পুলিশের হাতে ফুটেজ, খুনের কায়দায় ‘মিল’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এবং সিসিটিভির ভিডিও দেখে চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গত দুই বছরে উগ্রপন্থিরা দেশে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তার সঙ্গে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার মিল পাচ্ছেন তারা।
রোববার সকাল পৌনে ৭টায় ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে নগরীর জিইসি মোড়ে যাওয়ার সময় খুন হন মিতু।
মোটর সাইকেলে করে আসা তিন হামলাকারী জিইসি মোড়সংলগ্ন মিষ্টির দোকান ওয়েল ফুডের সামনে মাহমুদা আক্তার মিতুকে প্রথমে ছুরি মারে এবং পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। পুরো কাজ শেষ করতে তারা খুবই অল্প সময় নেয় বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ বলেন, ওই সড়কের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে হত্যাকারীরা তিনজনই ছিল। মোটর সাইকেল নিয়ে তারা আগে থেকেই ওই এলাকায় অবস্থান করছিল বলে ভিডিও দেখে মনে হয়েছে।
“তারা মাহমুদা আক্তারের শরীরের বিভিন্ন অংশে স্ট্যাব করে। তারপর মাথার বাঁ দিকে গুলি করে মোটর সাইকেলে করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি বুলেটও পাওয়া গেছে, যার মধ্যে দুটি অব্যবহৃত।”
পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে কিছুদিন আগে ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেওয়ার আগে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উত্তর-দক্ষিণ জোনের দায়িত্বে ছিলেন বাবুল আক্তার।
গত দুই বছরে চট্টগ্রামে জঙ্গি দমন অভিযানে সাহসিকতার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন বাবুল আক্তার। বলা হয়, তার তদন্তের জোরেই পুলিশ জেএমবির একটি আস্তানার খোঁজ পায়, গ্রেপ্তার করা হয় ওই জঙ্গি দলের সামরিক শাখার প্রধানকে।
তার স্ত্রী খুন হওয়ার পর সন্দেহের তীর জঙ্গি সংগঠনগুলোর দিকে থাকলেও সব ধরনের সম্ভাবনা মাথায় রেখেই পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মোক্তার আহমেদ।
হত্যাকাণ্ডের সময় মিতুর সঙ্গে থাকা তার ছয় বছর বয়সী ছেলে যে বক্তব্য দিয়েছে, তা সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলে গেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলেটি বলেছে, মোটর সাইকেলে যারা এসেছে তারা প্রথমে তাকে একপাশে সরিয়ে নিয়ে যায়। এরপর একজন তার মাকে ছুরি মারে এবং পরে গুলি করে।
হত্যাকাণ্ডে ৭ দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তল ব্যবহার করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত ব্যুরোর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক কবীর হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
চলতি বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, টাঙ্গাইলে হিন্দু দর্জি নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়, এবং গতবছর আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যা, দিনাজপুরে ইতালীয় এক পাদ্রীকে হত্যা চেষ্টার ঘটনাতেও হামলাকারী ছিল তিনজন। মোটর সাইকেলে আসে, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ছুরি, চাপাতি, পিস্তল।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ ও র্যাব, বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।