১৫ মার্চের মধ্যে ভাড়াটিয়াদের তথ্য চায় পুলিশ’
পক্ষকাল ডেস্ক : পুলিশকে তথ্য দিলে কেউ হয়রানির শিকার হবেন না বলে আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেন, আইন প্রয়োগে পুলিশকে সহায়তা করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যখনই কোনো বাড়িতে অপরাধ ঘটবে, তখনই ওই জায়গার মালিক, বাড়ির মালিক দায় এড়াতে পারে না। আপনি বাড়িভাড়া দিবেন অথচ তাদের সম্পর্কে কিছুই জানবেন না, তা হতে পারে না। অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া, অপরাধীকে অর্থায়ন করা অপরাধ। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ফরম পূরণ না করলে ওই বাড়িতে কোনো অপরাধ হয় তাহলে তার জন্য ওই বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আইনি জাল থেকে মুক্তি পাবেন না।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, নাগরিকদের যে তথ্য সংগ্রহ করে তা সুরক্ষিত থাকবে। এ দিয়ে কেউ বিড়ম্বনার শিকার হবেন না। অপ্রিয় হলেও সত্য, মানুষ পুলিশকে বিশ্বাস করতে চায় না। কারণ তাদের সঙ্গে আমাদের প্রকৃত যোগাযোগ নেই। তবে আমরা যদি প্রতিটি কাজে মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারি তাহলে এই দূরত্ব কমে আসবে। আমরা বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ ও নাগরিকদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করছি। নিরাপত্তার জন্য এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই তথ্য আর কেউ পাবে না। অন্য কোনো কাজে এই তথ্য ব্যহৃত হবে না। নাগরিকদের এসব তথ্য সুরক্ষিত থাকবে। এ দিয়ে কেউ বিড়ম্বনার শিকার হবে না। বিট পুলিশিংকে কাজে লাগিয়ে ঢাকা মহানগরীকে অপরাধমুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে। তাই নগরবাসীকে অনুরোধ করছি, হয়রানি নয় সহযোগিতার জন্য ভাড়াটিয়ার কাছে তথ্য চাই। সেই সঙ্গে দোকান মালিক, ভবন মালিক ও অন্যান্য স্থাপনার মালিকদেরও তথ্য নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এসব সহযোগিতা চাই নগরবাসীর কাছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর সকল ভাড়াটিয়াকে ফরম পূরণ করে তথ্য দিতে হবে। প্রতিটি থানায় ৩টি থেকে ৯টি পর্যন্ত বিট করা হয়েছে। অপরাধের ধরনের ওপর নির্ভর করে বিট বাড়ানো হয়েছে। ডিএমপিতে এখন পর্যন্ত ২৮৭টি বিট গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি বিটের ইনচার্জ হিসেবে থাকবে একজন এসআই মানের পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য থাকবে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে এসব বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে জনবান্ধবে পরিণত করা হবে। এতে জনগণ ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব কমে আসবে।
কমিশনার বলেন, প্রতিনিয়ত মানুষ এসে যত্রতত্র বাসা ভাড়া নিয়ে বাস করছে। অপরাধের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, বিট পুলিশ না করে উপায় ছিল না। এর মাধ্যমে কার বাড়ি, কে ভাড়াটিয়া, কার দোকান এবং কার স্থাপনা সবই জানা যাবে। এলাকায় নতুন কেউ এলেও তাকে সহজে চেনা ও জানা যাবে। এছাড়া বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক অপরাধও মুক্ত করা হবে। যেমন, বাল্যবিয়ে, যৌতুক প্রথা, অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে কাজ করা হবে। সম্প্রতি মিরপুর, বাড্ডার সাতারকুল, মোহাম্মদপুর ও দক্ষিণ খান এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গিরা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করেছে। বিট পুলিশিং কাজ করার ফলে জঙ্গিরা নতুন করে এ রকম কোনো পরিকল্পনা করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে থানা পুলিশকে তথ্য দিতে হবে। পুলিশ তখন তার নাম ডাটাবেজ থেকে কেটে দেবে। আবার নতুন ভাড়াটিয়া এলে তার নাম এন্ট্রি করা হবে। সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, পেশাজীবীসহ সকল মানুষের কাছে বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে সহযোগিতার আহ্বান জানাই। আমাদের ব্যর্থতা রয়েছে স্বীকার করি। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করছি। পুলিশকে তথ্য দিয়ে কেউ বিড়ম্বনার শিকার হবে না। এটুকু নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এ রকম কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।