বুধবার, ২৩ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » জেলার খবর | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ভোট গণনাকালে, ৪ জেলায় নিহত ৮
ভোট গণনাকালে, ৪ জেলায় নিহত ৮
পক্ষকাল ডেস্ক ঃ
৭১২টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণের সময় গোলযোগ তেমন না ঘটলেও ভোট গণনার সময় অন্তত চারটি জেলায় সহিংসতায় আটজন নিহত হয়েছেন।
পিরোজপুর, নেত্রকোণা, কক্সবাজার ও সিরাজগঞ্জের চারটি ইউনিয়নে মঙ্গলবার দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে রাতে গণনার সময় এই সংঘাত বাঁধে।
পিরোজপুরে পাঁচজন এবং কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ ও নেত্রকোনায় একজন করে নিহত হন বলে পুলিশকে উদ্ধৃত করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।নবম ইউপি ভোটের প্রথম ধাপে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সারাদেশে ৭১২টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ চলে।
দলীয় প্রতীকে প্রথম অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে গোলযোগ-অনিয়মের কারণে ৬৫ কেন্দ্রে ভোট বন্ধ হলেও বড় ধরনের সহিংসতা ঘটেনি কোথাও।এরপর ভোট গণনা ও ফল প্রকাশের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের খবর আসতে থাকে। পিরোজপুর: মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানিসাফা ইউনিয়নে ভোট গণনার সময় আওয়ামী লীগের সমর্থকরা কেন্দ্র অবরুদ্ধ করে রাখার পর পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হন।ধানিসাফা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু আশ্রাফ জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটসহ নির্বাচনী কর্মকর্তা ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা চলছিল।
“গণনার শেষ পর্যায়ে ফল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে যেতে থাকলে তার সমর্থকেরা কেন্দ্রটি অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় পুলিশ তাদের সরে যেতে বললেও তারা সরেনি।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এবং অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছুড়লে তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।এছাড়া আরও তিনজন বরিশাল নেওয়ার পথে মারা যান বলে পুলিশ কর্মকর্তা আবু আশ্রাফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন।
পরে জেলার পুলিশ সুপার ওয়ালিদ হোসেন জানান, এই ঘটনায় সর্বমোট পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলে এবং দুজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
নেত্রকোণা: খালিয়াজুড়ি ইউনিয়নে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের সময় একজন ‘গুলিবিদ্ধ’ হয়ে মারা গেছেন।
নিহত গোলাম কাওসার (৩৫) ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু ইসহাকের ছোট ভাই।
আদাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, রাত পৌনে ৮টার দিকে একদল যুবক কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়।
এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাওসারকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
কাওসার পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন কি না- এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খান মো. আবু নাসের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনার সময় অন্য কোনো পক্ষ গুলি ছুড়েছে কি না- এমন প্রশ্ন করলেও তিনি ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান।
কারা ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিল- জানতে চাওয়া হলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশ ‘তদন্ত করা হচ্ছে’ বলে এড়িয়ে যান তিনি।
এ সময় এসআই ফজলুল হক নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন বলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জানান।
কক্সবাজার: টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নে ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুটি কেন্দ্রে সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর এক ভাই নিহত এবং ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছন।
রাত ১০টার দিকে মাঝের পাড়া কেন্দ্র ও মুন্ডার ডেইল কেন্দ্রে সংঘাত বাঁধে বলে টেকনাফ থানার ওসি মো. আব্দুল মজিদ জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুন্ডার ডেইল কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে একদল লোক। তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুলিবর্ষণ করে। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়।”
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আতাউর রহমান জানান, পাঁচজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়। এর মধ্যে আব্দুল গফুরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে পথে তার মৃত্যু হয়।নিহত আব্দুল গফুর (৩৫) আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেনের ভাই।অন্যদিকে ভোটের ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মাঝের পাড়া কেন্দ্রে ইউপি সদস্য প্রার্থী নুরুল আমিন ও মোহাম্মদ সেলিমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।স্থানীয়রা জানান, ওই কেন্দ্রে প্রথমে কয়েক ভোটের ব্যবধানে নুরুল আমিনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তা চ্যালেঞ্জ করেন অন্য প্রার্থী সেলিম। পুনঃগণনা শেষে সেলিমকে বিজয়ী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।উভয় পক্ষের লোকজন ব্যালেট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে ওসি মজিদ জানান।সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হন বলে ওসি জানান। সেখানে একজনের মৃত্যুর খবর ছড়ালেও কোনো সূত্রে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সিরাজগঞ্জ: রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নে ফল ঘোষণার পর পরাজিত সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় নিহত হয়েছেন বিজয়ী প্রার্থীর এক স্বজন।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে উজয়ানপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে সহকারী পুলিশ সুপার মোতাহার হোসেন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “জয়ানপুর এলাকায় বিজয়ী ও পরাজিত ইউপি সদস্যের দুগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে এক নারীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি।”
নিহত নোনাই বেগম (৫৫) ওই এলাকার ইনসাব আলীর স্ত্রী। এই নারী সম্পর্কে বিজয়ী প্রার্থী নবাব আলীর শ্বাশুড়ি হন।
ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়া সিলিং ফ্যান প্রতীকের প্রার্থী নবাব আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরাজয় মেনে না নিয়ে সামিদুল ইসলামের (ফুটবল) লোকজন দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার কর্মী-সমর্থক ও আত্মীয়-স্বজনদের উপরে হামলা চালায়।”
হামলাকারীদের লাঠির আঘাতে নোনাই বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত হন আরও ৮/৯ জন। এদের মধ্যে আব্দুল মালেক নামে একজনকে বগুড়ায় পাঠানো হয়েছে।