বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » রাজনীতি » অভিশাপমুক্ত হয়ে উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী
অভিশাপমুক্ত হয়ে উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী
প্রতিবেদক : যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করে বাংলাদেশ ‘অভিশাপমুক্ত হয়ে উন্নয়নের’ পথে অগ্রসর হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনও ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র এখন আর মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারছে না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৬তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু কিশোর দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় শিশু কিশোর সমাবেশে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিশু কিশোর সমাবেশ উদ্বোধন করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি গণমানুষের উন্নয়নের রূপকার বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি সাংবাদিক ডেভিস ফ্রস্টকে এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন, তার সবচেয়ে বড় গুণ আর দোষ কোনটি। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, আমি দেশের মানুষকে ভালোবাসি এটা আমার গুণ। আর দোষ হল, আমি আমার দেশের মানুষকে বড় বেশি ভালোবাসি। দেশের মানুষকে ভালোবাসা, মানুষকে জানা, মানুষের জন্য কাজ করা- এটাই ছিল তার জীবনের স্বপ্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তিনি অত্যন্ত কাছে থেকে দেখেছেন। সাধারণ মানুষের প্রতি তার অনুভূতি ছিল, এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। এদেশের মানুষকে কষ্ট-দুঃখ-দুর্দশা থেকে তাদের মুক্তি দিতে হবে। এদেশের মানুষকে একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে, তাদের শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এটি তিনি ধীরে ধীরে নিজের জীবন থেকে শিখেছিলেন। আর সেই মানুষগুলোর জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছিলেন।’
কারান্তরীণ বাবাকে দেখতে ক্লাস ছুটির পর শেখ হাসিনা ও তার ভাইবোনরা যেতেন জেলগেটে। ছোট ভাই শেখ কামালকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কামাল তখন ছোট। আমি যখন জেলগেটে আব্বা, আব্বা বলে এগিয়ে যেতাম, তখন কামাল আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকত। আমাকে বলত, হাসু আপা তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলে ডাকি?’
বলতে বলতেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে আগত মন্ত্রীদেরও তখন চোখ মুছতে দেখা যায়।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বাবাকে নিয়ে গর্বিত কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ তার জীবনে কত বড় আত্মত্যাগ করতে পারে? তার পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ছিল, কিন্তু সেই ভালোবাসা ছাপিয়ে গেছে দেশের মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা। সেই ভালোবাসাই তাকে প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে এত বড় আত্মত্যাগ করতে। আমরা তার সন্তান হিসেবে গর্বিত যে তিনি এক জীবনে একটি দেশ ও জাতিকে সপরিচয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধু তনয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ ও উন্নত দেশ হবে, সমৃদ্ধ- ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হবে, এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। আমাদের কাজ হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্নকে পূরণ করা।’
পঁচাত্তরের পনের অগাস্ট ও তিন নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের পর দেশকে স্বাধীনতার চেতনা থেকে সম্পূর্ন ভিন্নদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে এমন অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১ বছর বিজয়ের ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত ছিল এদেশের মানুষ। এদেশের মানুষের যে গর্ব করার মতো কিছু আছে, সেটিও তারা জানতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করতে তাদের সেই ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আজ দিন বদলেছে। আমরা সরকারের আসার পর ছেলেমেয়েদের কাছে সেই ইতিহাস তুলে ধরার পরে, এখন তারা বিজয়ের সেই ইতিহাস জানে। আমরা চাই, মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনের দীর্ঘ সংগ্রাম ও বিজয়ের ইতিহাস আমাদের ছেলেমেয়েরা জানবে। তারা জানবে, বঙ্গবন্ধু বিজয়ের পতাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের শিশু ভবিষ্যতের নাগরিক। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণধার। এই শিশুদের মধ্য থেকেই মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী, উচ্চ পর্যায়ে আসীন হতে হবে। তাদেরকে সেভাবে তৈরি হতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশ আমাদের। দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে, লেখাপড়া শিখতে হবে।’
শিশুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘শিশুদের মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষকদের কথা শুনতে হবে। গুরুজনদের মানতে হবে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে, জানতে হবে। তাহলেই ছোট সোনামনিরা দেশকে ভালোবাসতে পারবে, বড় হতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ছেলেমেয়েদের আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা দিয়ে জ্ঞান ও মনন বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছি। প্রতিটি শিশুর মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া আমাদের কর্তব্য।’
সবশেষে তিনি শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করে ভবিষ্যতের জন্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে আহ্বান জানান।