কবর থেকে তনুর লাশ উত্তোলন
পক্ষকাল ডেস্কঃ : দাফনের ১০দিন পর বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কবরস্থান থেকে ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।সোমবার মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, সুরতহাল তৈরি ও পুনরায় ময়নাতদন্ত করতে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন কুমিল্লার একটি আদালত। জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি একেএম মনজুর আলমের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।
লাশ উত্তোলনের সময় ঢাকা সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম, কুমিল্লারা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন, লাশ উত্তোলনের জন্য দায়িত্ব পাওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কুমিল্লা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ও বড় ভাই নাজমুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
কবরস্থানের পাশে মাঠে একটি সামিয়ানা টানানো হয়েছে। সেখানে প্রশাসনের লোকজন অবস্থান করেন। সকাল থেকে কবরস্থানে পাশে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। তাদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের বেগ পেতে হয়। যাত্রাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে এসে তনু হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করে।
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, তনু হত্যার সঠিক বিচারের জন্য লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে বলে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। আমি মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার চাই।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, লাশ উত্তোলন করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হবে। অধিকতর আলামত সংগ্রহের পর সেখান থেকে আজই আবার লাশ এনে আগের কবরে দাফন করা হবে।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে গত ২১ মার্চ রাতে তনুকে দাফন করা হয়। আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্তের জন্য আলামত সংগ্রহের জন্য আজ তার লাশ তোলা হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে সোহাগীর কবর পাহারা দিচ্ছে বাঙ্গরা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল।
এদিকে, তনু হত্যার ঘটনায় গত ২১ মার্চ দায়ের করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও সেনানিবাস ফাঁড়ির কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামকে। গত শুক্রবার হত্যা মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মনজুর আলম ওই মামলা তদন্ত করছিলেন। সর্বশেষ গতকাল মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার শাহ্ আবিদ হোসেন বলেন, থানা পুলিশ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকে। স্পর্শকাতর এ মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেই সিআইডিতে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের সীমানাসংলগ্ন এলাকায় সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এরই মধ্যে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তনুর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী প্রথম থেকেই সব তদন্তকারী সংস্থাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা আন্তরিকতার সঙ্গে প্রদান করছে। অথচ কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী সম্পর্কে অনুমাননির্ভর বক্তব্য প্রদান ও প্রচার করছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে, যা কাম্য নয়। সোহাগী জাহান তনুর পিতা মো. ইয়ার হোসেন বিগত ৩০ বছর যাবৎ কুমিল্লা সেনানিবাস ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের একজন বেসামরিক কর্মচারী, যিনি সেনাপরিবারেরই সদস্য এবং তনু কুমিল্লা সেনানিবাসে বড় হয়েছেন, ও আমাদেরই সন্তান। তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে প্রতিটি সেনাসদস্য দারুণভাবে ব্যথিত ও মর্মাহত। সেনাবাহিনী জনসাধারণেরই অংশ এবং দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ ব্যাপারে সবার দায়িত্বশীল বক্তব্য/প্রচার একান্তভাবে কাম্য। সেনাবাহিনীও প্রত্যাশা করে দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তদন্ত প্রক্রিয়ায় আন্তরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে।’