শনিবার, ১২ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » নির্মলেন্দু গুণের শেষকথা ও অসীম সাহার বক্তব্য
নির্মলেন্দু গুণের শেষকথা ও অসীম সাহার বক্তব্য
পক্ষকাল প্রতিবেদক : সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া কবি নির্মলেন্দু গুণের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিষয়টিকে স্বাভাবিক করতে শনিবার সকালে নিজের ওয়ালে ‘স্বাধীনতা পদক : আমার শেষ কথা’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। শুরুতেই তিনি বিষয়টির সঙ্গে সাযুজ্য কবিতার দুটি চরণ দিয়েছেন।
শুরুটা করেন এভাবে-‘বহু বাসনায় প্রাণপণে চাই/বঞ্চিত করে বাঁচালে মোরে।’
এরপর প্রধানমন্ত্রী ও ভক্ত পাঠকের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছেন, ‘আমার স্বাধীনতা পদকের আর দরকার নাই। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ধন্যবাদ আমার প্রকাশ্যে পদক দাবি করার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ লেখকদল। যাদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, একেবারে অনুল্লেখ্য নয়।’
বিষয়টি স্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে কবি আরও লিখেছেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ভিতর দিয়ে জিয়া-প্রবর্তিত রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া, এরশাদ প্রবর্তিত রাজনীতিতে যেভাবে এরশাদ বা রওশন এরশাদ বৈধ হয়েছেন- জেনারেল জিয়া প্রবর্তিত পদকও সেইভাবে বৈধতা লাভ করেছে। সেই কারণে এই পদক গ্রহণে দোষ দেখি না। এই পদক চালুর ইতিহাসটা নব প্রজন্মের অনেকেই জানেন না বলেই সেই ঘটনাটির অবতারণা করেছিলাম।’
ক্ষুব্ধ লেখক-পাঠকের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘যারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে পদকলোভী বলে ধরে নিয়েছেন, তাদের নিশ্চিত ও আশ্বস্ত করতে চাই এই বলে যে, আমার এই পদক চাওয়াটা আমার লোভের প্রকাশ নয়, ক্ষোভের প্রকাশ ছিলো। আমার মৌল চরিত্রবিরোধী এই বিষয়টা কেউ কেউ ধরতে পারেননি। তারা আমাকে অনেকের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন।’
কিছুটা অনুতপ্ত ভঙিমায় তিনি লিখেছেন, ‘আমি তিন বছর আগে সুইডেনে গিয়ে বলেছিলাম, আপনারা দয়া করে আমাকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে আমার বৃদ্ধ জীবনের শান্তি, স্বস্তি ও স্বাধীনতা নষ্ট করবেন না। মনে হচ্ছে, স্বাধীনতা পদক প্রশ্নে স্বদেশেও আমার একই অবস্থানে থাকা উচিত ছিল। একটা ছোট জিনিসের জন্য আপনাদের অনেককে বড় কষ্ট দেওয়া হলো। আমি দুঃখিত। তাই বলে আমার কবিত্বের ওপর আস্থা হারাবেন না। আমার কবিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আপনাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে। আমাকে এড়িয়ে যাওয়া নিজেরই ক্ষতি।’
এদিকে কবি গুণের স্ট্যাটাসের পর কবি অসীম সাহা ফেসবুকে নিজের ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছে, ‘কবি নির্মলেন্দু গুণ স্বাধীনতা পদকের দাবি থেকে সরে এসেছেন। না, তিনি তার বিরুদ্ধমতবাদীদের বিরূপ মন্তব্যের জন্য নয়, এ-নিয়ে বিতর্ক যেন আর বেশিদূর না গড়ায় সে-জন্যে। তিনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আমি মনে করি, সেটাই যথার্থ। তাকে যারা পদকলোভী মনে করে কটু মন্তব্য করেছেন, আক্রমণ করেছেন, এমনকি আমাকেও আক্রমণ করে দুজনকে এক দড়িতে ফাঁসি দিয়ে ফেলেছেন, তাদের অবগতির জন্য জানাই, পদ-পদক কিংবা পুরস্কারের লোভ থাকলে নির্মলেন্দু গুণ বহু আগেই তা অর্জন করতে পারতেন। এটা ছিলো তার প্রতীকী প্রতিবাদ ও অন্তর্বেদনার বহিঃপ্রকাশ। তাকে লোভী হিসেবে বিবেচনা করাটা খুবই আমানবিক ও নিষ্ঠুর বলে আমি মনে করি।’
নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আর আমি যদি এ-সবের ব্যাপারে লোভী হতাম, তা হলে বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য লেখালেখি শুরুর পর ৪৬ বছর আমাকে অপেক্ষা অপেক্ষা করতে হতো না। ২১শে পদক সম্পর্কে আমার বক্তব্যকে বলা যেতে পারে, কবি নির্মলেন্দু গুণের প্রতিক্রিয়ারই প্রতিধ্বনি। আমার যারা পাঠক, কাছের জন, তারা জানেন, কতোটা নির্লোভ থেকে, কতোটা জীবনসংগ্রাম করে, কতোটা ন্যায়, নীতি, আদর্শ, সততা এবং আত্মসম্মান নিয়ে আমি আমার জীবনের এতোগুলো বছর অতিক্রম করে এসেছি। ২১শে পদক কিংবা অন্য কোনো সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য জীবনে আমি কোনো কাজ করিনি, বাকি জীবনও করবো না। নির্মলেন্দু গুণের স্বাধীনতা-পদকের কিংবা আমার ২১শে পদকের দাবি ছিলো নিতান্তই একটি প্রতীকী প্রতিবাদ! এখানে আমাদের ভুল বোঝবার কোনো অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না। নির্মলেন্দু গুণের মতো আমিও বলি, প্রিয় পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী, পুরস্কার ও পদক একেবারে কম পাইনি! সবচেয়ে বেশি পেয়েছি আপনাদের ভালোবাসার পুরস্কার, সেই পুরস্কার থেকে যেন কোনোদিন বঞ্চিত না হই!!’