ডিসিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে যেন আবার সহিংস পরিস্থিতি ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ফিরে না আসে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে তার কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করে বক্তৃতায় এই নির্দেশ দেন।
এ সময় তিনি জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের সকল প্রকার ভয়ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে উঠে আইনের আওতায় কাজ করার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাষ্ট্র তথা জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণই হবে আপনাদের মূল লক্ষ্য। সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকলে সবার পক্ষেই যথাযথভাব দায়িত্ব পালন করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি সেবা গ্রহণে এসে কেউ যেন হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হয়, আপনাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নারী ও শিশু নির্যার্তন, পাচার ও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধ, যৌতুক ও বাল্যবিবাহ রোধ কাজ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় মাঝারি শিল্পের বিকাশে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশে সহায়তা করার নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় তিনি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য কাজ করতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা যেন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা আশা করি খুব শিগগিরই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারব। এজন্য আপনাদের যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সরকার যে প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছে তা সঠিকভাবে দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এজন্য আপনাদের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর মাধ্যমেই আমরা বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে। রিজার্ভ ৬ গুণ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন বেশি হয়েছে এবং তা এখন দৃষ্টান্ত হিসেবেও বাংলাদেশের নাম উঠে আসছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে দায়িত্ব নেয়ার পরই আমরা দেশের বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। যার ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে। মানুষ এখন তার সুফল পাচ্ছে। আমরা প্রতিদিনই উন্নতি করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে উন্নয়ন করছি তাতে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান হ্রাস পাচ্ছে। সরকার গ্রামীণ অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা এজন্য বহু কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। চলতি বাজেটেও এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে।’
মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির জন্য সরকার কাজ করছে। এক্ষত্রে বাজেট চারগুণ বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের পাশাপাশি, বিভাগীয় কমিশনার, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব এবং সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন।
সম্মেলনে মোট ২২টি সেশন হবে। এর মধ্যে কার্য অধিবেশন থাকবে ১৮টি।
এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, অংশগ্রহণকারী মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা ৩৯টি হলেও দুই থেকে তিনটি মন্ত্রণালয় একত্রিত করে মোট ১৮টি অধিবেশনে সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। সম্মেলনে ডিসিদের পক্ষ থেকে ২৫৩টি প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে ২৫টি প্রস্তাব ভূমি এবং ২৪টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের।