মশালের ‘জ্বালায়’ ইসি
পক্ষকাল ডেস্কঃ দুই মাস আগে যখন ইউপি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়,তখন জাসদের প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতা সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে দিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছিলেন সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
এরপরও বিভেদ দেখা দেয় নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলটিতে। কাউন্সিলে কমিটি হয়েছে দুটি। একটির সভাপতি ইনুর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। অন্যটিতে আম্বিয়া সভাপতি হন, তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান।
প্রথম দুই পর্বের ইউপি ভোটে না হলেও তৃতীয় পর্বে এসে সমস্যায় পড়েছে ইসি। মশাল প্রতীক কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে এই সমস্যাকে ‘জ্বালা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থার এক কর্মকর্তা।
ইতোমধ্যে ইনু চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, জাসদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষমতা এখন সাধারণ সম্পাদক শিরীনের উপর। একই ধরনের চিঠি দিয়ে একই ক্ষমতা নাজমুলের উপর বলে ইসিকে জানিয়েছেন আম্বিয়াও।
একটি নির্বাচনী প্রতীক শুধু একটি দলেরই থাকে, সেটাই বিধান। সে কারণে আগে জাসদ নামে একাধিক দল থাকলেও ভোটে অংশ নেওয়ার সময় ইনু নেতৃত্বাধীন অংশই তাদের আদি প্রতীক মশাল প্রতীক পেয়েছিল।
আ স ম রব এবং শাজাহান সিরাজ নেতৃত্বাধীন দল জাসদ নামে থাকলেও চরকা (একবার পদ্মফুল) এবং মাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিতে হয়েছিল। এবার ইনু নেতৃত্বাধীন অংশে ভাঙন দেখা দেওয়ার পর দুই অংশই নিজেদের ‘প্রকৃত’ জাসদ দাবি করে মশাল প্রতীক চাইছে।ইউপি ভোটের প্রথম দুই ধাপে জাসদের প্রার্থীদের আম্বিয়ার প্রত্যয়নেই মশাল দিয়েছিল ইসি। তার মধ্যে চারজন চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীও হয়েছেন।তৃতীয় ধাপে ভোট হবে ২৩ এপ্রিল। তার আগে জাসদে ভাঙন দেখা দেওয়ায় শিরীন ও নাজমুল উভয়ের প্রত্যয়ন জমা পড়েছে ইসিতে। তৃতীয় ধাপে ৬২১ ইউপিতে জাসদের ২৮ জন প্রার্থী রয়েছেন বলে ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান।শিরীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এখন প্রত্যয়নের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তৃতীয় ধাপে আমার স্বাক্ষর করা প্রত্যয়নে ২৭ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।”অন্য অংশের কার্যকরি সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, “আম্বিয়া সভাপতি হওয়ায় তৃতীয় ধাপ থেকে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি করা হয়েছে। তার প্রত্যয়নে অন্তত ৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।”এখন কী হবে- জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসি কর্মকর্তা বলেন, “এটা একটা জ্বালা। কমিশন বসে এখন সিদ্ধান্ত নেবে।”ইসির যুগ্মসচিব জেসমীন টুলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাসদের এসব বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কমিশনের সিদ্ধান্ত হলে তা জানানো যাবে।”
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আবদুল মতিন নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিতেও দুটি কমিটি হলে উভয় অংশ দলীয় প্রতীক কাঁঠাল চাওয়ার পর একই জটিলতায় পড়েছিল ইসি।
ওই বিষয়টির তদন্তকর্তা ইসির জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্তে কোনো অফিস এবং নেতৃত্ব নিয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। এরপর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।”
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্তের পর দুটো কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল ইসি। তখন বাধ্য হয়ে দু’পক্ষ মিলে একটি কমিটি ঘোষণা করে। এতে নিবন্ধন ও প্রতীক বহাল থাকে।”
মূল জাসদ কারা, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইসি এখনও নেয়নি। এখন ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে।
আম্বিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একই ইউনিয়নে দুই পক্ষের প্রার্থী না হলে ইসি আপাতত কোনো অসুবিধা করবে না বলেছে। তবে সামনে জটিলতা হবে, আমরা দ্রুত তার নিষ্পত্তি চাই।”
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলের নিবন্ধন, প্রতীক দাবি সংক্রান্ত দুটি আলাদা কমিটির বিষয়ে ইসির মতামতের জন্য ফাইল উপস্থাপন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি কমিটির বিষয়ে তদন্ত, শুনানি করা হতে পারে।
এক কর্মকর্তা বলেন, “ইসি চাইলে প্রথমে তদন্ত করে দেখতে পারে। তাতে সন্তুষ্ট না হলে দুই পক্ষের শুনানি হতে পারে। সেক্ষেত্রে সব কিছু বিবেচনা করে একপক্ষ মশাল প্রতীকে প্রকৃত জাসদ থাকবে, অন্যপক্ষকে নিবন্ধন নিতে হবে নতুন করে, তখন তাদের নতুন প্রতীক নিতে হবে।
এই জটিলতার দ্রুত সুরাহা করা না গেলে ইউপি নির্বাচনের পরের ধাপগুলোতে জাসদ নিয়ে সমস্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন ইসি কর্মকর্তা।