শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ব্যাংক-বীমা » ৩ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করার প্রস্তাব
৩ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করার প্রস্তাব
ডেস্কঃ: রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ কাটছাঁট করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ইতোমধ্যেই এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। রাজস্ব ঘাটতির কারণে বরাদ্দকৃত ৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে অর্থ বিভাগ বরাদ্দকৃত অর্থ কাটছাঁট করার প্রস্তাব দিলেও এতে বাদ সেধেছে একই মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ফলে আপাতত ঝুলে আছে বিষয়টি। দুই সচিব পর্যায়ে বিষয়টির সুরাহা না হলে শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটিই চূড়ান্ত বলে মেনে নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল-২ অনুযায়ী বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৪ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। এ ছয়টি ব্যাংক হচ্ছে- সোনালী, জনতা, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এর মধ্যে বিকেবির ৬ হাজার ৬৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৫০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, সোনালী ব্যাংকের ২ হাজার ৯৩৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংকের ৬৩৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা, রাকাব-এর ৫৮২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ও রূপালী ব্যাংকের ১৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এ মূলধন ঘাটতি পূরণে গত ২০১৪-১৫ ও এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যথাক্রমে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং ৪ হাজার ১শ’ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। এ ধারাবাহিকতায় চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পুনঃমূলধন খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দকৃত ৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে গত ডিসেম্বরে শুধু বেসিক ব্যাংককে ১ হাজার ২শ’ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন’-এর অনুকূলে ২শ’ কোটি টাকা ছাড় করার প্রক্রিয়া চলছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংককে ১ হাজার ১শ’ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংককে ৭৯০ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে ২৮৩ কোটি টাকা, নবগঠিত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংককে ১২৫ কোটি টাকা ও গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারি শেয়ার বাড়ানোর জন্য ৫৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল।
এর আগের অর্থবছরে (২০১৩-১৪) মূলধন ঘাটতি পূরণে সোনালী ব্যাংককে ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংককে ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংককে ৮১৪ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংককে ২১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল।
বরাদ্দ কাটছাঁটের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার কারণে বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দও কমিয়ে আনা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পুনঃমূলধন খাতে অর্থের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
একই বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।’
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৪ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮ মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হচ্ছে ১৩ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। মোট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে অবশিষ্ট চার মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৭২ হাজার ২০৫ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।