ডেস্কঃ
স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের প্রেতাত্মারা ‘এখনো ষড়যন্ত্র’ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী-পরাজিত শক্তি, তাদের বিচার হচ্ছে, রায় আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ অভিশাপ মুক্ত হচ্ছে।
“তারপরও এদের প্রেতাত্মারা, এদের সন্তান-সন্ততি অনেকেই রয়ে গেছে। তারা এখনো বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।”
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে কৃষকলীগ।
‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধ’ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, হত্যা ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে এদেশের মানুষ।”
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্রকারীদের উৎসাহ যোগানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ক্ষমতায় বসানো, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে এবং বিচারের হাত থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে ‘হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের’ রাজনীতিকে ‘মদদ’ দেওয়া হয়েছিল।
পৃথিবীর কোথায় খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়- এ প্রশ্ন করে তিনি বলেন, “তাদেরকে পুরস্কৃত করেছিল জিয়াউর রহমান। আর রাষ্ট্রপতির পদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল জেনারেল এরশাদ। আর খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া ওই খুনিদের বসিয়েছিল বিরোধীদলে খালেদা জিয়া। এভাবেই তারা হত্যা, ষড়যন্ত্র, খুনকে মদদ দিয়েছিল।”
হাই কোর্টের রায়ে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ‘ক্ষমতা দখলকে’ অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের দ্বারা গঠিত যে রাজনৈতিক দল, জিয়াউর রহমানই এসে মার্শাল ল অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতকে এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল।
“আজকে সেই খুনিদেরকে সাথে নিয়ে এদেশের মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া, সেই পরাজিত শক্তির দোসরদের নিয়ে এদেশের মানুষকে আবার খুন, খারাবি, হত্যার পথে নিয়ে যাচ্ছে। বারবার আঘাত আসছে।
“যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করার শক্তি এখন বাংলাদেশের আছে- এটা আমরা প্রমাণ করেছি।”
অনুষ্ঠানে জঙ্গিবাদ নিয়েও কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “নতুন একটা উৎপাত শুরু করেছে, এখন জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস। সেটাও এদেরই সৃষ্টি। কারণ যখনই যে ধরা পড়ছে তাদের গোড়ায় যদি যাওয়া যায়, যারা এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী তাদেরই সৃষ্ট বা তাদেরই দোসর।”
দেশবাসীর আরো সহযোগিতা ও সতর্কতা দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কোন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-খুনিদের স্থান হবে না।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে।
বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের, বঙ্গবন্ধুর বোনের স্বামী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবী ও শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু; বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত ও রিন্টু, পুলিশের বিশেষ শাখার সাব ইন্সপেক্টর সিদ্দিকুর রহমান ও বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিলও নিহত হন সেই রাতে।
শেখ হাসিনা বলেন, “১৫ই অগাস্টের সেই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা কারা? তারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি। জাতির পিতার নেতৃত্বে বাঙালির যে বিজয় হয়েছিল তারা তা মেনে নিতে পারেনি।
“বাবা-মা, ভাইয়ের স্নেহ বাংলার কোটি মানুষের মধ্যে পাচ্ছি সেটা সবসময় উপলব্ধি করি। এদেশের মানুষের জন্য যে ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হয়ে এবং নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেই আমি মাঠে নেমেছি।
“আমরা দুই বোন, বাংলার মানুষের দোয়াই আমাদের চলার পথের পাথেয়।”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “একটা প্রতিজ্ঞা নিয়েই ফিরে এসেছিলাম, যে দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে আবার বাবা, মা, ভাইয়েরা জীবন দিয়েছে, সেই দুঃখি মানুষের মুখে হাসি আমি ফোটাবোই। আজকে বাংলাদেশে সেই হাহাকার নেই। মঙ্গা, নেই, দুর্ভিক্ষ নেই।”
নানা ধরনের বাধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চলার পথ বন্ধুর হবেই। মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে সে পথ সব সময় কণ্টকাকীর্ণ হয়। কিন্তু সে পথ অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আমরা এগিয়ে যাব।”
৭৫ পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির কথাও তুলে ধরেন তিনি।
“আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস; বিজয়ের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। এই ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল। তবে এখন আর বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। এখন মানুষ অনেক সতর্ক।”
কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।