বৃহস্পতিবার, ৯ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » চিনির বাজার জিম্মি করেছে মীর গ্রুপ ২০ লাখ টাকা জরিমানা, অফিস ও গুদাম সিলগালা
চিনির বাজার জিম্মি করেছে মীর গ্রুপ ২০ লাখ টাকা জরিমানা, অফিস ও গুদাম সিলগালা
পক্ষকাল ডেস্কঃ খুচরা ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রির দায়ে মীর গ্রুপের ব্যবস’াপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম এবং তার ব্যবসায়িক অংশীদার ও একই গ্রুপের সেলস ম্যানেজার জানে আলমকে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এ অভিযান চালানো হয়।
একই সময়ে কম দামে ছোলা-ডাল কিনে বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগে আশরাফ হোসেন মাসুদের মালিকানাধীন মাসুদ ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে মেসার্স হাজী মীর আহমেদ সওদাগর নামক মীর গ্রুপের প্রধান কার্যালয় সিলগালা করে দেওয়া হয়। সাথে সাথে সরকারি কাজে অসহযোগিতা ও অসদাচারণের অভিযোগে একই প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মচারীকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন সেলস ম্যানেজার জানে আলম, সহকারী হিসাব রক্ষক মফিজুল হক ও সজল সেনগুপ্ত। পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
গতকাল বুধবার সকাল ১০ থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ছোলা ও চিনির ডিলার এবং আড়তে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান বিন আলী ও আবদুস সামাদ শিকদার এবং ক্যাবের সদরঘাট থানা শাখার সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস অভিযানের সহায়তা করেন। অভিযানে র্যা ব-৭ এর এ.এস.পি. জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে র্যা বের ১৬ জন র্যা ব সদস্য অংশ নেন।
এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল মীর গ্রুপ অনেক বেশি দামে চিনি বিক্রি করে চিনির দামে তারতম্য সৃষ্টি করছে। মীর গ্রপের বেচাকেনার কাগজপত্রে কম দামে পণ্য কিনে অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ৪৬ টাকা ৮০ আশি পয়সায় চিনি কিনে তারা ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি করছে। কেজি প্রতি লাভ করছে ১২ টাকা করে। আমরা প্রতিষ্ঠানটির মালিককে বারবার খবর দিলেও তিনি ঘটনাস’লে আসেননি। কর্মচারীরাও অসহযোগিতা করেছে। ফলে তাদের তিন কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে এবং এই কোম্পানির প্রধান কার্যালয় সিলগালা করা হয়েছে। তাদের অন্য দুটি গুদামেও অভিযান চালানো হবে।’
অভিযান শেষে ম্যাজিস্ট্রেট ও র্যা ব সদস্যরা যখন তিন কর্মচারীকে নিয়ে যাচ্ছিল এ সময় স’ানীয় কিছু ব্যক্তি দোকান ‘বন্ধ কর’ স্লোগান দিয়ে মিছিল বের করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এ সময় র্যা ব সদস্যদের ধমকে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
এদিকে বিকেল তিনটার দিকে জেলা প্রশাসক, মীর গ্রপের ব্যবস’াপনা পরিচালক আবদুস সালাম, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটগণ ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আবদুস সালাম অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রির যে অপরাধ করেছেন, তার পক্ষে কোনো ব্যবসায়ী কথা বলেননি। উপরন’ জেলা প্রশাসক তাকে এই অপরাধের জন্য তিরস্কার করেছেন।
এর কিছুক্ষণ পর মীর গ্রপের ব্যবস’াপনা পরিচালক আবদুস সালাম ও সেলস ম্যানেজার জানে আলমকে আধা ঘণ্টার মধ্যে জরিমানার ২০ লক্ষ পরিশোধ করার আদেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান। আধার ঘন্টার মধ্যে তারা উক্ত টাকা ম্যাজিস্ট্রেটকে বুঝিয়ে দিন। এ সময় মানবিক বিবেচনায় আটক অন্য দুই কর্মচারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুই কর্মচারী বলেন, ‘পণ্য কত দামে কেনা হয় এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। সেলস ম্যানেজার ও মালিক এগুলো দেখেন।’
এ সয় ম্যাজিস্ট্রেট আরো বলেন, চট্টগ্রামের চিনির ভোক্তাদের জিম্মি করে রেখেছিল মীর গ্রুপ। তারা আগামী ২৬ জুন পর্যন্ত এস. আলম থেকে ১০টি লটে ২০ হাজার মেট্রিক টন চিনি কেজি প্রতি ৪৬ টাকা ৮০ পয়সা করে অগ্রিম কিনে রেখেছে। যার মূল্য ৯ কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অথচ বাজারে সেসব চিনি বিক্রি করছে কেজি প্রতি ৫৮ টাকা ৫০ পয়সা করে। তাদের প্রতিদিন ২ হাজার মেট্রিক টন চিনি বিক্রি হয়। তাদের দুটি গুদামে মজুদ আছে ১১৪ টন চিনি।’
ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘এ হিসেবে তারা প্রতিদিন ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা লাভ করছে। ৪০ লাখ টাকা যদি তাদের খরচ ধরি তাহলে তাদের প্রতিদিন গড় লাভ ২ কোটি টাকা।’
তাহমিলুর রহমান আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের একমাত্র চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এস. আলম গ্রুপের উৎপাদিত চিনির ৮০ ভাগ চিনি আবদুস সালাম কিনে থাকেন। বাকি ২০ ভাগ চিনিও তিনি তার লোকদের দিয়ে ক্রয় করিয়ে থাকেন। ফলে চট্টগ্রামে একমাত্র চিনি বিক্রেতা আবদুস সালাম। এতে তিনি ক্রেতাদের জিম্মি করতে সক্ষম হয়েছেন।’ এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট প্রশ্ন রাখেন, এস.আলম শুধুমাত্র মীর গ্রুপের নিকট কেন চিনি বিক্রি করে?
তবে অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে মীর গ্রপের ব্যবস’াপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাথে আমার কর্মচারীদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা ৪৬ টাকা দামে যে চিনি ক্রয় করেছি সেগুলো এখনো গুদামে আসেনি। আমরা যে চিনি বিক্রি করছি তা ৫০ টাকা দামে কেনা। পরিবহন, গুদাম, ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য খরচ মিলে আরো ৪ টাকা খরচ আছে। তাই ৫৮ টাকা দামে চিনি বিক্রি করতে হয়েছে।’
এই ব্যাপারে তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘তাদের তো কোন চিনি মজুদ থাকেন না। সব বিক্রি হয়ে যায়। মে মাসের ক্রয় করা রশিদও পাওয়া গেছে। যেখানে চিনির মূল্য ছিল ৪৬ টাকা। এদেরকে জরিমানা করলে লাভ নেই। জেলে দেওয়া উচিত। তাদের মানসিকতা যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে শত অভিযানেও কোন কাজ হবে না।’
মাসুদ ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা সম্পর্কে ম্যাজিস্ট্রেট সুপ্রভাতকে বলেন, ‘মাসুদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী একজন সেকেন্ডারী পাইকারি ব্যবসায়ী। তিনি ৭৩ টাকা দামে কেনা ছোলা ৮০ আশি টাকা দামে বিক্রি করছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রতিদিন একটু একটু করে ছোলার দাম বাড়িয়ে থাকেন।’
এদিকে জানা যায়, জরিমানা ও তিন কর্মচারীকে আটকের ঘটনায় প্রতিবাদ করে দোকানপাট বন্ধ করে দেয় খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। পরে সন্ধ্যার দিকে তারা আবার দোকানপাট খুলে দেয়।
গতকালের অভিযানে একতা ট্রেডার্স, আদর্শ ভান্ডার, লক্ষী ভান্ডার ও মুক্তা স্টোরে অভিযান চালিয়ে তাদের কেনাবেচার রশিদ পরীক্ষা করা হয়।