বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ‘বীরপ্রতীক ওডারল্যান্ডের মতো বিদেশিরা জঙ্গি দমনেও বাঙালির সঙ্গী’
‘বীরপ্রতীক ওডারল্যান্ডের মতো বিদেশিরা জঙ্গি দমনেও বাঙালির সঙ্গী’
ডেস্কঃ
মুক্তিযুদ্ধের মতো জঙ্গি দমনের যুদ্ধেও বীরপ্রতীক সাইমন ওডারল্যান্ডের মতো বিদেশিরা ‘বাঙালিদের সাথী’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘বীরপ্রতীক ওডারল্যান্ড’ প্রামাণ্যচিত্রের প্রিমিয়ারের উদ্বোধনীতে একথা বলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত একমাত্র বিদেশি ওলন্দাজ-অস্ট্রেলীয় নাগরিক ওডারল্যান্ড স্মরণে মাহমুদুর রহমান বাবু পরিচালিত এ প্রামাণ্যচিত্রটি প্রযোজনা করেন বাংলাদেশি নাগরিক সি আর প্লাসিড এবং জাপানি নাগরিক হরিইকে নাওয়া।
সি আর প্লাসিডের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী প্রামাণ্যচিত্রটির নির্মাতাদের অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এ প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে তারা ইতিহাসকে সামনে এনেছেন, সার্বজনীন সত্যকে সামনে এনেছেন, তাদের প্রতি সত্যপ্রিয় সকলের অভিনন্দন।”
একাত্তরের পাক-হানাদার বাহিনীর মতো সাম্প্রতিক সময়ে হামলাকারী জঙ্গিরাও দেশের ওপর তাদের মনগড়া ব্যবস্থা চাপিয়ে দেশ দখল করতে চায় মন্তব্য করে ইনু বলেন, “কিন্তু পাক-হানাদারদের মতো জঙ্গিরাও হারবে। আর বিশ্ববাসী যেমন মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাশে ছিল, জঙ্গিদমন যুদ্ধেও তেমনই সাথে রয়েছে।”
এসময় পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মতো ইতিহাসের ঘৃণ্য ‘জঙ্গি-সন্ত্রাসী’ তৎপরতার প্রসঙ্গে কথা বলেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
“পঁচাত্তরেও পাক-হানাদারদের মতো বিপথগামীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশ ও জাতির ইতিহাসকে দলিত-মথিত করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।”
১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর হল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডাম শহরে জন্মগ্রহণকারী উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ওডারল্যান্ড ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সক্রিয় একজন সামরিক কমান্ডো অফিসার।
বাটা স্যু কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নেদারল্যান্ডস থেকে ১৯৭০ সালের শেষ দিকে তিনি ঢাকায় আসেন। বাংলাদেশেকে ভালোবেসে ২ নম্বর সেক্টরের গণবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে চতুর্থ সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব বীর প্রতীক প্রদান করে। ওডারল্যান্ডই একমাত্র বিদেশি যিনি এই রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।
১৯৯৮ সালের ৭ মার্চ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে ওডারল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি তিনি। বীর প্রতীক পদকের সম্মানী ১০ হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে দান করেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
ওডারল্যান্ড তার চাকরিস্থল বাংলাদেশের বাটা স্যু কোম্পানি থেকে ১৯৭৮ সালে অবসর নিয়ে তার দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত যান। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থের এক হাসপাতালে ২০০১ সালের ১৮মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে নামের সঙ্গে বীর প্রতীক খেতাবটি লিখতেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রতি অপরিমেয় ভালবাসার জন্য বাঙ্গালি জাতির কাছে তিনি বিশেষভাবে সম্মানিত ও স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ রাজধানী ঢাকার গুলশান এলাকার একটি সড়কের নামকরণ ওডারল্যান্ডের নামে করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী, সাবেক রাষ্ট্রদূত একেএম আব্দুল মোমেন এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবঃ) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বিএফইউজে সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব হোসেন ও সাংবাদিক রাজু আলীম বক্তব্য রাখেন।