সোমবার, ৭ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » রাজনীতি » বিএনপির শীর্ষ দুই পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত খালেদা-তারেক
বিএনপির শীর্ষ দুই পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত খালেদা-তারেক
ডেস্ক রিপোর্ট ঃ
শীর্ষ এই দুই পদে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় রোববার দুজনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান, সাবেক স্পিকার মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার।
বিএনপি গঠনকারী জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার এক বছরের মধ্যে রাজনীতিতে নেমেই দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদ নিয়েছিলেন খালেদা।
তখন বিএনপির চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ ১৯৮২ সালে বিএনপি হটিয়ে ক্ষমতা দখল করলে সাত্তারের অসুস্থতার মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের পদ নিয়ে দলের হাল ধরেন খালেদা।
তারপর ১৯৮৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা। সেই থেকে তিনি এই পদে রয়েছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পর দুই বার তার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে বিএনপি।
জিয়া-খালেদার বড় ছেলে তারেক বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এক যুগ আগে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েই দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হন। তারপর ২০০৯ সালের কাউন্সিলে জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পদোন্নতি ঘটে তার।
জরুরি অবস্থায় গ্রেপ্তার এবং জামিনে মুক্তির পর ডজন খানেক মামলা মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় গত কাউন্সিলে বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ পদে আসেন তারেক, যাকে ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি মনে করেন দলটির কর্মীরা।
সাত বছর পর এবার বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রথমে চেয়ারপারসন ও জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়।
ত্রিশোর্ধ্ব যে কোনো চাঁদাদাতা সদস্যের সুযোগ থাকলেও ২ মার্চ মনোনয়নপত্র সংগ্রহের নির্ধারিত দিনে দুই পদে খালেদা ও তারেক ছাড়া আর কেউ মনোনয়নপত্র না নেওয়ায় তাদের পুনর্নির্বাচিত হওয়াটা স্পষ্ট হয়ে যায়।
৪ মার্চ দুজনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়। বাছাইয়ের পর সিদ্ধান্ত জানাতে দুদিন পর বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের অপরাপর সদস্যদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জমিরউদ্দিন সরকার।
তিনি বলেন, “চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে জন্য যথাক্রমে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান একক বৈধ প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন কমিশন বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারম্যান পদে এবং তারেক রহমানকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে আগামী তিন বছরের জন্য নির্বাচিত ঘোষণা করছে।”
নির্বাচনের এই ফলাফল চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী ১৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে তোলা হবে বলে জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশনের সদস্য হারুন আল রশীদ, সদস্য সচিব আমীনুল হক, রিটার্নিং কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খান, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল মান্নানও সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।
খালেদার মনোনীত নির্বাচনী এজেন্ট যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং তারেক মনোনীত নির্বাচনী এজেন্ট যুগ্মমহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানও উপস্থিত ছিলেন তখন।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কার্যালয়ে উপস্থিত দলের নেতা-কর্মীরা ‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান স্বাগতম’ বলে স্লোগান তোলেন, মিষ্টিও বিতরণ করেন তারা।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে করমর্দন করে শুভেচ্ছা জানান।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর সংসদ থেকে ছিটকে পড়ার পর আন্দোলন চালিয়েও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে ব্যর্থ বিএনপি যখন কঠিন সময় পার করছে, তখন এই কাউন্সিল করে দলকে চাঙা করার আশায় আছেন দলটির নেতারা।
বিএনপি ‘ভুল পথে’ চলছে দাবি করে নেতৃত্বের সমালোচনা করে জিয়াউর রহমানের ভাই আহমেদ কামাল নতুন দল গঠনের ঘোষণা দেওয়ার একদিনের মধ্যে তার ভাবি ও ভাতিজা শীর্ষ দুই পদে পুনর্নির্বাচিত হলেন।
খালেদার নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় তার ভাই-বোন দলের বিভিন্ন পদ এবং মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য হলেও জিয়া পরিবারের কাউকে দেখা যায়নি কোনো পদে কিংবা দায়িত্বে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, সামরিক শাসক জিয়ার উদ্যোগে ক্যান্টনমেন্টে গড়া দল বিএনপির জনভিত্তি গড়ে দেওয়ার কাজটি খালেদার নেতৃত্বেই ঘটে।
তবে টানা ৩২ বছর বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসা খালেদার সন্তান তারেকের প্রতি অতিরিক্ত স্নেহকে ‘দুর্বলতা’ হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যেমন দেখছেন, তা দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতার মুখ দিয়েও বেরিয়েছে।
২০০১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তারেক নিয়ন্ত্রিত হাওয়া ভবন সরকার পরিচালনার ‘দ্বিতীয় কেন্দ্র’ হয়ে উঠেছিল। আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষায়, তখন হাওয়া ভবনের ইশারা ছাড়া কোনো কাজ হত না।
পিতৃভূমি বগুড়ার গাবতলী থানা কমিটির প্রাথমিক সদস্য পদ নিয়ে রাজনীতিতে পা রাখা তারেক জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব হিসেবে সারাদেশে যে প্রতিনিধি সম্মেলন করেছিলেন, তার প্রশংসা করেন দলটির তৃণমূল নেতারা।
২০০৮ সালে লন্ডন যাওয়ার আগে হাসপাতালে তারেকের পাশে খালেদা জিয়া
২০০৮ সালে লন্ডন যাওয়ার আগে হাসপাতালে তারেকের পাশে খালেদা জিয়া
এরপর রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির মধ্য দিয়ে সেনামদদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর শুরুতেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তারেক। পরে খালেদাসহ বিএনপির অন্য অনেক নেতা গ্রেপ্তার হন, বন্দি হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারাও।
আটকাবস্থায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার তারেক দেড় বছর পর ২০০৮ সালে উচ্চ আদালত থেকে সবগুলো মামলায় জামিন নিয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডন যান। সেই থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।
এর মধ্যেই ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে পঞ্চম কাউন্সিলে ‘জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি করে ওই পদে তারেককে নির্বাচিত করেন দলটির কাউন্সিলররা।
লন্ডনে থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সক্রিয় রয়েছেন তারেক। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয়ে কিছু বিতর্কিত বক্তব্য ধরে তার বক্তব্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাই কোর্ট।
তারেক দেশে ফিরলেই বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিএনপিকর্মীদের আশা; তবে তিনি কবে ফিরবেন, আদৌ ফিরবেন কি না, সে বিষয়ে দলটির স্পষ্ট ঘোষণা আসেনি এখনও।