বুধবার, ৬ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ » আইএসের হুমকির ভিডিওতে ২ বাঙালির পরিচয় শনাক্ত!
আইএসের হুমকির ভিডিওতে ২ বাঙালির পরিচয় শনাক্ত!
একজন ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগীঅনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশে আবারও হামলার হুমকি দিয়ে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বরাত দিয়ে যে ভিডিও সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপ প্রকাশ করেছে; সে ভিডিও’র তিন তরুণের মধ্যে দুজনের পরিচয় উঠে আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনজনের মধ্যে একজন তাহমিদ রহমান সাফি, আরেকজন তাওসিফ হোসেন বলে নিশ্চিত করেছেন তাদের বন্ধু ও পরিচিতজনেরা।
তবে একজনের মুখমণ্ডল ঢাকা থাকায় তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
ভিডিওতে তিন তরুণ বাংলায় এবং ইংরেজিতে কথা বলছে। ভিডিওটি কোথায় ধারণ করা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় নি, তবে সাইটের ভাষ্য এটি দায়েশের কথিত রাজধানী সিরিয়ার রাজধানী রাকা থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।
ভিডিও’র প্রথম তরুণের পরিচিতজন ও বন্ধুরা ফেসবুকে তার পরিচয় প্রকাশ করেছেন। ফেসবুকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রথম তরুণ আগে বাংলাদেশের বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণফোনে চাকরি করেছে। বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত সঙ্গীত বিষয়ক রিয়েলিটি-শো ‘ক্লোজআপ ওয়ানের’ প্রথম সিজনের মাধ্যমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল তার। ক্লোজআপ ওয়ানে তার গাওয়া ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে এ গানটি সেইসময় শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। সেই গানটির ভিডিও ইউটিউবে এখনও রয়েছে। গানের ভিডিও লিঙ্ক- https://youtu.be/8u21F8AO-3Y। এই ভিডিওটির শেয়ার দিচ্ছেন পরিচিতরা।
তাহমিদের পিতা শফিউর রহমান ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। ফেসবুকে এ নিয়ে একাধিক পোস্টে দাবি করা হয়েছে। তবে তাহমিদের কোনও অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়নি। তার নাম দিয়ে সার্চ দিলে যে পেইজ আসে সেখানে দেখা গেছে তার কাছ থেকে নিয়ে অন্যরা আল কায়েদা নেতার বক্তব্য শেয়ার করেছে।
তাহমিদের আগের ছবি এখনকার ছবির সঙ্গে মিলিয়ে তার কাছের মানুষরা তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। তবে সে কোথায় ছিল এ বিষয়ে কেউই জানতেন না। অনলাইনে পাওয়া সাফি’র সিভি অনুযায়ী তার ঠিকানা বারিধারা এবং গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি এবং নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পড়া শেষ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে।
তাদের দুজনের পরিচয় ফেসবুকে প্রকাশ করে তার এক বন্ধু লিখেছেন- কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা। যে ছেলে এভাবে গান করতে পারে সে কীভাবে এসব হত্যাকাণ্ডে আনন্দ পেতে পারে? আরেক ফেসবুক বন্ধু তাদের পরিচয় জানিয়ে লিখেছেন, এখন এরা আইএস জঙ্গি! গণতান্ত্রিক সরকারকে এরা তাগুদি সরকার মনে করে। এরা এখন দুনিয়াকে নরক বানানোর স্বপ্নে বিভোর!
জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা করছেন প্রবাসী নির্ঝর মজুমদার। তিনি ভিডিও দেখার পর বলেন, আইসিসের ভিডিওতে আহমেদ সাফি নামের যে ছেলেকে নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে, সেই ছেলেও গ্রামীণফোনেই চাকরি করতো। তবে কোন পদে বা কীসে চাকরি করতো সেটা জানতে পারিনি এখনও।
এদিকে আরেক ভিডিও বার্তাধারী তাওসিফ হাসান এর আগে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল শেষ করে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র শিক্ষার্থী ছিল। তার ফেসবুক পোস্ট থেকেই দেখা যায় গত ২০১৪ সাল থেকে তার বন্ধুরা যোগাযোগ করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখা যায়, তাওসিফ ২০১৩ সালে হেফাজতের তাণ্ডবের সময় প্রপাগাণ্ডা হিসেবে শতশত লাশের যে বানানো ছবি অনলাইনে প্রচার করা হয়েছিল সেটা শেয়ার করেছিল এবং সরকার যে কোনওভাবে সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করবে এবং তখনকার পরিস্থিতির ভুল বিবরণ দিয়ে ও অতিরঞ্জিত করে পোস্ট দিয়েছিল।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনার পর সাইট ইনটেলিজেন্সের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ৫ হামলাকারীর ছবি প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয় বের হয়েছিল। আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই নতুন করে হুমকিদাতা তিন তরুণের ভিডিও দেখে দু’জনকে শনাক্ত করে তার পরিচিতজনেরা।
প্রকাশিত ভিডিওতে তাওসিফ গুলশানে হামলাকারীরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন বলে উল্লেখ করে শুকরিয়া আদায় করতে ‘জাজাকাল্লা খায়ের’ বলে। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নানা পোস্টে এই শব্দটি একাধিকবার পাওয়া যায়।
মঙ্গলবার এক ভিডিওবার্তায় তিনজনকে শুক্রবারের হামলা সম্পর্কে বক্তব্য দিতে শোনা যায়। তৃতীয়জনের মুখ ঢাকা থাকায় পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ভিডিওতে আইএসএর বার্তা ও মতবাদের প্রচারে আরবির সঙ্গে বাংলা তর্জমাও দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আইএস এর হামলার নমুনার সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির ছবিও। এতে সমালোচনা করা হয়েছে বাংলাদেশের সরকার ও গণতন্ত্রের।
ভিডিওতে এক তরুণকে বলতে শোনা যায়, ‘শেখ আদনানির’ নির্দেশে তারা ‘খ্রিস্টান, ইহুদি ক্রুসেডার ও তাদের মিত্রদের’ বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ করছে এবং তা কোনোভাবেই ‘কৌতুক নয়’।
গত শুক্রবার রাতে একদল অস্ত্রধারী জঙ্গি গুলশানের ওই ক্যাফেতে হামলা চালালে দেশি বিদেশি অতিথিরা সেখানে জিম্মি হন। হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনের লাশ পাওয়া যায় জবাই করা অবস্থায়। আইএস ওই হামলার দায়ী স্বীকার করেছে বলে হামলার রাতেই খবর দেয় সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপ। নিহত কয়েকজনের ছবি এবং পরে হামলাকারী হিসেবে পাঁচজনের ছবিও তারা প্রকাশ করে।