উনি নামে প্রধানমন্ত্রী: খালেদা
পক্ষকাল সংবাদঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি এখন ‘প্রধানমন্ত্রী নন, নামে প্রধানমন্ত্রী’।
শনিবার রাজধানীর হোটেল পূর্বানীতে এক ইফতার অনুষ্ঠানে খালেদা বলেন, “বাংলাদেশে আজকে তিনি (শেখ হাসিনা) যে বসে আছেন, তিনি কি দেশের প্রধানমন্ত্রী না কি তিনি অন্য কোনো মন্ত্রী হিসেবে আছেন কি না, সেটা বলা মুশকিল।
“আজকে দেশের মানুষ মনে করে, তিনি (শেখ হাসিনা) প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি নামে প্রধানমন্ত্রী। তিনি অন্যের নির্দেশ পালন করেন। কাজেই তাকে প্রধানমন্ত্রী বলা যায় না।”
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ-র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, “প্রথম অপরাধীদের ধরে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেই অপরাধীরা রিমান্ড থেকে আর জেলখানা বা তাদের মা-বাবার কাছে ফিরে যায় না। সে সোজা চলে যায় ক্রসফায়ারে।
“সে এমন কিছু তথ্য দিয়ে দেয়, যার ফলে দেখা যাবে সরকারই জড়িয়ে যাবে। সেজন্য তাকে তখন ক্রসফায়ারে দেওয়া হয়।”
গত প্রায় দেড় বছরে দেশে ধারাবাহিকভাবে মুক্তমনা লেখক, অধ্যাপক, ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মগুরু ও ভিন্ন মতাবলম্বী মুসলিম নিহতের পর গত ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী খুন হন।
এরপর কয়েকদিন কথিত বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি।
শনিবার সকালেও মাদারীপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম নামে এক তরুণ নিহত হন, তিনদিন আগে এক কলেজশিক্ষককে হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে যাকে ধরিয়ে দিয়েছিল জনতা।
এখন গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে না অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, “আদালত নির্দেশ দিয়েছে কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে ধরতে পারবে না। সাদা পোশাকে লোকজন কেউ কিন্তু রাতে বেলা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। সেই নির্দেশও মানা হচ্ছে না। এরা আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত মানে না।
“উল্টো তারা আদালতকে নির্দেশ দেয়, আদেশ দেয় যে- তাদের কী করতে হবে, কী করতে হবে না। এই হচ্ছে দেশের অবস্থা।”
বর্তমানে দেশে কারও নিরাপত্তা ও অধিকার নেই দাবি করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের সেই উদ্দেশ্য ও মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য আমাদের সামনে নেই। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সকলের সমান অধিকার, মানুষের নিরাপত্তা কোনোটাই নেই।”
সরকারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি প্রধান।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার উদ্যোগে এই ইফতার পার্টি হয়।
বক্তব্যের পর জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান খান, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এর রকীব, খেলাফত সৈয়দ মজিবুর রহমান পেশোয়ারীকে নিয়ে এক টেবিলে বসে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।
ইফতারে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, সাহাদাত হোসেন সেলিম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জামায়াতে ইসলামীর শামীম সাঈদী, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ন্যাপের জেবেল রহমান গনি, গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম খান, কল্যাণ পার্টির এমএম আমিনুর রহমান, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ডিএল’র সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মুসলিম লীগের এএইচএম কামারুজ্জামান খান, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, আবুল কাশেম, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, এনডিপির মঞ্জুর হোসেন ঈসা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে আ স ম হান্নান শাহ, মাহবুবুর রহমান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রফিক শিকদার, নুরী আরা সাফা, আবেদ রাজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুকোমল বড়ুযা, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের নেতা এম এ আজিজ, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া প্রমুখ ইফতারে ছিলেন।