ধোনিদের জেতাতে সব চেষ্টাই করছে ভারত-আইসিসি
ডেস্কঃ : আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) আয়োজিত কোনো গ্লোবাল বা বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আয়োজক দেশের কি খুব বেশি প্রভাব খাটানোর সুযোগ থাকে? সচরাচর থাকে না। আয়োজক দেশ হিসেবে কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় বটে, কিন্তু পূর্ণ প্রভাব খাটানোর সুযোগ থাকে না। তবে আয়োজক দেশটি যদি ভারত হয় তাহলে ভিন্ন কথা! নিজ মাটিতে আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টেও ভারতীয়রা যথেষ্ট প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা রাখে। এমনকি ম্যাচের পিচটা কেমন হবে তাও নির্ধারণ করে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে তাদের। কেন? কারণটা বাণিজ্যিক। ক্রিকেট তো এখন আর কেবল খেলা নয়, সেখানে আর্থিক তথা বাণিজ্যিক বিষয়টাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর ভারত ছাড়া আইসিসিকে সফল বাণিজ্য উপহার দিতে পারবে এমন দেশ কোথায়? চলতি টি২০ বিশ্বকাপে ভারতকে ফাইনাল পর্যন্ত টেনে নিতে তাই যেন আইসিসি ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিসিআই) মরিয়া চেষ্টা করতেই দেখা যাচ্ছে।রবিবার রাতে আসরের সুপার টেন পর্বে গ্রুপ-২’-এর খেলায় মুখোমুখি হবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। দুই দলের জন্যই এটা বাঁচা-মরার লড়াই। যে দল জিতবে তারা হাতে পেয়ে যাবে সেমিফাইনালের টিকিট। আর পরাজিত দলকে ধরতে হবে দেশের পথ। স্বাভাবিকভাবেই তাই ভারত ও অস্ট্রেলিয়া এই ম্যাচ জিততে মরিয়া। তবে দলীয় শক্তির বাইরেও এই ম্যাচে ভারতের বাড়তি জ্বালানি হিসেবে থাকছে বিসিসিআই ও আইসিসির সমঝোতার শক্তি।
বিষয়টা একটু খোলাসা করেই বলা যাক। ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে মোহালির পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে। সচরাচর এই মাঠটি কুইক পিচ হিসেবেই পরিচিত। পেসাররা সুবিধা পেয়ে থাকেন এখানে। আর বিশেষভাবে তৈরি করা হলে স্পিনারদের জন্য তা হয়ে ওঠে স্বর্গতুল্য। তবে আইসিসির ইভেন্টে পিচগুলোকে সাধারণত স্পোর্টিং করেই তোলা হয়। যে কারণে এবারের পুরুষ ও প্রমীলা টি২০ বিশ্বকাপে মোহালির এই স্টেডিয়ামে বেশ রান উঠতেই দেখা গেছে।
পুরুষদের খেলায় আসরের দুটি ম্যাচ হয়েছে এই মাঠে। এর একটিতে নিউজিল্যান্ড ১৮০ রান তুলেছিল। জবাবে পাকিস্তান ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও ১৫৮ রান করতে সক্ষম হয়েছিল। অপর ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষেই অস্ট্রেলিয়া তুলেছিল ১৯৩ রান। জবাবে পাকিস্তান করেছিল ১৭২ রান। প্রমীলা বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মেয়েরা তুলেছিল ১৭৭ রান। কিন্তু রবিবার রাতের ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে দেখা মিলতে পারে উল্টো চিত্র।
রান খরার ম্যাচ হতে পারে এটি! কারণ, মহেন্দ্র সিং ধোনির দলকে সেমিফাইনালে টেনে নিতে পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের পিচটিকে গোপনে স্পিন স্বর্গ বানিয়ে তুলেছে বিসিসিআই। খোদ ভারতের মিডিয়াগুলোতেই প্রকাশিত হয়েছে সেই সংবাদ।
বিসিসিআইয়ের একটি বেনামি সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, ভারতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্টের অনুরোধে মোহালির উইকেট পরিবর্তন করা হয়েছে। ওই সূত্রটি হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছে, ‘পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের মতোই একটি উইকেটে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই বিষয়ে ভারতীয়রা খুশি হতে পারেনি এবং পিচ পরিবর্তন করার জন্য তারা অনুরোধ জানিয়েছে। বর্তমানে তারা যে ধরনের পিচ পছন্দ করেছে তা স্পিনারদের সহায়তা করবে এবং সেখানে বলের অনিয়মিত বাউন্স দেখা যেতে পারে।’
বলে রাখা ভালো, গ্লোবাল ইভেন্টগুলোতে ম্যাচের উইকেট তৈরি করেন আইসিসির নিজস্ব পিচ কিউরেটররা। স্বাধীনভাবেই কাজ করেন তারা। কিন্তু এবারের টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের ম্যাচগুলোতে উপরের আদেশ-নির্দেশ-অনুরোধ মেনে চলতে হচ্ছে তাদের। আসরে ভারতের আগের ম্যাচগুলোতেও তেমনটাই দেখা গেছে।
কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে পাকিস্তান আগে ব্যাট করে ২০০ রানের বেশি করেছিল। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে সেই পিচেই ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমে ১১৮ রান তুলতেই প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল পাকিস্তানিদের! একই ভাবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচেও স্পিননির্ভর পিচ তৈরি করে খেলতে নেমেছিল ভারত। যদিও সেই ম্যাচে নিজেদের জালে নিজেরাই ধরা পড়েছিল ভারতীয়রা। নিউজিল্যান্ডের দুই স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ও ইস সোধির ফাঁদে পড়ে মাত্র ১২৬ রান তাড়া করতে গিয়ে ৭৯ রানে অলআউট হয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। বাংলাদেশের বিপক্ষেও ভারতের ম্যাচটা হাই স্কোরিং হয়নি। ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচও তাই বিগ স্কোরিং না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
প্রতিবছর আইসিসির যে আর্থিক লাভ হয়ে থাকে, এর সিংহভাগই হয় ভারতের কল্যাণে। তাই যেকোনো টুর্নামেন্টে ভারত যত দূর যাবে, তত বেশি লাভ গুনতে পারবে ক্রিকেটের বিশ্ব সংস্থাটি। অন্যদিকে, ভারতের দ্রুত বিদায় মানে আইসিসির ক্ষতি। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে যেমনটা ঘটেছিল। সেবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতীয়দের। আইসিসি তাই ভারতীয় দলকে এবারের বিশ্বকাপেও যত দূর সম্ভব টেনে নিতে চায়। আর বিসিসিআইও সে ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারছে অবলীলায়।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ধোনিদের জেতাতে তাই সাধ্যের সবটুকুই করছে এই দুই সংস্থা। যদিও তাতে করে ধোনিবাহিনীর শেষ রক্ষা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তো থাকছেই! তবে ধোনিরাও এই ম্যাচ জিততে মরিয়া। কেননা, ম্যাচ হারলে তাদের