মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪
প্রথম পাতা » » আলবদর আজহারের ফাঁসি, বুধ-বৃহস্পতি হরতাল
আলবদর আজহারের ফাঁসি, বুধ-বৃহস্পতি হরতাল
পক্ষকাল প্রতিবেদক:
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মুক্তিযুদ্ধকালে আজহারুল ছিলেন আলবদর বাহিনীর রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার।
মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুলের ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে বুধ-বৃহস্পতিবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে দলটি।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সম্পর্ক বিস্তারিত জানানো হবে।
আজহারুলের বিরুদ্ধে গঠন করা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়েছে। ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে তাঁকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া তাঁকে ৫ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। ১ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা ১৮ মিনিট থেকে রায় ঘোষণা শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণা শেষ হয় ১২টা ৪৫ মিনিটে।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে সকাল নয়টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজহারুলকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় আনা হয়। বেলা ১১টার কিছু আগে জামায়াতের এই নেতাকে হাজতখানা থেকে ট্রাইব্যুনালে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। দোয়েল চত্বর থেকে ট্রাইব্যুনালের দিকের সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বাইরে প্রস্তুত রাখা হয় পুলিশের সাঁজোয়া যান।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর আজহারুলের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষে রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি-কেস অ্যায়োটিং ভারডিক্ট) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। আজ তা ঘোষণা করা হলো। এটি জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় অষ্টম নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়।
এর আগে দুই ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক আমির গোলাম আযম, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলার রায় দিয়েছেন। দলটির নায়েবে আমির এ কে এম ইউসুফ মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মারা যান। আরেক নায়েবে আমির মুহাম্মদ আবদুস সুবহানের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষে রায়ের অপেক্ষায় আছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর আজহারুল ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের ২২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত আজহার এই পদে ছিলেন।
২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর আজহারুলের বিরুদ্ধে গণহত্যার দুটিসহ হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের ছয়টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষে ১৯ জন সাক্ষ্য দেন, আসামিপক্ষে কেউ সাক্ষ্য দেননি।
রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অনুসারে একাত্তরে রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র থাকাকালে আজহারুল জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের রংপুর জেলা সভাপতি হন। মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৯১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির ছিলেন।
আজহারের বিরুদ্ধে ছয় অভিযোগ: এ টি এম আজহারের বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগের মধ্যে গণহত্যার অভিযোগ দুটি। অভিযোগ গঠনের আদেশ অনুসারে, একাত্তরের ১৭ এপ্রিল রংপুরের ঝাড়ুয়ার বিল এলাকায় পাকিস্তানি সেনা ও সহযোগী বাহিনীর সদস্যরা নির্বিচারে গুলি করে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে। একাত্তরের ৩০ এপ্রিল রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক কালাচান রায়, সুনীল বরণ চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ অধিকারী, চিত্তরঞ্জন রায় ও কালাচান রায়ের স্ত্রী মঞ্জুশ্রী রায়কে বাসা থেকে অপহরণের পর দমদমা সেতুর কাছে নিয়ে হত্যা করা হয়। এ দুটি ঘটনায় আজহারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ গঠন করা হয়।
বাকি চারটি অভিযোগ হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন প্রভৃতি মানবতাবিরোধী অপরাধের। এই অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ২৪ মার্চ রংপুরের আইনজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মাহফুজ আলীসহ ১১ জনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের পর ৩ এপ্রিল দখিগঞ্জ শ্মশানে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৬ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জের ধাপপাড়ায় ১৫ নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ করা হয়। একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় এক ব্যক্তিকে নির্যাতন এবং ১ ডিসেম্বর শহরের বেতপট্টি থেকে এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর রংপুর মুসলিম হোস্টেলে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনায় আজহারুলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন এবং এসব অপরাধে সহযোগিতা করার অভিযোগ গঠন করা হয়।