৫ জঙ্গির পরিচয়ে দেশ
হামলাকারীদের সবাই ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী ও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান
ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজানে হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের ৫ জনের ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের প্রকৃত নামধাম এবং পারিবারিক পরিচয়ও প্রকাশ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। যৌথবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত জঙ্গিরা সবাই ইংরেজিমাধ্যমের ছাত্র ছিলেন; সবাই উচ্চশিক্ষিত সুদর্শন তরুণ এবং ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। তাদের সবারই যোগাযোগ ছিল সমাজের উঁচু স্তরের মানুষের সঙ্গে। নিহত জঙ্গিদের মধ্যে একজন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক নেতার ছেলে। কেউবা পদস্থ সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীর সন্তান। পুলিশ ও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রকাশিত ছবি মিলিয়ে ওইসব জঙ্গির সম্ভাব্য পরিচয় প্রকাশ করেছে তাদের আত্মীয়-স্বজন ও ফেসবুক বন্ধুরা। প্রশাসনিকভাবে অবশ্য তাদের পরিচয়ের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি।শনিবার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল কমান্ডো অভিযানে নিহত ৬ জন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। হামলাকারী ৬ জঙ্গির প্রত্যেকের বয়স ২২ থেকে ৩০-এর মধ্যে। আকাশ, বিকাশ, রিপন, বাইক হাসান ওরফে ডন ও বাঁধন নামে জঙ্গিরাই ওই রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে ২০ জনকে গলা কেটে হত্যা করে। পুলিশ এখনো নিহত এক হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেনি।
আইএসের বরাতে সাইট ইন্টেলিজেন্স যে ৫ হামলাকারীর নাম বলেছে তারা হলো আবু উমায়ের, আবু সালমা, আবু রাহিক, আবু মুসলিম ও আবু মুহারিব। এদিকে অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত জঙ্গিদের বিষয়ে তাদের আগের ছবি এবং মৃত্যুর পরের ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে নাম বলা হচ্ছে- রোহান ইমতিয়াজ, মীর সাবিহ মুবাশ্বের, নিব্রাস ইসলাম, আন্দালিব আহমেদ, রাইয়ান মিনহাজ ও স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজানের সেফ (রাঁধুনী) সাইফুল ইসলাম চৌকিদার।
জঙ্গিদের ফেসবুক প্রোফাইল নিয়েও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে সর্বত্র। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত পাঁচ তরুণের মধ্যে তিনজনের বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেছে। এদের মধ্যে রোহান ইমতিয়াজ, মীর সাবিহ মুবাশ্বের, নিব্রাস ইসলাম স্কলাসটিকা স্কুল ও নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। হামলাকারীদের মধ্যে তিনজন অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মালয়েশিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন বলেও ফেসবুকের কল্যাণে জানা গেছে।
অন্যদিকে পুলিশ হামলাকারীদের যে ছবি প্রকাশ করেছে তার মধ্যে একজন ওই রেস্টুরেন্টের রাঁধুনী বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা। তারা বলছেন, যে পাঁচটি লাশের ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তাদের একজন সাইফুল ইসলাম চৌকিদার দেড় বছর ধরে ওই রেস্টুরেন্টে শেফ হিসেবে কাজ করছিলেন। পাঁচজনের মধ্যে শেফের বেশে সাদা অ্যাপ্রোন পরা ব্যক্তি সাইফুল ইসলাম। পুলিশের পাঠানো ছবি গণমাধ্যমে আসার পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা ব্যক্তিকে সাইফুল বলে শনাক্ত করেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় থাকা তার পরিবারের সদস্যরা। এই খবরে ফেসবুকেও তাকে নিয়ে পুলিশের দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে।
সাইফুলের স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনিয়া আক্তার (২৭) জানান, তার স্বামী ১০ বছর জার্মানিতে থাকার পর দেশে ফিরে দেড় বছর আগে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় পিজা তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ শুরু করেন। গত শুক্রবার বিকালে তার সঙ্গে সাইফুলের শেষ কথা হয়। এরপর থেকে ফোন বন্ধ পাচ্ছিলেন তারা।
এদিকে গত শুক্রবার (ঘটনার দিন) গভীর রাতে আইএসের কথিত নিউজ এজেন্সি ‘আমাক’-এর বরাত দিয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণকারী সাইট ইন্টেলিজেন্সের খবরে বলা হয়েছিল- হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের হামলার দায়িত্ব নিয়েছে আইএস। জিহাদিরা (হামলাকারীরা) ওই রেস্টুরেন্টে থাকা ২০ জনকে গলা কেটে হত্যা করেছে। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের পর হলি আর্টিজান থেকে ২০ জনেরই গলা কাটা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এই অভিযানের আগেই হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের ভেতরের হত্যাযজ্ঞ এবং গলা কাটা মৃতদেহের ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল ওই সাইট ইন্টেলিজেন্সে। গত শনিবার দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে নিহত জঙ্গিদের মৃতদেহের যে ছবি সরবরাহ করা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে ‘আমাক’-এ প্রকাশিত হামলাকারীদের চেহারার অনেকাংশেই মিল পাওয়া গেছে।
আইএসের বরাত দিয়ে গুলশান রেস্তোরাঁয় ‘হামলাকারীদের’ ছবি ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’ প্রকাশের পরই হামলাকারীদের কথিত পরিচয় প্রকাশ হতে শুরু হয় ফেসবুকে। ৫ হামলাকারীর মধ্যে বেশ কজনকে চিহ্নিত করেন তাদের নিকটজনরা।
হামলা পরিচালনাকারী দলের যে ছবি সাইট ইন্টেলিজেন্স প্রকাশ করে তার মধ্যে দুজন স্কলাসটিকা স্কুলের সাবেক ও বর্তমান ছাত্র বলে ফেসবুকে দাবি করেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। তারা হলেন রোহান ইমতিয়াজ ও মীর সাবিহ মুবাশ্বের। এই দুই তরুণ বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ বলে দাবি করেন তাদের স্বজনরা।
ফেসবুকের একটি গ্রুপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কয়েক ছাত্রসহ অনেকেই দাবি করেন ইমতিয়াজ খান বাবুল নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে রোহান ইমতিয়াজই নৃশংস এ হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। ২০ বছর বয়সী রোহান স্কলাসটিকায় পড়া শেষ করে পড়ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। তার মা-ও নামি ওই স্কুলের শিক্ষক। আওয়ামী লীগ নেতা ইমতিয়াজ বাবুলের নির্বাচনী লিফলেটের তথ্যানুযায়ী, তিনি বর্তমানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি একাধারে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ও সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ফিফার রেফারি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। গত বছর অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা মহানগর উত্তরের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে (মোহাম্মদপুর এলাকা) এই ইমতিয়াজ বাবুলই আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সফিকুল ইসলাম সেন্টু নির্বাচিত হন।
ইমতিয়াজ খান বাবুলের শ্যালক কামাল পাশাও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। মোহাম্মদপুরে জোড়া খুনের মামলায় কামাল পাশা এখন কারান্তরীণ বলে জানা গেছে।
নিহত রোহানের স্বজনদের অভিযোগ, গত ডিসেম্বর মাস থেকে রোহান নিখোঁজ ছিলেন, জানুয়ারি মাসে এ বিষয়ে থানায় জিডিও হয়েছে। ছেলের ফিরে আসার আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন তার বাবা বাবুল। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুলের মন্তব্য জানতে বহু চেষ্টার পরও তাকে পাওয়া যায়নি। পুলিশও নিশ্চিত করেনি রোহানের পরিচয়। তবে রোহান ইমতিয়াজের আগের দেওয়া ছবির পাশে আইএসের প্রকাশিত একটি ছবি দিয়ে ফেসবুকে তাদের চেহারার মিল দেখিয়েছেন মাহবুব রাজীব নামে এক ব্যক্তি।
সাইট ইন্টেলিজেন্স নিহত হামলাকারী হিসেবে জঙ্গির যে ছবি প্রকাশ করে তার মধ্যে সম্ভাব্য একজন মীর সাবিহ মুবাশ্বের। এ লেভেল পরীক্ষার আগে গত মার্চে মুবাশ্বের নিখোঁজ হয় বলে ফেসবুকের কল্যাণে জানা গেছে। এ বিষয়ে থানায় জিডিও করা হয়। ওই সময় সংবাদপত্রেও সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। পরিবারের সঙ্গে তার এক ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে মুবাশ্বেরের পরিচিতজনরা। এতে তার ছবির সঙ্গে বেরিয়ে আসে তার পারিবারিক বিস্তারিত তথ্যও। জানা গেছে, মুবাশ্বেরের বাবা মীর হায়াত কবির অ্যালকাটেল-লুসেন্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তা। মা খালেদা পারভীন একটি সরকারি কলেজের শিক্ষক। বড় ভাই পড়ছেন কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ফেসবুক ঘেঁটে আরও জানা গেছে, শনিবার সকালে যৌথবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত ৬ জনের একজন নিব্রাস ইসলাম। সে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। তার সহপাঠীরা শনাক্ত করে ফেসবুকে তার ছবি ও পরিচয় সামনে এনেছেন। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমে তার পরিচয় প্রথম প্রকাশ করেন এক প্রবাসী। নিব্রাসের ছবি ও সাইটের দেওয়া ছবি পাশাপাশি দিয়ে শেয়ার করা হচ্ছে ফেসবুকে। বলা হচ্ছে, সে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সার্ভিসেসের কোষাধ্যক্ষ ছিল। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান নিব্রাস পড়েছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুলে। মোনাশে মন না টেকায় দেশে ফিরে নিব্রাস ভর্তি হয় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার আগ্রহ ছিল ফুটবলে। রাজধানীর ওয়ারী এবং উত্তরায় তার ব্যবসায়ী বাবার একাধিক বাড়ি রয়েছে। নিব্রাসের তিন চাচার মধ্যে একজন সরকারের উপসচিব, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, আরেকজন বিজ্ঞানী।
শনিবারের যৌথ হামলায় নিহত ছয়জনের একজন আন্দালিব আহমেদ। তাকে শনাক্ত করা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মোনাশ ইউনিভার্সিটিরই আরেক ছাত্র হিসেবে। ফেসবুকে তার আগের ও সাইটের দেওয়া ছবি পাশাপাশি দিয়ে মিল ধরিয়ে দিয়েছেন অনেকেই। মোনাশে যাওয়ার আগে আন্দালিব পড়েছে ঢাকার নামকরা ইংরেজিমাধ্যম স্কুল সানিডেলে।
নিহত পাঁচ জঙ্গির একজনের ছবির পাশে রাইয়ান মিনহাজ নামে এক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের নামও ফেসবুকে এসেছে। তিনিও এক সময় মালয়েশিয়ায় মোনাশে পড়েছেন। ফেসবুকে নিব্রাসের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তবে ঢাকার প্লে পেন আর আগা খান স্কুলের মতো পশ্চিমা ঘরানার ব্যয়বহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে আসা এই মিনহাজই নিহত পাঁচজনের একজন কিনা, তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ওই রেস্টুরেন্টের শেফের পোশাক পরা অবস্থায় নিহত যে একজন জঙ্গিকে দেখা গেছে তার সম্পর্কে গতকাল পুলিশের আইজি বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ফেসবুকে প্রকাশিত নিহত জঙ্গিদের পিতামাতা, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের প্রোফাইল থেকে তাদের ছবি অসংখ্যবার শেয়ার হয়; কিন্তু এখন তাদের সেই প্রোফাইলগুলোও অকার্যকর দেখা যাচ্ছে। পুলিশের পাঠানো বার্তায় হামলাকারীদের যে নাম প্রকাশিত হয়েছে সেসব নামের সঙ্গে এসব প্রোফাইলধারীর নামেরও মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
তদন্তে গুলশানে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সক্রিয় ৫ সদস্যের (থান্ডারবোল্ট অপারেশনে নিহত) নাম ছাড়াও হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের নাম এবং চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। কিছুদিন আগে কুড়িগ্রামে ধর্মান্তরিত মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলায়ও এরা সম্পৃক্ত ছিল। ওই সময় এ মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে নিহত ডন ও বাঁধনের নাম বেরিয়ে আসে। ডন রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা মামলারও আসামি ছিল। কিন্তু এরা এতই সতর্ক ছিল যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এদের নাগাল পাচ্ছিল না। নিষিদ্ধ এই সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্যই দেশের উত্তরাঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিটি হামলার সঙ্গে জড়িত।
শনিবার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কমান্ডো অভিযানে নিহত ৬ জন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। হামলাকারী ৬ জঙ্গির প্রত্যেকের বয়স ২২ থেকে ৩০-এর মধ্যে। এরা হলো আকাশ, বিকাশ, রিপন, বাইক হাসান ওরফে ডন ও বাঁধন। পুলিশ এখনো নিহত এক হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেনি।
গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জিম্মিদের উদ্ধার অভিযানকালে গুলিতে আহত পুলিশ কনস্টেবল প্রদীপ চন্দ্র দাস ও আলমগীর হোসেন এবং মাইক্রোবাস চালক আব্দুর রাজ্জাককে দেখতে গিয়ে পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বলেন, ‘গুলশানে হামলাকারীরা সবাই জেএমবির সদস্য হিসেবে পুলিশের তালিকাভুক্ত। নিহত হামলাকারী ৬ জনের মধ্যে ৫ জনকে পুলিশ জঙ্গি হিসেবে আগে থেকেই খুঁজছিল। তবে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকতে পারে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, হামলার আগাম কোনো গোয়েন্দা খবর ছিল না। হামলার পরই আমরা খবর পেয়েছি। তবে ওই সময় হামলাকারীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ওই রেস্টুরেন্টে হামলায় অংশগ্রহণকারীরা স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য। ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। হামলাকারীরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া উচ্চশিক্ষিত তরুণ। তারা সবাই ধনী পরিবারের সন্তান। এরা কেউই কখনো মাদ্রাসায় পড়েনি। কমান্ডো অভিযানে ৬ হামলাকারী নিহত হলেও একজনকে জীবিত আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে যে দুজনের নাম উঠে এসেছে তারা হলো জাহাঙ্গীর ও সাকিব মাস্টার (ডাক নাম)। এরা উত্তরাঞ্চলে অবস্থান করে এ পর্যন্ত বেশকিছু নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল জাহাঙ্গীর উত্তরাঞ্চলে ছদ্মনাম ‘রাজীব ঘোষ’ ধারণ করে অবস্থান করছে। জাহাঙ্গীরের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাঘাটায়। এই দুজনকে ধরতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও জানা গেছে।