বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ | অর্থনীতি » গ্রেফতার হতে পারেন মডেল মুন, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
গ্রেফতার হতে পারেন মডেল মুন, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ডেস্কঃ পাঁচ কোটি টাকা দামের অবৈধ গাড়ি ব্যবহার করে আলোচনায় আসা সেই মডেল জাকিয়া মুন ও তার স্বামী ব্যবসায়ী শফিউল আজম মহসিন যে কোন সময় গ্রেফতার হতে পারেন। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তলবে মঙ্গলবার হাজির না হওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এমনকি দু’জনের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে মুন ও তার স্বামীর হাজির হওয়ার কথা থাকলেও অসুস্থ্যতার অজুহাত দেখিয়ে তারা আসেননি। তবে উঠতি মডেল জাকিয়া মুন এদিনও শুটিং করেছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, তলবের পর শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে মডেল জাকিয়া মুন ও তার স্বামী প্যাসেফিক গ্রুপের কর্ণধার শফিউল আজম মহসিন হাজির না হওয়ায় শুল্ক গোয়েন্দার সহকারি পরিচালক ফেরদৌসী মাহবুবকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পুরো বিষয়টি তদন্ত করে এই দু’জন কী কী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন, তা বের করবেন। এই কমিটি শুল্ক আইনের সেকশন ১৬১ এর ১ ধারার অধীনে মুন ও তার স্বামী জাকিয়া মুনকে যে কোন সময় গ্রেফতার করতে পারবে বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
তিনি মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই তদন্ত কমিটি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের ওপর নজরদারি রাখবে। এই দু’জন যাতে কোথাও পালাতে না পারেন এবং দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সেজন্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
এর আগে গ্রেফতার এড়াতে গত ১৩ এপ্রিল মডেল জাকিয়া মুন ও তার স্বামীর রিট আবেদন খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। রিট খারিজ হওয়ার বিষয়টি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রিটে মডেল মুন ও তার স্বামীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হয়রানি ও গ্রেফতার না করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
জানা গেছে, গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে মডেল জাকিয়া মুন ও তার স্বামী মহসিনের ব্যবহূত পোরশা মডেলের একটি গাড়ি আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। গাড়ির মালিকানার বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে তারা কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ১১ এপ্রিলের এক চিঠিতে ১৮ এপ্রিল কাকরাইলের শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের তলব করা হয়। এরই মধ্যে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে গ্রেফতার আশঙ্কায় ওই দম্পতি হাইকোর্টে রিট করেন। এই সময়ে শুল্ক গোয়েন্দার তলবি চিঠি গ্রহণ না করে ফেরত পাঠানো হয়- ‘প্রাপকের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে’, এ কথা উল্লেখ করে। পরে শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে সরাসরি বাহক মারফত চিঠি পাঠিয়ে ১৯ এপ্রিল হাজির হতে বলা হলেও এদিন তারা আসেননি। এ অবস্থায় মঙ্গলবার তৃতীয় দফায় তলবি পত্র পাঠানো হয়েছে মুন ও তার স্বামীর কাছে। এতে আগামী ২৪ এপ্রিল বিকাল ৩ টায় কাকরাইলের শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল মুন ও তার স্বামীর কাছে পাঠানো তলবি নোটিশে শুল্ক গোয়েন্দা বলেছে, তারা যদি শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাজির হন, তাহলে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে চাওয়া হবে- কেন এই অবৈধ গাড়ি মডেল জাকিয়া মুন ব্যবহার করেছেন। শুল্ক ফাঁকির এই গাড়ি কেন কিনেছেন তার স্বামী। একইসঙ্গে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে মুন ও তার স্বামী কেন আইন ভঙ্গ করেছেন? এ সব প্রশ্নের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য না হলে মডেল জাকিয়া মুন ও তার স্বামী ব্যবসায়ী শফিউল আজম মহসিনের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। এরসঙ্গে গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে তাদের ১২ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে। আবার তারা ফেঁসে যেতে পারেন চোরাচালান ও অর্থপাচার মামলায়।
প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল উদ্ধার হওয়া পোরশা মডেলের গাড়িটি মিথ্যা ঘোষণা ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে গাড়ি আনার যে সুযোগ রয়েছে, তারই অপব্যবহার করে এসব দামি গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু নিয়ম অনুসারে এসব গাড়ি পর্যটকদের জন্য ‘কার্নেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় বাংলাদেশে এনে আবার বাইরে ফেরত নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে দেশের ভিতরে এসব গাড়ি ব্যবহার করে আসছেন অনেক ধনকুবের।