আনসারুল্লাহর খোলা চিঠিতে হুমকি আরও বিস্তৃত
চ্যানেল আই অনলাইন/পক্ষকাল ডেস্ক
তথাকথিত হিটলিস্ট থেকে বেরিয়ে এসে যে কাউকে হত্যা হুমকি এবং গণমাধ্যম থেকে নারীকর্মীদের অব্যাহতির ‘নির্দেশ’কে তালিকায় থাকা ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিস্টরা রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন।
এ তালিকায় আছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, অনলাইন একটিভিস্ট সবাক পাখি এবং সাংবাদিক ও অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অমি রহমান পিয়াল।
গণমাধ্যমের উদ্দেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের খোলা চিঠিতে সংবাদমাধ্যমের প্রতি ৬ দফা ‘নির্দেশনা’র প্রথম দফায় নারীদের গণমাধ্যমের চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে চ্যানেল আই অনলাইনকে ইমরান এইচ সরকার এবং সবাক পাখি বলেন, আজ তারা সংবাদ মাধ্যম ও নারী চাকুরীজীবীদের প্রতি তাদের আক্রোশ প্রকাশ করেছে। নারী স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ধর্মান্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীর হুমকি ধমকি নতুন কিছু নয়। তবে আনসারুল্লাহ এই প্রথম নারীদের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা জারি করলো।
ইমরান এবং সবাক আলাদাভাবে প্রতিক্রিয়া জানালেও একই সুরে বলেন, তারা (আনসারুল্লাহ) দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে। এখনই যদি সরকার সচেতন না হয় তাহলে বড় ধরণের বিপর্যয় ঘটতে পারে।
অমি রহমান পিয়ালও একে অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, আজ তারা সমূলে উপড়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তারা সংবাদ মাধ্যমের জন্য আইন করছে। এখনই সতর্ক না হলে রাষ্ট্রের জন্য এটা বড় হুমকি হয়ে দেখা দেবে।
এখন দেশের কেউই জঙ্গিদের হাত থেকে নিরাপদ নয় উল্লেখ করে সবাক পাখি বলেন, ‘এতদিন যেসব মানুষ ব্লগার হত্যার পর নিজেরা নিরাপদে আছেন ভেবে প্রতিবাদ করেননি, এই সতর্কবার্তা তাদের জন্যও। আসলে আনসারুল্লাহ কিংবা এ ধরনের জঙ্গীগোষ্ঠী কাউকেই ছাড়বে না। তারা তাদের সর্বশেষ দ্বিমতকারীকেও হত্যা করতে চাইবে।’
‘ব্লগার, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী সবাইকে এভাবে হত্যা করে শেষ পর্যন্ত হয়তো এক জঙ্গী গ্রুপ অথবা আরেক জঙ্গী গ্রুপকে হত্যা শুরু করবে। এখনো সময় আছে ব্লগার হত্যা ও হত্যার হুমকিকে ‘ধর্মীয় অনুভূতি’ নামক শব্দ দিয়ে না ঢেকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। নইলে একদিন এ দেশের মানুষকে আবারো যশোর রোড ধরে, নৌকায় চড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দেশ ছাড়তে হবে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘তিন বছর বয়সী সিরিয়ান শিশু আয়লান কুর্দি মতো বহু বাংলাদেশি শিশুর লাশ ভেসে উঠবে সমুদ্র সৈকতে। এসব ভয়ংকর ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে না চাইলে ধর্মীয় মৌলবাদ, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সার্বিকভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
হিটলিস্ট থেকে বেরিয়ে এসে সকল অনলাইন একটিভিস্টের জন্য সতর্কবার্তা তাদের সামর্থের প্রকাশ বলে মনে করেন ইমরান ও পিয়াল।
তারা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, জঙ্গিরা এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। এই চিঠিতে তারা এও বলেছে, এখন থেকে বিভিন্ন নামে পরিচালিত জঙ্গি গোষ্ঠি এক হয়ে কাজ করবে। তাই তাদেরকে এখন আর হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।
দেশের কোনো মানুষই তাদের কাছে নিরাপদ নয় উল্লেখ করে পিয়াল এবং ইমরান বলেন, এখনই যদি আমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক না হই তাহলে সামনে দেশ জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
তবে জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকদের চিনেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য ইমরান বর্তমান সরকারেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সবাই জানে কারা জঙ্গিবাদের পৃষ্টপোষকতা থেকে শুরু করে অর্থ যোগান দিচ্ছে। তারপরও সরকার তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা।
‘এমনকি সব জঙ্গি গোষ্ঠির অর্থ যোগানদাতা এক। যে হেফাজতে ইসলাম দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে দেশের শাসন ব্যবস্থা ধ্বংসের ঘোষণা দিয়েছেলো আজ সরকার তাদের রেলের জায়গা বরাদ্দ দিচ্ছে। অর্থ সহায়তা দিচ্ছে।’
এই তিনজন ছাড়াও আনসারুল্লাহর খোলা চিঠিতে আরিফ জেবতিক, আজম খান ও মারুফ রসুল’র নাম উল্লেখ রয়েছে।