আ’লীগ ৪৪৪, বিএনপি ৬৮, অন্যান্য ১৭০টিতে জয়ী
ডেস্ক: চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ৪র্থ ধাপেও বিশাল ব্যাবধানে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শেষ খবর পাওয়াপর্যন্ত ৭০৩ ইউপির ফলাফলে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ৪১৪টি, বিএনপি ৬৮টি, অন্যান্য ১৭০টি ইউপিতে। এছাড়া, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ৩৩টি ইউপিতে। আর ভোট স্থগিত হয়েছে ৭টি ইউপিতে।
নানা অনিয়ম অভিযোগের মধ্যেও গতকাল শনিবার ৪র্থ ধাপে দেশের ৭০৩টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট গ্রহন হয়। ভোট চলাকালিন সহিংসতায় সারাদেশে ৭জন মানুষ মারা যায়। এঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়।
এর পরেও নির্বাচন কমিশনের দাবি দেশে কিছু সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন আগের তিন ধাপের চেয়ে সুষ্ঠু হয়েছে। আগামী দুই ধাপে সহিংসতা শূণ্যের কোঠায় চলে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ইসি।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ ধাপে ৪৬ জেলার ৮৮ উপজেলার ৭০৩ ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ৩৩ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ ৬৭০ ইউপিতে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ২৪৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সদস্য পদে ২৪ হাজার ১৮৭ জন এবং নারী সদস্য পদে ৭ হাজার ১৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ সদস্য পদে ২২৭ জন প্রার্থী এবং নারী সদস্য পদে ৯৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে মোট ৬ হাজার ৭২৭টি ভোটকেন্দ্রে প্রায় সোয়া কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।
দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপিতে এবার ছয় ধাপে ভোটগ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে তিনটি ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিন ধাপের নির্বাচনে প্রায় ৭০ জন ব্যক্তি নির্বচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছে বলে পর্যবেক্ষক সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) দাবি করছে। এছাড়া শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
সারাদেশে ৪র্থ ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়েমের অভিযোগ পাওয়া গেছে অস্ত্রের মুখে ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট ও ব্যালট ছিনতাইকালে সংঘর্ষে সারাদেশে কয়েকশ’ আহত এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এবারও জাল ভোট, ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে বিএনপির আট প্রার্থীসহ অন্তত ১৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট শুরুর পরপরই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
এছাড়া ভোটের আগের রাতেই ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে সারাদেশে ৮ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজনের ৭ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সকালে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের উত্তর চন্দলা স্কুল বাজার ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ধারাল অস্ত্রের আঘাতে তাপস চন্দ্র পাল নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
এদিকে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরও ৫ জন।
এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। তার নাম মাহবুব (১৭)। আজ নির্বাচনকালীন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারিয়া ইউনিয়নের মাছপুরিয়া দাখিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীতে ইউপি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার ও ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টার অভিযোগে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনিকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে।
বেলা সোয়া ১২টার দিকে উপজেলার মির্জাপুর থেকে তাকে আটক করেন নির্বাচনে দায়িত্বরত একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এরপর তাকে হাটহাজারী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
এছাড়া, রাজশাহীর বাঘমারায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক। কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বাঘমারা থানার ওসি ও এক এএসআইকে। নিহতরা হলেন- উপজেলার সরঞ্জি ভাসুপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান (২৮), ছহির উদ্দিনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম বুলু (৩৮)এবং মনতাজ আলী (৩৫)। আরেকজনের নাম জানা যায়নি।