দুই আসামি বিএনপির শীর্ষ দুই পদে: হাসিনা
পক্ষকাল ডেস্কঃ
ঐতিহাসিক সাতোই মার্চ উপলক্ষে সোমবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভায় একথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপির কাউন্সিলকে ‘নাটক’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “কাকে নির্বাচিত করল? দুজনই আসামি, একজন এতিমের টাকা চুরি করার মামলার আসামি, আরেকজন তো ২১ অগাস্ট মামলার পলাতক আসামি, তার নাম ইন্টারপোলে ওয়ান্টেড তালিকায় আছে।
“তাহলে এই দল আর কী দেবে?”
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাঁচটি মামলা বিচারাধীন। তার ছেলে তারেক ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় হুলিয়া নিয়ে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আরও অসংখ্য মামলা রয়েছে।
জিয়াউর রহমানের গড়া দল বিএনপির আসন্ন কাউন্সিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারপারসন ও জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন তার স্ত্রী খালেদা ও ছেলে তারেক।
অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর জিয়ার রাজনৈতিক দল গঠনের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর দল মানুষকে কী দেবে? তারা এদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করছে।”
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতা নিয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিতে জিয়ার পদক্ষেপও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
“পঁচাত্তরের পর সব বদলে গেল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাল্টে গেল। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল, তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। যারা কারাগারে বন্দি ছিল, তাদের মুক্ত করে দেয় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া।”
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার হয়েও জিয়া পরে পাকিস্তানের পক্ষেই কাজ করে গেছেন বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
“জিয়া পরাজিত শক্তির দালালি করে গেছে।”
২০১৫ সালের প্রথম তিন মাস বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পেট্রোল বোমা হামলায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে শতাধিক মানুষের মারা যাওয়ার বিষয়টিও আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
“কেন এই মানুষ পোড়ানো হল? খালেদা জিয়াকে এর জবাব জাতির কাছে দিতে হবে। এরও বিচার বাংলার মাটিতে হবে।”
“উনার আত্মা পেয়ারে পাকিস্তানে পড়ে থাকে। উনি পাকিস্তানে চলে গেলেই পারে। ওনার জন্ম ভারতে আর প্রিয়স্থান পাকিস্তান।”
পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনা থেকে বাঙালিদের মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার দিনটিতে তার দলের এই জনসভার মঞ্চের মাইক থেকে সকাল থেকে বাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম- আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
তার ওই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। আর দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র লড়াইয়ের পথ ধরে আসে স্বাধীনতা।
সেদিন বাবার সেই ভাষণ মাঠে বসে শোনার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ ছুটে এসেছিল। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে বৈঠা। তারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ শুনতে এসেছিল, বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিয়েছিলেন।”
জাতির জনকের সেই ভাষণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে তা ১২টি ভাষায় ভাষান্তরের তথ্যও জনসভায় জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়তে সকলের সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে আদর্শে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। সে আদর্শে দেশ গড়ে তুলতে হবে।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের রানার্স আপ হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ফাইনালে গেছি। আরও দূরে যাব। এখন বাঙালিকে নিয়ে সকলে চিন্তা করে।”
সাতোই মার্চের ভাষণের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জানান, যেখানে ৭ মার্চের জনসভামঞ্চটি ছিল, সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে। এছাড়া মিত্র বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানটিতেও স্মৃতিস্তম্ভ হবে।
তিনি বলেন, “নতুন প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারে, সেজন্য শিশু পার্ক স্থানান্তর না করেই সেখানেই এই দুটি স্তম্ভ তৈরি করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিশু পার্ক থাকবে। শিশুরা যেন ইতিহাস জানতে পারে।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই জনসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুল-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জনসভায় বক্তব্য দেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, এ কে এম রহমতুল্লাহ, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা আবু কাওসার, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইনও সমাবেশে বক্তব্য দেন।