বুধবার, ১৩ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র
পক্ষকাল সংবাদঃ
বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে বেড়ে ওঠা জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের ঢাকা সফরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তার বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি সহায়তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। এর মধ্যে একটি ছিল বাংলাদেশের জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সম্পর্কে তথ্য প্রদান। প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেওয়ার বিষয়ে একমত হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ ছাড়া বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের ব্যাপারেও গুরুত্ব দেন তিনি। বৈঠকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র মিশনের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু তনয় হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কেও বিস্তারিত জেনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত ২৫ এপ্রিল জুলহাজ মান্নান ও তনয়কে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা।
এদিকে ঢাকা সফর সম্পর্কে এক টুইট বার্তায় নিশা দেশাই জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে এবং সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলাগুলোর তদন্তে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা দিতে পারে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে গুলশানে হলি আর্টিসানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইএসের মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের কট্টর অনুসারী রয়েছে। এ অনুসারীরা যে কোনো উপায়েই হোক অন্যান্য দেশে আইএস অনুসারীদের সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এ বিষয়টিও গুলশানে হামলার ঘটনার পর স্পষ্ট হয়েছে। তার মতে, স্থানীয়ভাবে সংগঠিত জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। স্থানীয় জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের তথ্য পেতে যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে সক্ষম বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া সন্ত্রাসী হামলার তদন্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আধুনিক কৌশল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনেও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রস্তাব দেন। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়েরও প্রস্তাব আসে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে বেড়ে ওঠা জঙ্গি গ্রুপগুলোর আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সম্পর্কে তথ্য পেতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাবকে ইতিবাচক উল্লেখ করা হয়। সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে তা সন্ত্রাসবাদ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র তথ্য দেবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা জানান।
গুলশানে হামলার পর জঙ্গি গ্রুপগুলোর আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা অর্জনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আগেও চালানো হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মত দেয় বাংলাদেশ পক্ষ। প্রয়োজন বিবেচনায় ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আয়োজন হতে পারে বলে মত দেওয়া হয়। জিরো টলারেন্স নীতিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে যৌথ সহায়তার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে বলেও উভয় পক্ষ একমত হয়। তবে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের প্রস্তাবটি পরবর্তী সময়ে বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানোর অনুরোধ করেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। এ তদন্তের ব্যাপারে তাকে বিস্তারিত অবহিত করা হয়। তিনি এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করে তদন্ত সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য যুক্তরাষ্ট্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন বলে জানান।
বৈঠকে বাংলদেশে কর্মরত কূটনীতিক এবং বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। সার্বিকভাবে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন নিশা দেশাই বিসওয়াল।
অপর একটি সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠকে নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশে জঙ্গিদের অবস্থান ও সন্ত্রাসবাদ দমনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। বাংলাদেশে ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্বেগের বিষয়টিও অবহিত করেন। বৈঠকগুলোতে জঙ্গিবাদের উত্থানের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের বিষয়েও গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে জঙ্গিদের অর্থদাতা ও মদদদাতাদের খুঁজে বের করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা ত্যাগের আগে নিশা দেশাই বিসওয়াল কয়েকটি সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও জানা গেছে।
ঢাকা ত্যাগের মুহূর্তে একাধিক টুইট করেন নিশা দেশাই। সফরকালে তিনি কূটনীতিক ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও টুইট বার্তায় জানান। সার্বিকভাবে এবারের বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থন ও সহযোগিতার বিষয়টি জানানো হয়েছে। সফরকালে হলি আর্টিসান চত্বর পরিদর্শন ও জঙ্গিদের হাতে নৃশংসভাবে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টিও টুইট বার্তায় উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নিশা দেশাই বিসওয়াল শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।