টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ
পক্ষকাল দেস্কঃ: ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই সোনালী দিন ফুরিয়েছে কবেই। ক্যালিপসো ছন্দে ছেদ পড়েছে বহুদিন আগে। ক্রিকেটবিশ্বের প্রবল প্রতাপশালী সেই শাসকের দল আজ বরং ‘শোষিত’ হয় প্রায়ই। শুধু কি তাই? তাদের লড়াইটা নিজেদের সঙ্গেও। এই তো বিশ্বকাপের আগে বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন গেইলরা। হুমকি দিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বর্জনের। বোর্ডের দেওয়া আর্থিক প্রস্তাব দিয়েছে তা মনঃপুত হয়নি গেইলেদের। সে যাত্রায় সমাধান হলেও ফের অর্থলোভী খ্যাতি জুটেছিল গেইলদের!
তার ওপর বিশ্বকাপের আগে বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি ফেরি করে বেড়ানো গেইলদের মস্তিস্কহীন বলেই এক নিবন্ধ লিখেছিলেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার মার্ক নিকোলাস। তিনি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘বুদ্ধিহীন মানুষ।’ আর তাতেই কিনা ক্ষেপে ছিলেন ক্ষ্যাপাটে গেইল ব্রাভোরা। সেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে তাই অনেককিছুর জবাব দিল গেইল-স্যামি-ব্রাভো-সিমন্সদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তাও আবার যেমন তেমন জয় নয় শেষ ওভারে ক্যারিবিয়ানদের প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। ওই প্রথম চার বলে চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে ইংলিশদের কাছ থেকে ম্যাচটি ছিনিয়ে নেন তিনি।
এদিন টস জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠান উইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন সামি। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে ইংল্যান্ড। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে স্যামুয়েল বদ্রির বলে বোল্ড হন জেসন রয় (০)। আর দ্বিতীয় ওভারে আন্দ্রে রাসেলের বলে বদ্রির হাতে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন অ্যালেক্স হেলস (১)।
এরপর ৪.৪ ওভারে আবারও আঘাত হানেন বদ্রি। দলীয় ২৩ রানে গেইলের হাতে ক্যাচ তুলে ইংলিশ অধিনায়ক মরগান। ৪.৪ ওভারে মাত্র ২৩ রানে তি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ইংল্যান্ড।
এরপরই হাল ধরেন জো রুট ও জস বাটলার। বড় জুটি গড়ার পাশাপাশি দ্রুতগতিতে রান তুলেন তারা। ১১.২ ওভারে দলীয় ৮৪ রানে ব্রাথওয়েটের বলে ব্রাভোর হাতে ক্যাচ তুলে ফিরে যান বাটলার। তবে আউট হওয়ার আগে ২২ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। এছাড়া রুটের সঙ্গে ৬.৪ ওভারে ৬১ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন তিনি।
১৪তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন ব্রাভো। ওভারে চতুর্থ বলে ব্যক্তিগত ১৩ রানে (৮ বলে) ফিরে যান বেন স্টোকস। ব্রাভোর বলে সিমন্সের হাতে ক্যাচ তুলেন তিনি। একবল পরে ফের আঘাত হানেন ব্রাভো। এবার তার শিকার মঈন আলী (০)। ফলে ১৪ ওভারে ১১০ রানে ছয় উইকেট হারায় ইংলিশরা।
পরের ওভারে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জো রুটকে ফেরান ব্রাথওয়েট। ১১১ ইংল্যান্ডের সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে। আউট হওয়ার আগে ৩৬ বলে ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন রুট। এই ইনিংস খেলতে ৭টি চারের মার মেরেছেন তিনি।
এরপর রানের গতি কিছুটা সচল রাখেন ডেভিড উইলি। ১৪ বলে ২১ করে ব্রাথওয়েটের বলে ক্যাচ তুলে আউট হন তিনি। শেষ পর্যন্ত আর কেউ দাঁড়াতে না পারায় নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রান করে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ জিততে গেইলদের প্রয়োজন ১৫৬ রান।
ক্যারিবিয়ানদের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন ড্যারেন ব্রাভো ও ব্রাথওয়েট। দুটি উইকেট নিয়েছেন স্যামুয়েল বদ্রি।
১৫৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একে একে ফিরে যান জনসন চার্লস, ক্রিস গেইল ও লেন্ডেল সিমন্স। দ্বিতীয় ওভারে জোড়া আঘাত হানেন জো রুট। প্রথম বলে চার্লসকে (১) স্টোকের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। এরপর ওভারের তৃতীয় বলে গেইলকেও ফেরান রুট। ২ বলে চার রান করে সাজঘরে ফেরেন গেইল।
২.৩ ওভারে দলীয় ১১ রানে আঘাত হানেন ডেভিড উইলি। সিমন্সকে (০) এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন তিনি। ফলে ২.৩ ওভারে ১১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে উইন্ডিজরা। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন মারলন স্যামুয়েলস ও ডোয়াইন ব্রাভো।
১৪তম ওভারের শেষ বলে ফিরে যান ব্রাভো (২৭ বলে ২৫ রান)। আউট হওয়ার আগে স্যামুয়েলসের সঙ্গে ১১.৩ ওভারে ৭৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন তিনি। শেষ ছয় ওভারে উইন্ডিজদের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৭০ রান। হাতে ছিল ৬ উইকেট।
এরপর জোড়া আঘাত হানেন ডেভিড উইলি। ১৬ তম ওভারের আন্দ্রে রাসেল ও ড্যারেন স্যামিকে ফেরান তিনি। ৩ বলে ১ রান করে স্টোকসের বলে ক্যাচ তুলে ফিরে যান আন্দ্রে রাসেল। আর হেলসের হাতে ক্যাচ তুলে ফিরে যান স্যামি।
তবে একপ্রান্তে ঝড় বইয়ে যাচ্ছিলেন স্যামুয়েলস। শেষ ৪ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৪৫ রান। ১৭তম ওভারে আসে ৭ রান। শেষ ৩ ওভারে টার্গেট দাঁড়ায় ৩৮ রান। ১৮তম ওভারে আসে ১১ রান। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ২৭ রান। তখনও উইন্ডিজদের আশার আলো দেখাচ্ছিলেন স্যামুয়েলস। ১৯তম ওভারে মাত্র স্যামুয়েলস ও ব্রাথওয়েট নিতে পারেন মাত্র ৮ রান। ফলে শেষ ওভারে পয়োজন দাঁড়ায় ১৯ রান। শেষ ওভারের প্রথম চার বলে চার ছক্কা হাঁকিয়ে ক্যারিবিয়ানদের বিশ্বকাপ জেতান ব্রাথওয়েট।
এমনিতে সেমিফাইনাল স্বাগতিক ভারতের বিদায়ে বিশ্বকাপ রং হারিয়েছিল অনেকটা। তারওপর উড়ালসেতু দুর্ঘটনায় ব্যাপক হতাহতে জয় অব সিটি কলকাতা যেন শোকের শহর। সেই কলকাতার ইডেনে রচিত হলো ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের রূপকথা। ক্যালিপসো ক্রিকেটের রূপকথায় উদ্ভাসিত হবে ক্রিকেটের নন্দন কাননের ইডেন গার্ডেন।