‘এমন রায়ই আমরা আশা করেছিলাম’
নিজস্ব প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড আপিল বিভাগে বহাল থাকায় রায়ে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে এবং আমরা এমনই রায় আশা করেছিলাম বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
বুধবার সকালে রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ মন্তব্য করেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহালের আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এমন রায়ই আমরা আশা করেছিলাম। একাত্তরে হত্যা-গণহত্যার অবস্থা ছিল ভয়াবহ। এই রায় না হলে আমরা চরম হতাশায় পর্যবসিত হতাম। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। রায় প্রকাশের পর সাকা চৌধুরী চাইলে রিভিউ করতে পারবেন। তবে রিভিউতে রায় পুরোপুরি বদলে দেয়ার কোনো দৃষ্টান্তই নেই।’
তিনি বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ৯টি চার্জে সাজা প্রদান করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৮টি অভিযোগে সাজা বহাল রাখা হয়েছে তবে ৭ নম্বর অভিযোগে তাকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। রাউজানে সতীষ চন্দ্র পালিতকে হত্যার অভিযোগে ৭ নম্বর চার্জে ট্রাইব্যুনাল ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল, যা আপিলে খালাস প্রদান করা হয়েছে।
জনকণ্ঠে প্রকাশিত কলাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জাতি যেখানে ফাঁসির অপেক্ষায় ছিল, তখন জনমনে হতাশা সৃষ্টি করার জন্য একটি ভূঁইফোড় পত্রিকায় এ সম্পর্কিত কলাম প্রকাশ করা হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে কনডেম রুল জারি করেছেন। আদালতের মতে ওই লেখার মাধ্যমে আদালত, বিচার ও বিচারকের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ৩ আগস্ট সশরীরে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত।’
গত ৭ জুলাই এই মামলায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এর আগে গত ১ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে।
গত ১৬ জুন তার মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। প্রথমে শুনানি শুরু করে ট্রাইব্যুনালের রায়, সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং রায়সংক্রান্ত নথিপত্র (পেপারবুক) উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এরপর উভয়পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে।
২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সালাউদ্দিন কাদেরের খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করেন তার আইনজীবীরা।
আপিল আবেদনে মোট ১ হাজার ৩২৩ পৃষ্ঠার নথিপত্রের ডকুমেন্টসহ দাখিল করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো আপিল দায়ের করা হয়নি।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
সর্বমোট ১৭২ পৃষ্ঠার ঘোষিত রায়ে তাকে এ শাস্তি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আনীত ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আর বাকি ১৪টি প্রমাণিত হয়নি।
প্রমাণিত অভিযোগগুলো হলো- ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৭ ও ১৮ নম্বর। এর মধ্যে ৩, ৫, ৬ এবং ৮ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর ২, ৪, ৭ অভিযোগে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৭ এবং ১৮ নম্বর অভিযোগে ৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত রায়ে শুধু ৭ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোতে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।