তনু হত্যাকাণ্ড: যা ঘটেছে ক্যান্টনমেন্টেই ঘটেছে!
পক্ষকাল ডেস্কঃ ২০ মার্চ তনু সেনানিবাসের ভেতরে ছিলেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেনানিবাসের বাসা থেকে বের হন টিউশনি করতে। বাসা থেকে টিউশনি করা বাসার দূরত্ব ২শ’ গজ। অন্যদিন ২টি টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরতেন রাত ৮টা সাড়ে ৮টার মধ্যে। কিন্তু সেদিন রাত সোয়া ১০টায়ও তিনি বাসায় ফেরেননি। সাড়ে ১০টায় বাসা থেকে ১০০ গজ দূরে জঙ্গলে তনুর লাশ পান তার বাবা।
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে কাজ সেরে রাত সোয়া ১০টায় বাসায় ফিরি। তনুর মা বলল,তনু বাসায় ফেরেনি। সে কখনও বাসায় ফিরতে দেরি করে না। টর্চলাইট নিয়ে মেয়ের খোঁজে বের হই।বাসার কাছেই একটি কালভার্ট আছে। কালভার্টের পাশে দেখি তনুর একটি জুতা পড়ে আছে। কয়েক হাত দূরে ওর মোবাইল ফোনটা পড়ে থাকতে দেখি। আর একটু পরে উঁচু জায়গায় জঙ্গলের মধ্যে তনুকে পেলাম। মাথার নিচটা থেঁতলে আছে। ওর মুখে রক্ত আর আঁচড়ের দাগ। কয়েকজন প্রতিবেশী মিলে ওকে সিএমএইচে (সামরিক হাসপাতাল) নিয়ে যাই। তনু দুইটি টিউশনি করত। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে বাসা থেকে বের হতো। ওর মা আনোয়ারা বেগম এগিয়ে দিত। রাতে ফেরার পথেও ওর মা এগিয়ে নিয়ে আসতো। যেখানে টিউশনি করতো তার দূরুত্ব বাসা থেকে ২শ’ গজ। হত্যাকাণ্ডের স্থল বাসা থেকে একশ’ গজ দূরে। তিনি আরও বলেন, সেনানিবাসের মতো নিরাপদ এলাকা, তা ছাড়া বাসা থেকে দুইশ’ গজ দূরে,তাই রাতে তনুর বাসায় ফেরা নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা ছিলো না।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবদুর রব বলেন, ২১ মার্চ সকালে আমরা সিএমএইচ থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করি। তনুর লাশে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন ছিলো। ২১ মার্চ তনুর বাবা কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সেনানিবাসের ভেতর থেকে তিনি নিজে লাশ উদ্ধারের কথা উল্লেখ করেছেন। আমরা সেনানিবাসের ভেতরে হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করেছি। ডিবিসহ কয়েকটি টিম কাজ করছে,আশা করছি শিগগির খুনিরা শনাক্ত হবে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম জীবন জানিয়েছেন, আনন্দ ভ্রমণ শেষে ১৮ মার্চ রাতে তনু আমাদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরেছিলো। ওই দিনই তার সঙ্গে আমাদের শেষ দেখা। ২০ মার্চ রাতে সেনানিবাসের ভেতরে তনু খুন হয়েছে। এ সুরক্ষিত এলাকায় বাইরের কেউ যাওয়ার সুযোগ নেই। খুনি যেই হোক আমরা তার সাজা চাই।
এদিকে ২৪ মার্চ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে দেওয়া ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়,গত ২০ মার্চ সন্ধ্যায় টিউশনি শেষে বাড়ি ফেরার সময় কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরীণ আবাসিক এলাকায় তনুকে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা অমানুষিক নির্যাতন করে, ধর্ষণ করে এবং তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার গলা কেটে ফেলে। ১২ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন কোয়ার্টার সংলগ্ন পাওয়ার হাউজ এলাকার কালভার্টের কাছে তার অর্ধনগ্ন লাশ ফেলে যায়। এই জঘন্যতম অপরাধের আলামত ও প্রমাণাদি নষ্ট করার জন্য নরপশুরা তার মৃতদেহের মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলে, পরনের পোশাক ছিঁড়ে ফেলে এবং তার চেহারা নষ্ট করে দেয়। আমরা পরদিন তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে তার বাসায় যাওয়ার উদ্যোগ নিলে কতিপয় সেনা সদস্য ক্যান্টনমেন্ট গেইটে এবং তার বাসায় যাবার রাস্তায় আমাদের বাধা দেয় এবং হয়রানি করে। তারা আমাদেরকে নিহত তনু সম্পর্কে অশালীন কথা বলে। আমাদের ধারণা হচ্ছে, এই ঘটনায় কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য জড়িত ছিল। কেননা, সেনানিবাসের মত সুরক্ষিত ও নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় সন্ধ্যা ৭টায় সেনা সদস্য ব্যতীত বাইরের সন্ত্রাসীরা ঢুকে ২০ বছর বয়সী একজন মেয়েকে অপহরণ করে তাকে ধর্ষণপূর্বক হত্যা করে তার লাশ টেনে হিঁচড়ে ফেলে যাওয়ার সুযোগ ও সাহস পাবে বলে আমরা মনে করি না। যদি বাইরের কোনও সন্ত্রাসী এই অপরাধ করে থাকে তাহলে তারা নিশ্চিতভাবেই সেনানিবাসের কোন সদস্যের পরিচিত ও মদদপুষ্ট।
সেনানিবাসের এই স্থান থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়
সেনানিবাসের এই স্থান থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়
২৫ মার্চ সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তনু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল ও পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন। এসময় ডিজিএফআই, বিডিআর, র্যাব ও এনএসআই’র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডিজিএফআই কর্মকর্তা কর্নেল সাজ্জাদ হোসেনের উদ্দেশ্যে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিলো-সেনানিবাসের ভেতরে তনুর খুন নিয়ে সেনানিবাসের বক্তব্য কি? তখন তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে সবার সামনে জেলা প্রশাসকের কাছে বলেন-এ বিষয়ে আমার কথা বলার সুযোগ নেই।
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন