কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজে হচ্ছে কি
কক্সবাজার প্রতিবেদকঃ
কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজে সিলেটি বালির পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে সামুদ্রিক নোনা বালি। ফলে নির্মিতব্য বিমানবন্দরের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া উপকূলবর্তী সমুদ্র থেকে অবাধে বালি উত্তোলন করায় হুমকির মুখে বিকল্প সুন্দরবন খ্যাত ‘প্যারাবন’।সিলেটি বালির পরিবর্তে লবণাক্ত সামুদ্রিক বালি ব্যবহার করায় কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজের গুণগতমান ও স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লবণাক্ত বালি ব্যবহারের কারণে যে কোনো স্থাপনার নোনা ধরে যায়। ফলে তা অচিরেই খসে পড়ে বা আলগা হয়ে যায় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ড্রেজার বসিয়ে বাঁকখালী নদীর মোহনা, মহেশখালী চ্যানেল ও নাজিরার টেক সমুদ্র এলাকাসহ প্রতিবেশ সংকটাপন্ন বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে সামুদ্রিক বালি। উত্তোলিত বালি পাইপ লাইনের মাধ্যমে স্থলভাগে নিয়ে আসা হচ্ছে। ১০ চাকার বিশালাকার ট্রাকে করে এসব বালি রাত-দিন পরিবহন করা হচ্ছে। বালিমিশ্রিত পানির সঙ্গে উঠে আসছে সামুদ্রিক নানা প্রাণী। ফলে ধ্বংস হচ্ছে খনিজ সম্পদ, জীবসম্পদ, মৎস্য, চিংড়ি, শামুক, ঝিনুক, ডলফিন, কাকড়া, সি-উইড, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী, এনাড্রস জাতের প্রাণী, ক্যাটাড্রমাস প্রজাতি, সেডেন্টারি প্রজাতি, বিভিন্ন জাতের প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজনন-আবাসস্থল।
কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও উন্নয়নকাজের জন্য মনোনীত কোরিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনিশ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন, সিউকে ওয়াং ডেভেলপমেন্ট কোং লিমিটেড, হ্লা কর্পোরেশন লিমিটেড জেভি ও এদের সহযোগী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার হোসেন লিমিটেড জয়েন্ট ভেঞ্চারে বিমানবন্দর উন্নয়নের কাজ করছে।
টেন্ডার ও ওয়ার্ক পারমিটে সিলেটি পাথর, ছোট নুড়ি পাথর ও সিলেটি বালি ব্যবহারের কথা উল্লেখ থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দেদারছে সমুদ্রের মূল্যবান খনিজ বালি উত্তোলন করছে। সিলেটি বালির পরিবর্তে লবণাক্ত সামুদ্রিক বালি ব্যবহার করায় কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজের গুণগতমান ও স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উত্তর নুনিয়াছড়া সমাজ উন্নয়ন কমিটির সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘জাতিসংঘের জেনেভা কনভেনশন ও জ্যামাইকা কনভেনশনে বাংলাদেশ অন্যতম স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। কোনো দেশের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় এভাবে ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়।’
কক্সবাজার পর্যটন ও পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আহমদ গিয়াস দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘জাতীয় পরিবেশ নীতিমালা অনুযায়ী সমুদ্রে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করা সরাসরি নিষিদ্ধ থাকলেও আইনের কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে সমুদ্রে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করে কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও উন্নয়নকাজ চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লবণাক্ত বালি ব্যবহারের কারণে যে কোনো স্থাপনার নোনা ধরে যায়। ফলে তা অচিরেই খসে পড়ে বা আলগা হয়ে যায়।’
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সাব কন্টাক্টে যারা কাজ করছেন তারা অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান। উনারা জেলা প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় না করেই কাজ করছেন। ইতোমধ্যে তারা ১৫ থেকে ১৬ একর ম্যানগ্রোভ নষ্ট করে ফেলেছেন। ম্যানগ্রোভের ভেতর দিয়ে পাইপ লাইন চালিয়ে এবং নদীর পাড় থেকে বালি উত্তোলন করে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে পুরো পরিবেশ। আমরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে কাজ সাময়িক বন্ধের জন্য নোটিশ করেছি।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্ত দ্য রিপোর্টকে জানান, বালি উত্তোলনের বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের একটি নোটিশ পেয়েছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজটি প্রধানমন্ত্রীর নলেজে রয়েছে। সামুদ্রিক বালিগুলো কেবল জমি ভরাটের জন্য উত্তোলন করা হচ্ছে।
কক্সবাজার খনিজ বালি আহরণ কেন্দ্রের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন দ্য রিপোর্টকে জানান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতিমালা অনুযায়ী খনিজ সম্পদ ও সামুদ্রিক খনিজ বালি পারমাণবিক শক্তি কমিশন ছাড়া আর কেউ উত্তোলন ও ব্যবহার করতে পারবে না। জনস্বার্থ ও দেশের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি করে সামুদ্রিক প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।