সরকারি চাকরিজীবীদের ৭ বিষয়ে পোস্ট নিষিদ্ধ
পক্ষকাল ডেস্কঃজাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী এমন কোনো বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারবেন না সরকারি চাকরিজীবীরা। রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়েও লিখতে পারবেন না তারা। এমনকি কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে বা ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী কোনো মন্তব্য পোস্ট করাও তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উল্লিখিত বিষয়সহ সাত ধরনের কনটেন্ট নিষিদ্ধ করে রোববার একটি নির্দেশিকা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার’ শিরোনামের এ নির্দেশিকায় যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হল- ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ভাইবার, স্কাইপে, গুগল প্লাস, লিংকড-ইন, ইনস্টাগ্রাম, ভিমিও, হোয়াটস অ্যাপ ও পিন্টারেস্ট।
মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বসবাসকারী কোনো আদিবাসী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয়প্রতিপন্নমূলক কনটেন্ট প্রকাশ করতে পারবেন না সরকারি চাকরিজীবীরা। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয়প্রতিপন্ন করে এমন কনটেন্ট, লিঙ্গবৈষম্য ও এ সংক্রান্ত বিতর্কমূলক কোনো কিছুও প্রকাশ করতে পারবেন না তারা। এ ছাড়া জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো কনটেন্ট প্রকাশ করাও তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ থাকলেও সরকারি চাকরিজীবীকে দায়িত্বশীল নাগরিকসুলভ আচরণ ও অনুশাসন মেনে চলতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দায়িত্বশীল নাগরিকসুলভ আচরণ ও অনুশাসন অবশ্যই মেনে চলা, কনটেন্ট ও বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হওয়া, অপ্রয়োজনীয় ট্যাগিং বা রেফারেন্সিং পরিহার করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার বা নিজ অ্যাকাউন্টের ক্ষতিকারক কনটেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন। এমনকি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন বা বিধি-বিধানের সম্মুখীন হওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় নির্দেশিকায়।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৮০ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। বর্তমানে সারা দেশে আট শতাধিক সরকারি অফিসে দাপ্তরিক কাজে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে। এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। এ প্রেক্ষাপটে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়। সাতটি প্রাতিষ্ঠানিক কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
এগুলো হল দাপ্তরিক যোগাযোগ ও মতবিনিময়, সমস্যা পর্যালোচনা ও সমাধান, জনসচেতনতা ও প্রচারণা, নাগরিক সেবা সহজীকরণ ও উদ্ভাবন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ, জনবান্ধব প্রশাসন ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাপ্তরিক অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেও কয়েকটি নিয়ম মানার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দপ্তরের অ্যাকাউন্ট বা পেজ বা ব্যানার ব্যক্তি বা পদবির পরিবর্তে দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের নামে হবে। দাপ্তরিক পেজের ব্যানার বা প্রোফাইল ছবিতে কোনো ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগের পেজকে দাপ্তরিক নিজস্ব ওয়েবসাইটের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সংযুক্ত করতে হবে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানকে তিন মাসে একবার নিজ দপ্তরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অগ্রগতি ও কার্যকারিতা পর্যালোচনা করতে হবে। বছর শেষে মূল্যায়নের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবহারকারীকে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার বা স্বীকৃতির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। সেরা পোস্ট, কমেন্ট, পেইজ, নাগরিক সমস্যা উপস্থাপক, সমাধান এবং সেরা প্রচারকে বিবেচনায় নিয়ে পুরস্কার দেয়ার কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই নির্দেশনায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিজের ফেসবুক পাতায় ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ কোনো বিষয় প্রকাশ নিষেধ করা হয়।