হওয়ায় ধারাবাহিকতা রাখতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের বয়সসীমা ২৯ বছর করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা, যাকে ‘সাংগঠনিক নেত্রী’ মনে করে ছাত্র সংগঠনটি।
“আমি একটা সুনির্দিষ্ট বয়স ঠিক করে দিয়েছিলাম। ২৭ বছর করে দিয়েছিলাম। ২ বছর নষ্ট হয়েছে। গ্রেস পিরিয়ড দিতে হয়। এখন সেটা ২৯ বছর হয়ে গেছে। ২৯ বছরই থাকতে হবে।”
এই দেরির কথা বলতে গিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ববর্তী সহিংসতা এবং চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের সহিংসতা মোকাবেলায় ছাত্রলীগের ভূমিকার কথাও বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
“যদিও দুই বছর দেরি হয়েছে। আমি দোষ দিই না। ২০১৩ সালের মে থেকে নির্বাচন ঠেকাওয়ের নামে যে তাণ্ডব এই বাংলাদেশে হয়েছে। ওই অবস্থার মধ্যে একটা সম্মেলন করা কঠিন ছিল।”
চলতি বছরের শুরুর তিন মাস বিএনপি জোটের সহিংস আন্দোলনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে নাই বলেই দুই বছর দেরি হয়ে গেছে।”
ছাত্রলীগের কাউন্সিলের প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকেদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “ছাত্রলীগের নেতৃত্ব সম্পূর্ণ ভোটে নির্বাচিত হবে। কেউ ঠিক করে দেবে না।
“ছাত্রলীগের যারা কাউন্সিলর, তারা যাকে চাইবে, তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।”
সেই সঙ্গে সঠিক নেতৃত্ব বাছাইয়ের জন্যও কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
“আমি শুধু এইটুকু বলব, নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারে সেই ধরনের মেধাবী ও নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রী, তারাই যেন নির্বাচিত হতে পারে।”
কাউন্সিলে ভোটে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহারের পরামর্শও দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা সংগঠনটির গৌরবের ইতিহাসও তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতার অগ্রণী শক্তি হিসাবে ছাত্রলীগ ছিল।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বৈরী পরিবেশে দেশে ফিরে সংগঠনটিকে সচল করতে নিজের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
সম্মেলনে বক্তৃতা দিচ্ছেন শেখ হাসিনা
সম্মেলনে বক্তৃতা দিচ্ছেন শেখ হাসিনা
“আমি দেশে ফিরে এই সংগঠনের নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনি। এই নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার মধ্যে বহু প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। অনেক সময় ভাঙনের সম্মুখীন হতে হয়েছে।”
‘মহান অর্জনের জন্য মহান ত্যাগ প্রয়োজন, ত্যাগ ছাড়া কোনো নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে না’- নিজের বাবাকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “শুধু ভোগের কথা চিন্তা করে যারা নেতৃত্ব দেবে, তারা দেশকেও কিছু দিকে পারবে না, জাতিকেও কিছু দিতে পারবে না।”
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অভিশাপমুক্ত হচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “এই খুনির রাজত্ব আর যেনো বাংলাদেশে ফিরে আসতে না পারে, সেজন্য ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সজাগ থাকতে হবে।”
জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে পড়ার কথাও বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
ছাত্রলীগের সবাইকে সৎ পথে থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “অনেক ঝড়ঝাপটা, অনেক বাধা বিঘ্ন আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। বারবার আঘাত এসেছে।
“শুধু দেশের ভিতরে নয়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা রকম ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। তা মোকাবেলার শক্তি পেয়েছি সততার শক্তি থেকে। সততার শক্তি অপরসীম।”
অনুষ্ঠানে আলোচনার আগে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। তার আগে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উড়ানো হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমানে দুই মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সাবেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর পাশের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বসবে ছাত্রলীগের কাউন্সিল অধিবেশন, যেখানে আগামী নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে।