রোয়ানু: উপকূলে ঝড়ো হাওয়া মারা গেছে ২ জন
পক্ষকাল ডেস্কঃ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ে সেখানে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে।নিহতরা হলেন, উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশিগঞ্জ গ্রামের রেখা বেগম (৩৫) ও একই এলাকার আকরাম (১৪)।
ভোলা সংলগ্ন মেঘনা, তেতুলিয়া নদী উত্তাল। সেখানে স্বাভাবিকের চেয়ে ২/৩ ফুট উচ্চতায় নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে । ভোলার ১৮টি চরের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র আনা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক সেলিম উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন ।বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু বাংলাদেশ উপকূলের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে, পৌঁছে গেছে পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শনিবার ভোর থেকেই দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি চলছে আগের দিন থেকেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আরও পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে এসে সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে কোনো এক সময় বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
শেষরাতে ঘরের উপর গাছ পড়ে ভোলার তজুমদ্দিন এবং পটুয়াখালীর দশমিনায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা।
চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে আগের মতোই ৭ নম্বর এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৬ টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ২৫৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৩০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা এবং সংলগ্ন দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সে সময় ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে বয়ে যেতে পারে ঝড়ো হাওয়া।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসেরও শঙ্কা রয়েছে বলে পূর্বাভাসে সতর্ক করা হয়েছে।
# খারাপ আবহাওয়ার কারণে মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের মালামাল খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
# চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও সতর্কতামূলক সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
# প্রতিকূল আবহাওয়ায় সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ।
# সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তুত উপকূল
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, “এ নিয়ে বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আশা করি, ঝড়ো আবহাওয়ায় জানমালের ক্ষতি হবে না বাংলাদেশে। সরকারও ইতোমধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় ‘সব ধরনের প্রস্তুতি’ রাখা হচ্ছে।
>> ১৮ জেলার সাড়ে ২১ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩৮৫১টি আশ্রয়কেন্দ্রে। প্রচার করা হচ্ছে সতর্কবার্তা।
>> দুর্যোগ মোকাবেলার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে উপকূলীয় জেলাগুলোয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
>> উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি)৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোভার স্কাউট ও আনসার ভিডিপির কর্মীরা কাজ করছেন একসঙ্গে।
>> জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের দুর্যোগ মোকাবেলা সংক্রান্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
>> উপকূলীয় এলাকার বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের শুকনো খাবার ও খাবার পানি প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাতে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে চট্টগ্রাম, পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর ‘বিপদ সংকেত’ দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজারকে দেখাতে বলা হয়েছে ৬ নম্বর ‘বিপদ সংকেত’।
ঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে ঊপকূলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বন্ধ করা হয়েছে সব ধরনের নৌ চলাচল।
আবহাওয়ার বুলেটিনে বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোসাগর এলাকা থেকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মধ্যরাতে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছিল।
এ সময় ঝড়ের অবস্থান ছিল মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিম এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে।
সে সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখে দেখেছি, ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করছে।”
এই ঝড় আরও পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সকাল বা দুপুর নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে বুলেটিনে বলা হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে ভোর থেকেই উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আভাস রয়েছে।
এই ঝড়ের প্রভাবে শুক্রবারই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাত শুরু হয় বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ
বলেন, ৫ থেকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের মাত্রা একই। ঝড় বন্দরের কোন দিক দিয়ে যাবে তার ভিত্তিতে নম্বর আলাদা করা হয়।
“বিপদ সংকেতের মানে হচ্ছে, বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়েছে। ঝড়ে সময় বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার থাকবে।”