সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারই ‘যথেষ্ট: ইনু
পক্ষকাল ডেস্কঃ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষায় প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রনায়কের কাছে ‘আর্জি জানানোর দরকার নেই’ মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, এজন্য বর্তমান সরকারই ‘যথেষ্ট’।
দেশের সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে তিনি দাবি করেন, সরকারের ‘শক্ত অবস্থানের কারণেই’ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ধর্মচর্চার অধিকার নিশ্চিত হয়েছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হামলার পর ‘তাদের দুই নেতা’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ‘হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য হস্তক্ষেপ’ চেয়েছেন বলে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার বরাতে খবর দিয়েছে বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদপত্র।
সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চান এক সাংবাদিক।
জবাব তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকার সম্প্রীতি রক্ষা করছে। কোরবানির পাশাপাশি যেভাবে পূজা উদযাপন করছে। সরকার নিরাপত্তা দিতে পারছে বলেই তারা তাদের ধর্ম চর্চার সুযোগ পাচ্ছে।
“সুতরাং মনে করি না বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান করতে বাইরের কোনো রাষ্ট্র নায়কের কাছে আর্জি করার প্রয়োজন আছে। আমরাই যথেষ্ট।”
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক নেতা ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসি) সাবেক এক ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উদ্ধৃত করে পিটিআইর প্রকাশিত ওই খবর রোববার প্রচার করে ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে হাসানুল হক ইনু বলেন, তারা জঙ্গি ‘লালন করতেন, পালন করতেন’। শেখ হাসিনার সরকার ‘অসাম্প্রদায়িকতায়’ বিশ্বাস করে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। আদিবাসী এবং ক্ষুদ্র জাতিস্বত্ত্বার অধিকারে বিশ্বাস করে বলেই একটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে।
“ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরে অতীতে যেভাবে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়েছিল, আজকে সেভাবে আর নেই। সরকার শক্তভাবে দমন করে তাদের ধর্মচর্চার অধিকার নিশ্চিত করেছে।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার উৎখাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চক্রান্ত চলছে অভিযোগ করে জাসদ নেতা ইনু বলেন, “সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবে তারা সাধারণ নাগরিকের গায়েও যেভাবে হাত দিচ্ছে, তেমনি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের গায়েও হাত দিচ্ছে।
“এতে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে না। দাঙ্গা লাগছে না। … কতিপয় জঙ্গিবাদি আক্রমণ করছে।”
তথ্যমন্ত্রী মনে করেন, ‘প্রকৃত বিরোধী’ দলের সঙ্গে ‘প্রকৃত সংলাপ’ প্রয়োজন বলে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট যে অভিমত দিয়েছে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।
বিএনপিকে ‘অগণতান্ত্রিক শক্তি’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে সংলাপ চলে। গণতন্ত্রের মুখোশ পরা, জঙ্গিবাদি-মৌলবাদি-উগ্রবাদি শক্তির পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে সংলাপ কোনো সুফল বয়ে আনে না। তাই জঙ্গিবাদি-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়, প্রয়োজন তাদের বিচার ও শাস্তি।”
‘হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে’
ইনু বলেন, তাকে যারা কাফনের কাপড় ও চিঠি পাঠিয়ে মৃত্যুর হুমকি দিচ্ছে তারা আসলে ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে’ ‘একটা খবর তৈরি করার চেষ্টা’ করছে।
“আমার বয়স প্রায় সত্তরের কোটায়। আমার দিন শেষ। সামনের দিকে এগুচ্ছি। আমি যে কয়দিন বাঁচি, সে কয়দিন মিতু আর পুরোহিতদের মতো সাধারণ মানুষ যাতে মারা না যায়, সেই ব্যবস্থা করে যাব,” বলেন তিনি।
মৃত্যুভয়ে ভীত নন জানিয়ে ইনু বলেন, “একজন মুসলমান হিসেবে হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে মনে করি। যারা আমার মৃত্যুর দিনক্ষণ ঠিক করে দিচ্ছেন, তারা খোদার উপর খোদকারি করছেন।
“মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। যেদিন মৃত্যু আছে, সেদিন ঘরের ভেতরে লুকিয়ে থাকলেও মৃত্যু হবে। জঙ্গিদের হাতে মৃত্যু থাকলে আমি সেটা ঠেকাতে পারব না। সাবধান থাকার দরকার, সাবধান আছি।”
‘বিএনপিকে দমনের সিদ্ধান্ত নেই’
জঙ্গি দমনে দেশজুড়ে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অভিযানের প্রথম দুই দিনে গ্রেপ্তার ৫৩২৪ জনের মধ্যে ৮৫ জন চিহ্নিত জঙ্গি, পৌনে দুই হাজার সুনির্দিষ্ট মামলায় অভিযুক্ত এবং বাকিরা সন্দেহভাজন।
“বিএনপিকে দমন করার কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। বিএনপির যারা জঙ্গিবাদ, গুপ্তহত্যা, আগুনযুদ্ধ, অন্তর্ঘাতের জড়িত, কেবল তাদের বিরুদ্ধেই মামলা পরিচালনা করা হচ্ছে।”
‘প্রকৃত খুনি ও সন্ত্রাসীদের’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে এবং ‘দোষারোপের রাজনীতি’ বন্ধ করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ঝিনাইদহ যাচ্ছেন তিন মন্ত্রী
সম্প্রতি হামলার শিকার সংখ্যালঘু পরিবারের পাশে ‘সরকারের কেউ দাঁড়ায়নি’ বলে এক সাংবাদিক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “একজন মন্ত্রী গেল কি না- সেটা বড় কথা নয়। প্রশাসন সঙ্গেসঙ্গেই গেল কি না- সেটা বড় বিষয়। পুরোহিত, সেবায়েত, খ্রিস্টান দোকানী হত্যায় আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হাজির হয়েছি, প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তারও করতে সক্ষম হয়েছি।”
মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মোহাম্মদ নাসিম এবং তিনি নিজে মঙ্গলবার ঝিনাইদহ যাবেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “যে সব জায়গায় ঘটনা ঘটেছে, সেই সব জায়গায় সরেজমিন উপস্থিত থেকে বোঝার চেষ্টা করব।”
গত ৭ জুন মঙ্গলবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় গ্রামের মেঠোপথে পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে (৬৯) গলা কেটে হত্যা করে মোটর সাইকেল আরোহী তিন যুবক।
‘সব খুনির ফাঁসির দড়ি প্রস্তুত’
গত দুই বছরে ব্লগার, প্রকাশক, শিক্ষক, ধর্মগুরু, চাকরিজীবীদের ওপর চালানো ২০টি জঙ্গি আক্রমণ ও গুপ্তহত্যার ঘটনায় ৭০ জনের বেশি আটক হয়েছে জানিয়ে ইনু বলেন, একটি মামলায় অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডসহ সাজা হয়েছে।
বাংলাদেশে কোনো খুনি ছাড় পাবে না- মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রত্যেক খুনির জন্য একটি করে ফাঁসির দড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমাকেও যদি মেরে ফেলা হয়, আমি এটা ভেবে নিশ্চিন্ত যে, আমাকে যারা হত্যা করবে তাদেরও বিচার হবে। সুতরাং আমার কোনো দুঃখ নাই। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
গত ৭-৮ বছরে জঙ্গি হামলায় জড়িতদের মধ্যে ৭৩ জনের বেশি আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে আপিল রয়েছে। আপিলে সাজা বহাল থাকলে সাজা কার্যকর করা হবে।
জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে সরকার ‘সজাগ’ দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকার ২৪ ঘণ্টা জেগে আছে, পাহারা দিচ্ছে। পাহারা দিচ্ছে বলেই বড় বড় স্থাপনাগুলোকে আমরা রক্ষা করতে পেরেছি। পাহারা দিচ্ছে বলেই আগুন যুদ্ধ, হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব থামাতে পেরেছি।”
জঙ্গি সন্ত্রাস গুপ্তহত্যায় বিএনপি-জাময়াতের অনেকের জড়িত থাকার প্রমাণ সরকারের হাতে আছে দাবি করে ইনু বলেন, “মাঠের অ্যাক্টর হচ্ছে, জেএমবি-জামায়াত-শিবির-আনসারুল্লাহ টিমের মত জঙ্গিদলগুলো, পরিচালক হচ্ছে জামায়াত, প্রযোজক হচ্ছে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাই না। এটা বিচারাধীন আছে।”