শনিবার, ৬ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » গুলশান হামলা ‘বদলে দেবে’ বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গুলশান হামলা ‘বদলে দেবে’ বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পক্ষকাল ডেস্কঃ নাইন ইলেভেনের ভয়াবহ হামলার পর মার্কিন মননে পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলায় শোকগ্রস্ত বাংলাদেশেও কোনো কিছুই আর আগের মতো থাকবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট সংবাদ পোর্টাল ‘ইউএসনিউজে’ শুক্রবার প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এ মত তুলে ধরেন তিনি।
মাহমুদ আলী বলেন, দেশের ভেতরেই বেড়ে উঠা সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর ধর্মনিরপেক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সহনশীল রাষ্ট্রের লালিত স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশিদের প্রতিজ্ঞা আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ১৯৭৫ সালের এই মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে বেড়ে উঠা সন্ত্রাসের সঙ্গে বাংলাদেশ খুব ভালভাবেই পরিচিত। কারণ, জন্মের মাত্র চার বছর পরই ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
আর ৪১ বছর পর যখন তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী, তখন হলি আর্টিজানের ঘটনার হতাহতদের মা-বাবার প্রতি তার মতো সমবেদনা খুবই কম মানুষই দেখাতে পারবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“একইসঙ্গে ‘গৃহজাত’ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে তার চেয়ে কেউ বেশি সক্ষম বা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেই,” পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন।
গত ১ জুলাই গুলশানের কূটনৈতিক এলাকাবেষ্টিত ওই ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার পর কমান্ডো অভিযানে ছয়জন নিহত হন।
বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা ও হামলাকারীদের ছবি ইন্টারনেটে এলেও সরকার বরাবরই বলছে, তারা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সদস্য।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার পুরো লেখায় ঢাকায় এই হামলা ও বিশ্বের আরও কয়েকটি শহরে হামলার বৈশিষ্ট্যের উপর আলোকপাত করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি সন্ত্রাসীরা আইএসের কালো পতাকা পেছনে রেখে ছবি তুললেও তারা প্রকৃতই আইএস নন।
“এরা স্থানীয় বিদ্রোহী যারা সহিংস হয়ে তাদের এই রাষ্ট্রদ্রোহিতার সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত নাম যোগ করেছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা এটা নিশ্চিত করেছে।”
ঢাকার পাশাপাশি প্যারিস, ব্রাসেলস, ইস্তাম্বুল ও নিস শহরে সহিংস জঙ্গি হামলার ঘটনাও দূরের উগ্রবাদী মতাদর্শে দীক্ষিত অভ্যন্তরীণ সন্তাসীদের কাজ বলে মনে করেন তিনি।
“যুক্তরাষ্ট্রে সান বারনারডিনো ও অরল্যান্ডোতে গুলি করে নির্বিচার হত্যার দুঃখজনক ঘটনার বৈশিষ্ট্যও একই।
“ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কল্যাণে আইএস ও আল কায়েদার মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর অভূতপূর্ব নাগাল রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
“কোনো দেশকে সন্ত্রস্ত করতে চাইলে এখন আর তাদের সেখানে গিয়ে ঘাঁটি গাঁড়তে হয় না। তার বদলে তারা অনলাইনে প্রচারমূলক ভিডিও ছেড়ে ও মেসেজিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে তারা দলে ভেড়ায়।”
“সম্ভবত ঢাকার হামলাকারীরাসহ এসব দলে ভেড়া এসব সদস্যদের কেউ দূরের এসব ডাকে সাড়া দিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি-দেশগুলো যায়।
আর কেউ কেউ দেশ না ছেড়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অশুভকে শুষে নিয়ে নাম কামানোর জন্য বহু দূরের ওইসব জঙ্গি গোষ্ঠীর নামে দেশে সহিংস হামলা চালাচ্ছে বলে লেখায় উল্লেখ করেন তিনি।
“এরাই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ধরনের সন্ত্রাসবাদী। উগ্রবাদের দূরবর্তী ডাক না আসা পর্যন্ত তারা তাদের শিকারদের পাশে পাশেই অবস্থান করে।”
এধরনের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আগে থেকে সতর্ক থাকা এবং নাগরিকদের বেসামরিক অধিকার একসঙ্গে নিশ্চিত করার প্রায় কোনো উপায় নেই মন্তব্য করেন তিনি।
“এটা বিশেষ করে সেই পরিস্থিতিতে আরও সত্য যখন সমাজের সুবিধাভোগী মূলধারার মতো সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কোনো জায়গা থেকে সন্ত্রাসীদের উদ্ভব হয়।
গুলশানের ক্যাফেতে হামলাকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মধ্যবিত্ত ও ভাল পরিবার থেকে আসা মেধাবী ছাত্র ছিলেন।
“একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ডালাসের পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার হত্যাকারী মিকা জনজন, বেটন রোজে তিন পুলিশের হত্যাকারী গেভিন লং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং তারা দেশ ও জনগণকে রক্ষায় শপথও নিয়েছিলেন।
“বাংলাদেশে উগ্রবাদী হামলাকারীদের সবার মধ্যে মিলের জায়গাটা হলো, তারা স্থানীয় সরকারবিরোধী গোষ্ঠীর সদস্য।
“তারা আইএস বা বাংলাদেশের বাইরের উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের দাবি করতে পারে। তবে প্রধানত সামঞ্জস্যতার দাবি।
“হ্যাঁ, তাদের লক্ষ্যও কখনো এক। যেমন নারী ও সংখ্যালঘুর অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও উপাসনার স্বাধীনতার সমর্থক সাংবিধানিক গণতন্ত্রকে তারা সবাই ধ্বংস করতে চাই।
“তবে অন্তত বাংলাদেশে জঙ্গিদের পুরোটাই ‘গৃহজাত’।”
জঙ্গিদের উপর সরকারের সাঁড়াশি অভিযানে আটক ২৩ বছর বয়সী সাইফুল ইসলাম এসবের সত্যতা নিশ্চিত করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সরকারের পদক্ষেপের সরাসরি বিরুদ্ধে এসব হামলা পরিচালিত হচ্ছে।
এসব হামলার পর সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব পদক্ষেপ বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয়, এগুলো যৌক্তিক জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় নেওয়া হচ্ছে।”