মাহির মামলায় ডিবির প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত !
ডেস্কঃঢালিউডের অগ্নিকন্যাখ্যাত নায়িকা মাহিয়া মাহির (শারমিন আক্তার নীপা) তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধতার জন্ম দিয়েছে। মাহির মামলায় অতি দ্রুত ডিবির তদন্তে নেমে পড়া আর তদন্ত কর্মকর্তাদের অতি উৎসাহ অনেকের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
গত ২৫ মে সিলেটের ব্যবসায়ী অপুকে বিয়ের পর ঢাকার ছেলে মাহির দীর্ঘদিনের বন্ধু শাওনের সঙ্গে আগের বিয়ের অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশ হওয়ার পর সন্মানহানী ও বিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা অভিযোগে শাওনের বিরুদ্ধে মাহির মামলা দায়েরের পর অবিশ্বাস্য গতি ডিবির তদন্ত নিয়ে শাওনের পরিবারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা এই মামলা দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে তা ঢাকা মেট্রোপলিন গোয়েন্দা পুলিশে ন্যস্ত হওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দায়ের করা মামলা দ্রুত তদন্তের ভার ডিবিতে ন্যস্ত হয় না।
20100000000মাহির দায়ের করা এই মামলাটি দ্রুত তদন্ত করা ডিবির কর্মকর্তাদের অতি আগ্রহ নিয়ে ভুক্তভোগী শাহরিয়ার ইসলাম শাওনের চাচা বলেন, আমরা ধারনা করছি মাহির সঙ্গে শাওনের বিয়ের ঘটনা ফাঁস হওয়ার কারণেই এমনটি ঘটেছে।
গত ২৭ মে রাত ৮ টায় উত্তরা পশ্চিম থানায় চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি উপস্থিত হয়ে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় আসামী করা হয় তার দ্বিতীয় স্বামী শাহরিয়ার ইসলাম শাওন। অভিযোগ করা হয় যে, শাওন ফেসবুকে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি আপলোড করে তার সম্মানহানি করেছেন। মামলায় শাওনের সহযোগী হিসাবে আরো তিনজন অজ্ঞাতনামা সাংবাদিককে আসামী করা হয়।
শাওনের বিরুদ্ধে মাহির এজাহার
শাওনের বিরুদ্ধে মাহির এজাহার
মামলা দায়েরের পরপর রাত ১০ টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন ও সহকারী কমিশনার নাজমুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম দক্ষিণ বাড্ডার প-১৩ নম্বর বাড়ি থেকে শাওনকে আটক করে নিয়ে আসে। এসময় শাওনের ব্যবহৃত কম্পিটার, একটি ট্যাব ও তার ২ টি মোবাইল ফোনসেট জব্দ করে। পরদিন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ শাওনকে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
মাহিয়া মাহি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে স্প্ল্যাশ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ‘ঢাকা এ্যাটাক’ সিনেমার নায়িকা। এই সিনেমায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা অভিনয় করছেন। সিনেমাটি কাহিনী ডিবির একজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তার লেখা। সিনেমাটিও গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা প্রযোজনা করছেন বলে জানা গেছে।
ওই সিনেমার শুটিংয়ের সময় ঐসব কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাহীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এইসম্পর্কের জের ধরে ডিবি পুলিশ আগ্রহ নিয়ে এই মামলা তদন্ত নেমেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
নামপ্রকাশে অনাগ্রহী শাওনের এক বন্ধু অভিযোগ করেছেন, শাওনের আটক হওয়ার পর ডিবির একাধিক কর্মকর্তা তাকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
এমনকি তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে শাওনের বাবা ও মা জানান, তাদেরও শাসানো হয়েছে যে, এইভাবে যে মাহি-শাওনের বিয়ে ও তাদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে মুখ খুললে শাওনকে আরো রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হবে।
শাওন-মাহির নিকাহ নামা
শাওন-মাহির নিকাহ নামা
এদিকে, মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ২ দিনের রিমান্ড শেষে শাওনকে আরো ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে হাজির করে। এসময় আদালতে শাওন নায়িকা মাহীকে স্ত্রী বলে দাবি করেন।
পরে শাওনের আইনজীবী বিল্লাল হোসেন তাদের বিয়ের কাবিননামা, বিয়ের ছবি আদালতে দাখিল করেন। মাহি-শাওনের বিয়ে প্রথম বিয়ে বলে দাবি করা হয়েছে। তাকে রেখেই সিলেটের ব্যবসায়ী পারভেজ অপুকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। পরে আদালত ডিবির রিমান্ড ও আসামীর জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকার মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম।
শাওনের পারিবারিক সূত্র জানায়, গত বছরের ১৫ মে শাওনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় মাহির। শাওনের বন্ধুরা জানান, একই স্কুলে ও কলেজে লেখাপড়া করেছেন মাহি ও শাওন। সহপাঠী হওয়ার সুবাধে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দীর্ঘদিন এক সঙ্গে প্রেম করার পর তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর এক বছর একসঙ্গে সংসার করেছেন। দুই পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিলো। প্রায় এক বছর এক সঙ্গে সংসার করেছেন তারা। দক্ষিণ বাড্ডার প-১৩ নম্বর বাড়িতে তারা দীর্ঘদিন ছিলেন বলে প্রতিবেশীরা জানান।
গত বছরের শেষের দিকে সিলেটের এক বিত্তশালী ব্যবসায়ীর পুত্র মাহমুদ পারভেজ অপুর সঙ্গে পরিচয় হয় মাহির।
শাওনের পিতা নজরুল ইসলাম বলেন, দুজনের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েই পারিবারিকভাবে শাওন ও মাহির বিয়ে হয়েছিলো। তার একসঙ্গে সংসারও করেছে। ছেলের বউ চলচ্চিত্র নায়িকা হিসাবে ব্যাপক সুনাম হওয়ায় তাদেরও গর্বে বুক ভরে যেতো। কিন্তু সিলেটের জামায়াত পরিবারের বিত্তশালী পারভেজ অপুর সঙ্গে মাহির পরিচয় হওয়ার পর থেকে বদলে যেতে শুরু করে। হঠাৎ করেই কাউকে কিছু না জানিয়ে অপু-মাহি বিয়ে করেন। এই খবর তিনি পত্রিকা থেকে জানতে পারেন।