শুক্রবার, ২০ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ » বাউলভক্ত চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা, বিস্ফোরণে কিশোরের মৃত্যু
বাউলভক্ত চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা, বিস্ফোরণে কিশোরের মৃত্যু
পক্ষকাল ডেস্কঃ কুষ্টিয়া সদরের বটতৈলে এক হোমিওপ্যাথ চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে; গুরুতর আহত হয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।
কাছাকাছি সময়ে একই উপজেলার কবুরহাটে ‘কুড়িয়ে পাওয়া বোমা’ বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরের, আহত হয়েছে আরও একজন।
সদর মডেল থানার ওসি শাহাবুদ্দিন চৌধুরী জানান, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বটতৈল ইউনিয়নের শিশিরপাড়া মাঠ এলাকায় হামলার শিকার হন হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক মীর সানাউর রহমান ও তার বন্ধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুজ্জামান।
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঞ্জুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সানাউর ও সাইফুজ্জামানের মধ্যে বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। সানাউর বাউল মতের অনুসারী ছিলেন। তার সঙ্গে সাইফুজ্জামানও প্রায়ই বাউল গানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতেন।
গত দুই বছরে পীর, ফকির ও বাউলসহ সুফিবাদী ধারার বেশ কয়েকজন মানুষকে হত্যার মতো কুষ্টিয়ার এ ঘটনাতেও জঙ্গিবাদীদের হাত আছে কি না- সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ।
ওসি জানান, সানাউরের বাসা কুষ্টিয়া শহরের মজমপুরে। শিশিরপাড়া মাঠ এলাকায় এক বাংলো বাড়িতে প্রতি শুক্রবার গরীব রোগীদের বিনা খরচে চিকিৎসা দিতেন তিনি।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, সানাউর ও সাইফুজ্জামান সকালে মোটরসাইকেলে করে শিশিরপাড়ার দিকে যাওয়ার সময় কয়েকজন তাদের ওপর হামলা চালায় এবং কুপিয়ে জখম করে।
এতে ঘটনাস্থলেই সানাউরের মৃত্যু হয়। সাইফুজ্জামানকে গুরুতর আহত অবস্থায় নেওয়া হয় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে।
সহকর্মীরা জানান, কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুরের এক বাসায় ভাড়া থাকতেন সাইফুজ্জামান। তিনি লেখাপড়া করেছেন বিশ্বভারতীতে।
সহকারী অধ্যাপক মঞ্জুর রহমান জানান, সাইফুজ্জামানের মাথা ও শরীরের উপরের অংশে ধারালো অস্ত্রের সাতটি আঘাত করা হয়েছে। তাকে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে একই উপজেলার কবুরহাটে সকালে ‘মাঠে খেলতে গিয়ে’ বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত ও আরও দুজন আহত হয়।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, কয়েকজন কিশোর ক্রিকেট খেলতে গিয়ে টেপ মোড়ানো একটি বস্তু পেয়ে কৌতুহলবশত তা দেখতে যায় এবং বিস্ফোরণ ঘটে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি শাহবুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় দুই কিশোরকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিচয় জানাতে পারেননি ওসি।
বটতৈল ও কবুরহাটের ঘটনার মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। এসব ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সে বিষয়েও কোনো তথ্য ওসি দিতে পারেননি।
এই কুষ্টিয়া থেকেই গত ১৫ মে শরিফুল ইসলাম ওরফে শিহাব নামে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সন্দেহভাজন এক সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, যাকে ঢাকার জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) কুষ্টিয়া অঞ্চলের প্রধানসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় গোয়েন্দা পুলিশ।
কুষ্টিয়ার পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গায় গতবছর ১০ ডিসেম্বর খুন হন স্থানীয় একটি বাউল উৎসবের আয়োজক জাকারিয়া সরদার।তাকেও একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
তার আগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলনকে। তিনিও একজন লালন ভক্ত ছিলেন।