তীব্র চাপে বাংলাদেশ
ডেস্ক:বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে লেখক, ব্লগার ও মুক্তচিন্তা মানুষকে হত্যার ঘটনায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সমকামী অধিকার আন্দোলনের দুই কর্মী। ধর্মীয় উগ্রপন্থিতে হাতে এভাবে নৃশংসভাবে খুন হওয়ার একের পর এক ঘটনায় তীব্র চাপে পড়েছে বাংলাদেশ। বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, সোমবার (২৫ এপিল) রাতে ছয় দুবৃত্তের একটি দল ঢাকার একটি আবাসিক ভবনে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে। তারা দুজনই ছিলেন সমকামী অধিকার বিষয়ক কর্মী এলজিবিটি (নারী সমকামী, পুরুষ সমকামী, উভগামী ও হিজড়া) সম্প্রদায়ের ম্যাগাজিন ‘রূপবান’ এর সম্পাদক ছিলেন জুলহাজ। তার সঙ্গী তনয় ছিলেন একজন নাট্যকর্মী।
জুলহাজ মান্নান দুই বছর আগে ‘রূপবান’ ম্যাগাজিন চালু করেন। এর মধ্য দিয়ে তা হয়ে ওঠে বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার আদায়ের একটি প্লাটফর্ম। কিন্তু এ দেশটিতে সমকামিতা অবৈধ। এ গ্রুপটি ১৪ই এপ্রিলে বাংলা নববর্ষে বার্ষিক রেইনবো র্যালি বের করে থাকে। এ বছর তা বাতিল করা হয়, ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপের কারণে। র্যালির পরিকল্পনা নিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিকে মান্নান বলেছিলেন, অনলাইনে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসলামপন্থিরা।
এর আগে গত শনিবার (২৩ এপ্রিল) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে একই কায়দায় নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী, লেখক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক হামলা এবং একের পর এক গা শিউরে ওঠা হত্যার ঘটনায় সবব হয়ে ওঠেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
বিশ্বের একাধিক মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ দাবি করেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সমকামী অধিকার প্রতিষ্ঠায় জড়িত দুই কর্মীকে হত্যার ঘটনায় এটাই প্রমানিত হয়েছে যে ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা বাংলাদেশে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো মুক্তবুদ্ধির চর্চায় জড়িত ব্যক্তিদের এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সুবিচার ও তাদের বৃহত্তর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডগুলো সম্পর্কে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক চাম্পা প্যাটেলের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরকে হত্যার একদিন পরেই এলজিবিটি সম্প্রদায়ের একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও তার বন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতে দেশের ভেতরে যারা শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সুরক্ষায় ঘাটতি রয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার যেহেতু এসব সহিংস গ্রুপগুলোকে বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেহেতু হামলাকারীরা তাদের টার্গেট বিস্তৃত করেছে। তারা তাদের টার্গেটে পরিণত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ও এলজিবিটিআই কর্মীদের।
এতে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এক বার্তায় ঢাকা মান্নান ও তন্ময়কে হত্যায় নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি অপরাধীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন টুইটারে।
বাংলাদেশে সংগঠিত ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের হাতে নিহতদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু গত মাসেই বাংলাদেশে উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ২৬ বছর বয়সী একজন অনলাইন এক্টিভিস্ট। গত বছরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে চারজন ব্লগার ও প্রকাশককে। সরকারিভাবে ধর্মনিরপেক্ষ এই দেশে গত এক বছর থেকে হত্যা করা হয়েছে খ্রিস্টান, হিন্দু, সুফি, আহমাদি, শিয়া মুসলিমদের। আদতে দেশটি সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত। এসব হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের কাউকে শাস্তি দেয়া হয় নি। তবে ২০১৩ সালে আহমেদ রাজিব হায়দারকে হত্যার অভিযোগে বাংলাদেশের একটি আদালত দুজন ছাত্রকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দিয়েছেন। আহমেদ রাজিব হায়দার হলেন ধর্মনিরপেক্ষ লেখক হিসেবে প্রথম হামলার শিকার। তাকে হত্যার অভিযোগে আরও ৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সর্বশ্রেষ্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরকে হত্যাসহ অনেকগুলো হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস)।
এতে আরো বলা হয়, ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার ও লেখকদের হত্যার দায় স্বীকার করছে আল কায়েদার বাংলাদেশি শাখাও। তবে এসব দায় স্বীকারের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সরকার। সরকার বলছে, এসব হত্যার জন্য দায়ী দেশের ভিতরকার ইসলামপন্থি গ্রুপগুলো। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ দুই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেছেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর ইসলামপন্থি মিত্র জামায়াতে ইসলামীর ওপর। তাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ এনে বলেছেন, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে