বুধবার, ২০ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » গুলশানে হামলার সময় তারেক রহমান পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল
গুলশানে হামলার সময় তারেক রহমান পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল
iপক্ষকাল ডেস্কঃ গুলশানে হামলার সময় তারেক রহমান পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তারেক রহমান পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে অনেকের সঙ্গে এবং তার এক কাজের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম বলেছেন, এই হামলায় বিএনপি নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।মঙ্গলবার সংসদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার নিন্দা প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় একথা বলেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্যে আপত্তি জানান সেলিমসহ আরও কয়েকজন সংসদ সদস্য।
গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় এবং সৌদি আরবের মদিনায় ও ফ্রান্সের নিস শহরে জঙ্গি হামলার নিন্দা জানিয়ে ওই প্রস্তাব তোলেন শেখ সেলিম।
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার জন্য বিএনপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে তিনি বলেন, “যখন গুলশানে ঘটনা ঘটেছিল তখন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে অনেকের সঙ্গে এবং তার এক কাজের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
“এই হামলার পরে খালেদা জিয়া বলেছে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তিনি জঙ্গিদের আড়াল করতে এটা বলেছে কি না, পরোক্ষভাবে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না তা খুঁজে দেখতে আমি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে বলব।”
SK+Selim.jpgশেখ সেলিম বলেন, “খালেদা জিয়া বলেছে, এটা রক্তাক্ত অভ্যুত্থান। তার মানে তিনি রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিলেন কি না সেই প্রশ্ন এসে যায়। ঘটনার পরে সারা বিশ্ব যখন নিন্দা জানিয়েছে, খালেদা জিয়া ঘটনার নিন্দা না জানিয়ে সরকারে পদত্যাগ চেয়েছেন।”
বিএনপির ঐক্য প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি-জামাত নব্য মুসলিম লীগ। এরা জঙ্গি। এই জঙ্গিদের সাথে কোনো ধরনের ঐক্য হতে পারে না। বিএনপি আর জামাতের সাথে কোনো পার্থক্য নেই। এদের সাথে কোনো আলোচনা নেই। কোনো সম্পর্ক নেই। এরা এদের মত থাকুক। এদের পর্যদুস্ত করেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলব।”
গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারীদের ধরতে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ারও আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “নর্থ-সাউথ মানুষ শিক্ষা দেয় না, তারা জঙ্গি শিক্ষা দেয়। সরকারকে বলব, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অপরাধী আছে, অবিলম্বে তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা হোক। ”
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পিছনে বিএনপির ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও।
তিনি বলেন, “এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ঘটনার পেছনে ঘটনা রয়েছে। ২০০৮ সালে যখন শেখ হাসিনার নেতৃতত্বে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি, তখন থেকে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়া নির্বাচনে হেরে চক্রান্ত শুরু করেছিলেন। অস্বাভাবিক সরকার আনার জন্য এবং অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চক্রান্ত শুরু করেছিলেন। এদের নীতি হচ্ছে- অস্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি কর, সরকার উৎখাত কর এবং অস্বাভাবিক সরকার আন।
“বিডিআর হত্যা, চাঁদে সাঈদী, আগুন সন্ত্রাস এর ধারাবাহিকতায় শোলাকিয়া এবং গুলশানের ঘটনা। অতীতের সকল ঘটনার সাথে শোলাকিয়া ও গুলশানের ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। এরা আগুন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে কৌশল বদল করেছে। মানুষ হত্যা করেছে। পুরোহিত, সুফীবাদী, মুক্তচিন্তার মানুষ, হত্যা করেছে।”
খালেদা জিয়া ‘আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিলে’ অনেক আগে জঙ্গিবাদ সমূলে উৎখাত করা যেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট বাংলাদেশে ‘সন্ত্রাসবাদের হোতা’ দাবি করে তাদের সঙ্গে ঐক্য প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ফারুক খান।
বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের বিরোধিতা দীপু মনি বলেন, “যারা জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা, অর্থের যোগানদাতা, জঙ্গিবাদের হোতা তাদের সাথে ঐক্যের প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের নেতাদের নাকি গুম করা হচ্ছে। তাহলে কি তথাকথিত এই গুম হওয়া নেতারা জঙ্গি হয়ে গেছেন?”
জঙ্গিবিরোধী ঐক্য প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সুর মেলালেও গুলশান সঙ্কটের জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, “গত তিনমাস ধরে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড দেখছি। মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ১৫ জন গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে। মসজিদের ইমাম, পুরোহিত, সেবায়েত, খ্রিস্টান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হত্যা হয়েছে।
Parlament.jpg”আমরা তখন বলেছিলাম, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সরকারকে সতর্ক করেছিলাম। সরকার তখন সতর্ক হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও তৎপর হয়ে এর গভীরে গেলে আমরা গুলশান-শোলাকিয়ার ঘটনা এড়াতে পারতাম।”
জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে বাবলু বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতীয় ঐক্য হয়েছে। হ্যাঁ, একটা জাতীয় ঐক্যের কনসেপশন সৃষ্টি হয়েছে। এটা কংক্রিট কিছু না। কংক্রিট ফর্মে নিতে হবে।”
“যারা সন্ত্রাসী, অগ্নি সন্ত্রাস করেছে, জ্বালাও-পোড়াও করেছে তাদেরকে বাদ দিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছিলাম তাদের সবাইকে নিয়ে আলোচনা করতে হবে। জাতীয় সংলাপ ডাকতে হবে। তাহলে মানুষ এটা দেখবে। সকলের মধ্যে স্বস্তি আসবে।”
গুলশান হামলার মাধ্যমে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন বিএনএফের এসএম আবুল কালাম আজাদ।
“সংসদের প্রতিনিধিত্বমূলক দলগুলোকে নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী সংসদ কমিটি গঠন করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে জনগণকে সাথে নিয়ে কমিটি করতে হবে।”
জাসদের মঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, “আমাদের এখানে জঙ্গি তৎপরতার মূলে রয়েছে জামাত ও তার ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি। আর তাদের মাথার ওপর ছাতা ধরে আছে বিএনপি ও খালেদা জিয়া। পাপিষ্ঠ খুনিদের সাথে কোনো ঐক্য হতে পারে না।
“ঐক্য যেটা হওয়ার সেটা হয়ে গেছে। সেই ঐক্যকে আরও সামনের দিকে নিতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এখানে কিছু একটা হলেই টুকটাক করে নিশা দেশাইকে পাঠিয়ে দেন। ফ্রান্সের নিস শহরে কি নিসা দেশাইকে পাঠিয়েছেন? বাংলাদেশ অনেক ভালোভাবে মোকাবেলা করেছে। বাংলাদেশের মানুষ নিজেরটা নিজেরাই পারে। এখানে অযাচিত ছবক দিতে যেয়েন না।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের আব্দুল মতিন খসরু, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আব্দুল মান্নান, হাছান মাহমুদ, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী, স্বতন্ত্র সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।