শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Daily Pokkhokal
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » বাংলাদেশ থেকে পাচার ১৪ হাজার কোটি টাকা
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » বাংলাদেশ থেকে পাচার ১৪ হাজার কোটি টাকা
৩৬৯ বার পঠিত
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বাংলাদেশ থেকে পাচার ১৪ হাজার কোটি টাকা

---পক্ষকাল ডেস্ক
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার এক বছরে প্রায় তিন গুণ বেড়ে গেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) নতুন হিসাব অনুসারে, ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১৭৮ কোটি ডলার বা ১৩ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা অবৈধ পথে বিভিন্ন দেশে চলে গেছে। আর ২০১১ সালে পাচার হয়েছিল অন্তত ৬০ কোটি ডলার, যা টাকার অঙ্কে চার হাজার ৬৩০ কোটি।
যে পরিমাণ অর্থ ২০১২ সালে অবৈধ পথে বাইরে চলে গেছে, তা বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের স্বাস্থ্য বাজেটের চেয়েও বেশি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে ১১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
জিএফআই ‘ইলিসিট ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: ২০০৩-১২’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করেছে। এতে বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে গত এক দশকে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে, তার প্রাক্কলন করা হয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচনের সময় যখন ঘনিয়ে আসে, তখন আসন্ন অনিশ্চয়তার কারণে অর্থ পাচার বেড়ে যায়। এ কারণেই ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বেড়েছে, আবার ২০১২ সালে বেড়েছে। যাঁরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্থসম্পদ গড়েন, তাঁরা টাকা পাচার করেন। এর পাশাপাশি সম্প্রতি দেশের বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নিজেদের পরিবার এবং সন্তানদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা মনে করছেন, তাঁরা যেভাবে ব্যবসা, কারখানা ও সম্পদ এ দেশে গড়ে তুলেছেন, তাঁদের সন্তানেরা তা পারবে না।
আইএমএফের এই সাবেক কর্মকর্তা মনে করেন, আগামী দিনেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। কোনো আইন করে এটা ঠেকানো যাবে না। কেননা, টাকা পাচারের বিষয়টি অনেকাংশে সুশাসনের সঙ্গে জড়িত।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জিএফআই উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ২০০২-২০১১ সময়কালের টাকা পাচারের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। বর্তমান প্রতিবেদনটি সেটিরই সংশোধিত ও হালনাগাদকৃত রূপ। হিসাবে কিছুটা সংশোধন হওয়ায় গতবারের থেকে এবারের হিসাবে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের পরিমাণের ক্ষেত্রেও বেশ পরিবর্তন দেখা গেছে।
যেমন, গতবারের হিসাব অনুসারে ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ২৮০ কোটি ডলার পাচার হয়েছিল। হালনাগাদ হিসাবে এটি কমে হয়েছে মাত্র ৬০ কোটি ডলার। একইভাবে নতুন হিসাবে ২০১০ সালে পাচার হয়েছে ৬৭ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা গতবারের হিসাবে ছিল ২১৯ কোটি ডলার। আর ২০০৯ সালে পাচার হয়েছে ১০৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা আগের হিসাবে ছিল ১৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। তবে ২০০৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সময়কালে গতবারের প্রাক্কলনের সঙ্গে নতুন প্রাক্কলনে খুব বড় ব্যবধান নেই।
অবৈধভাবে অর্থ বাইরে চলে যাওয়ার প্রাক্কলনে এক বছরের ব্যবধানে কেন এত বড় পার্থক্য দেখা দিল? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছিল জিএফআইয়ের কাছে। ই-মেইল জবাবে জিএফআইয়ের যোগাযোগ পরিচালক ক্লার্ক গাসকোয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিএফআই অর্থ পাচারের হিসাব নির্ণয় করে থাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিভিন্ন পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে। আইএমএফ নিয়মিতই এসব পরিসংখ্যান সংশোধন ও হালনাগাদ করে। ফলে জিএফআইকেও হালনাগাদ পরিসংখ্যান ধরে অর্থ পাচারের প্রাক্কলন করতে হয়। আর তাই এক বছরের ব্যবধানে সর্বশেষ চার বছরের পাচার হয়ে যাওয়া টাকার পরিমাণে অনেক পার্থক্য দেখা দিয়েছে। তবে পুরোটাই রক্ষণশীল হিসাব। পাচার করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ আরও বেশি হবে।’
জিএফআই ১৫১টি দেশের অর্থ পাচারের হিসাব প্রাক্কলন করেছে। এই তালিকায় বাংলাদেশর অবস্থান ৫১তম। নতুন প্রাক্কলন অনুসারে এক দশকে (২০০৩-২০১২) বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক হাজার ৩১৬ কোটি ডলার (এক লাখ কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। তার মানে এই সময়কালে গড়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে ১৩১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
আলোচ্য ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ২০০৬ সালে, যার পরিমাণ ২৬৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে ২০ হাজার ৫৭৬ কোটি। তারপর ২০০৭ সালে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ২৪৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার (১৮ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা)।
জিএফআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভ কার ও অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্পানজারস উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে টাকা পাচারের হিসাব নির্ণয় করেছেন। ডেভ কার এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থনীতিবিদ ছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন দেশের লেনদেনের ভারসাম্য ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেছেন। এসব পরিসংখ্যান নেওয়া হয়েছে আইএমএফের কাছ থেকে।
জিএফআই বলছে, ট্রেড মিসইনভেয়সিং বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চালানের গরমিলের মাধ্যমেই বেশি পরিমাণ অর্থ উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ পণ্য আমদানি-রপ্তানির চালানে প্রকৃত মূল্য আড়াল করে কমবেশি দেখিয়ে একদিকে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে মোটা অঙ্কের অর্থ দেশে না এনে বাইরেই রেখে দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও খাদ্যপণ্য আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই। কাজেই এসব পণ্য আমদানিতে বাড়তি মূল্য দেখিয়ে টাকা পাচার হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। আবার রপ্তানির অর্থ পুরোটা সঠিকভাবে দেশে না এনে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সুযোগ আছে। এটাও টাকা পাচার। জিএফআই যে ট্রেড মিসইনভয়েসিংয়ের কথা বলেছে, তা যথেষ্ট যৌক্তিক।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি: জিএফআই বলছে, ২০০৩-১২ সময়কালে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অন্তত ছয় লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার অবৈধ পথে বেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ২০১২ সালেই বেরিয়ে গেছে ৯৯ হাজার ১২০ কোটি ডলার, যা কিনা আগের বছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি।
জিএফআইয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৩-২০১২ সময়কালে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে চীন থেকে, যার পরিমাণ এক লাখ ২৫ হাজার কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে রাশিয়া, ৯৭ হাজার ৩৮৬ কোটি ডলার। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে নাম রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো (৫১ হাজার ৫২৬ কোটি ডলার) ও ভারত (৪৩ হাজার ৯৪৯ কোটি ডলার)। পঞ্চম স্থানে আছে মালয়েশিয়া (৩৯ হাজার ৪৮৭ কোটি ডলার)। আর ভারত থেকে ২০১২ সালে নয় হাজার ৪৭৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার অবৈধ পথে বাইরে চলে গেছে। প্রথম আলো



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)