মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ব্যাংক-বীমা » বাংলাদেশ ব্যাংকের জড়িতরা চিহ্নিত, দালিলিক প্রমাণ হাতে নিয়েই গ্রেফতার
বাংলাদেশ ব্যাংকের জড়িতরা চিহ্নিত, দালিলিক প্রমাণ হাতে নিয়েই গ্রেফতার
পক্ষকাল ডেস্ক
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০ জনেরও বেশি কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিমান, স্থল ও নৌ বন্দরগুলোয় সংশ্লিষ্টদের ছবি ও বায়োডাটা দেওয়া হয়েছে তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে। দালিলিক প্রমাণ হাতে নিয়েই হোতাদের গ্রেফতার করা হবে।
তবে তাদের দেশত্যাগের বিষয়টি লিখিত না মৌখিক সেটা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তদন্তে সংশ্লিষ্ট পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় চুরি, আইসিটি ও মানি লন্ডারিংয়ের মতো তিন ধরনের অপরাধ তদন্ত করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
তদন্তে সংশ্লিষ্টরা জানান, রিজার্ভ চুরির রহস্য উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে সিআইডি। এ ঘটনার তদন্তে অনেকদূর এগিয়েছেন তারা। যেহেতু ঘটনাটির সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, সেজন্য কিছুটা সময় লাগছে তদন্তে।
তদন্তে সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে দেশে ও দেশের বাইরে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেরও একটি চক্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। এখন তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সবকিছু হাতে নিয়েই হোতাদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। রিজার্ভ চুরির হোতারা পার পাবে না বলেও জানান তিনি।
সিআইডি’র ওই কর্মকর্তা আরও জানান, চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি করা হয়। তারা হলো- হ্যাকার, মানিলন্ডার, নেগোশিয়েটর ও ইনসাইডার।
মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টির তদন্ত প্রায় শেষ। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) কর্তৃপক্ষই মানিলন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত। হ্যাকিংয়ের বিষয়টিও অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। হ্যাকারদের ম্যালওয়ারের মাধ্যমে আক্রান্ত ৩৫টি ডিভাইস শনাক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে বসে পরিকল্পিতভাবে যারা হ্যাকারদের সার্ভারে প্রবেশ করার সুযোগ করে দিয়েছিল সেই ইনসাইডার বা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। কিভাবে হ্যাকাররা হ্যাকিং করেছিল সেটা বের করা হবে।
তদন্তে সংশ্লিষ্টরা জানান, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ছাড়াও আটটি দেশের নাগরিকরা জড়িত। এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ২০ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। দালিলিক প্রমাণগুলো সংগ্রহ করেই তাদের গ্রেফতার করা হবে। অন্যদিকে, ফিলিপাইন, হংকং, ম্যাকাও, চীন, শ্রীলংকা, মিসর, সিঙ্গাপুর ও জাপানের প্রায় ৪০ নাগরিককে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা এই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত।
তদন্তে সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত বিদেশি নাগরিকদের সম্পদ জব্দ করতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট জারি করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ মে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব চিঠি দেওয়া হয়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার ও রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্ত দলের তদারক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ হেল বাকী বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সরাসরি জবাব না দিয়ে আবদুল্লাহ হেল বাকী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, তদন্তের প্রয়োজনে যেকোনও সময় তাদের প্রয়োজন হতে পারে। যখনই প্রয়োজন তখনই যাতে তাদের পাওয়া যায় সেটা তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা এখনই বলা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের যে চরম গাফিলতি ও অবহেলা ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
সিআইডি ছাড়াও রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পুলিশ সদর দফতর, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। সবগুলো বিভাগের একটি সমন্বিত টিম এ তদন্ত কাজ চালাচ্ছে। অর্থ চুরির ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত টিমের